ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আনসার আল ইসলামের নব কৌশল

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আনসার আল ইসলামের নব কৌশল

কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আনসার আল ইসলামের সদস্য আসাদুল্লাহ

আসাদ আল মাহমুদ : নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (পূর্বের আনসারুল্লাহ বাংলা টিম)। গ্রেপ্তার এড়াতে বাসা কিংবা মেসে দুজনের বেশি থাকছে না। আর সংগঠনের নতুন সদস্য সংগ্রহে মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রাধান্য দিচ্ছে।

রাজধানীর কলাবাগানে চাঞ্চল্যকর জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যায় অংশ নেওয়া জঙ্গি আসাদুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি )। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, আনসার আল ইসলাম অনলাইনে দাওয়াত দিয়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ করছে। সদস্য হতে চাইলে অনলাইনেই পরীক্ষা নিয়ে ২০১৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত আসাদুল্লাহ ১৫ জনকে আনসার আল ইসলামে রিক্রুট করেছে। টার্গেট ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করার প্রশিক্ষণও তাদের দিয়েছে আসাদুল্লাহ। এটিকে তাদের ভাষায় আসকারি ট্রেনিং বলা হয়।

সূত্র জানায়, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামে রিক্রুট করা হতো দেশে-বিদেশে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা মেধাবী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন কারিকুলামের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে। সদস্য সংগ্রহে মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে সে (আসাদুল্লাহ) জানায়, অধিকাংশ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সঙ্গেই পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ কম থাকে। আবার অনেকে মোবাইল ফোনও ব্যবহার করে না। দলে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দিয়েই দ্রুত সংগঠনের কাজে লাগানো যায়।

আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ছদ্মবেশে বিভিন্ন পেশায় ছড়িয়ে আছে। আসাদুল্লাহ দীর্ঘ দিন মোবাইল ফোনের কভার বিক্রি করেছে। তার সহযোগীদের কেউ মেকানিক কেউ আবার রিকশাচালক, কেউ হকার। সংগঠনে (আনসার আল ইসলামে) যোগ দিলে মাসে তিন হাজার এবং পরিবার নিয়ে বসবাস করলে আট হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া আনসার আল ইসলামের দেশি-বিদেশি বেশ কিছু শুভাকাঙ্খি রয়েছে। সংগঠন থেকে সদস্যদের মধ্যে এখনো মাসে সাড়ে তিন লাখ টাকা বিতরণ করার তথ্য পেয়েছে তারা।

আসাদুল্লাহ ২০১৫ সালে তার বন্ধু শহীদুল্লাহর মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের সদস্য হন। বর্তমানে পলাতক শহীদুল্লাহ যশোর পলিটেকনিকের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়তেন। ধরা পড়ার আগে চার বছর আসাদুল্লাহ পালিয়ে ছিল। ২০১৭ সালে আসাদুল্লাহ তার বন্ধু আনসার আল ইসলামের আরেক সদস্যর  বোনকে বিয়ে করেন। আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রশিক্ষক আসাদুল্লাহ গ্রেপ্তারের সময় টঙ্গী স্টেশন রোডের ভাড়া বাসায় তিন মাস বয়সি সন্তান ও স্ত্রীসহ ছিলেন। তার সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ নেতা জিয়ার যোগাযোগও ছিল। বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার।

আসাদুল্লাহর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মদনপুর এলাকায়। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি উত্তর বাড্ডার সাতারকুলে পুলিশ পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকীর ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় আনসার আল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর কলাবাগানে চাঞ্চল্যকর জুলহাজ-তনয় হত্যা মিশনে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওই অস্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গিরা। ঘটনার সময় পুলিশের ওই অস্ত্র থেকে এক রাউন্ড গুলি করে এবিটির সদস্যরা। অস্ত্রটি পরে আসাদুল্লাহর হেফাজতে ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে আসাদুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টঙ্গি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে ।

সূত্র আরো জানায়, আনসার আল ইসলামের ছয় সদস্যের শুরা টিম । এই টিমের দুজন (শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জোবায়ের ও মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন) ধরা পড়েছে। অন্য চার শুরা সদস্যকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১১ জুন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের পূর্ব কাকালদী এলাকায় লেখক-প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যায় জড়িত ছিল আনসার আল ইসলাম। ওই অপারেশনে প্রথমবারের মতো যৌথভাবে আনসার আল ইসলাম ও পুরনো জেএমবির সদস্যরা অংশ নেয়।

কাউন্টার টের‌রিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপকমিশনার ম‌হিবুল ইসলাম খান বলেন, জঙ্গিদের নতুন নতুন কৌশল থাকলেও পুলিশ পাল্টা কৌশল নিয়ে তাদের প্রতিরোধের সক্ষমতা রাখে। নিবিড় তদারকির কারণে উগ্রপন্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। অনলাইনে মনিটরিংয়ের জন্যও রয়েছে পৃথক টিম।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৯/আসাদ/হাসান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়