ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভাস্কর নভেরা আহমেদ আর নেই

রুহুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৬ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাস্কর নভেরা আহমেদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ভাস্কর্যশিল্পের পথিকৃৎ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে প্যারিসে তিনি মারা যান।

 

বুধবার রাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নভেরা আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়।

 

এ দিকে ভাস্কর নভেরা আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

 

নভেরা আহমেদ ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের ভাস্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত ভাস্কর হামিদুর রাহমানের সঙ্গে জাতীয় শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নে অংশগ্রহণ করছিলেন। পরে দীর্ঘ অন্তরাল জীবনের পর ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি প্যারিসে তার রেট্রোসপেকটিভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে প্যারিসে তার সর্বশেষ প্রদর্শনী হয়েছিল।

 

কর্মসূত্রে তার বাবা সৈয়দ আহমেদ কর্মরত ছিলেন সুন্দরবন অঞ্চলে। তার জন্মও সুন্দরবনে। জন্মের পর তার চাচা আদর করে নাম রাখেন নভেরা। ফার্সি শব্দ ‘নভেরা’র অর্থ নবাগত, নতুন জন্ম। পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের আসকারদিঘির উত্তর পাড়। চাকরিসূত্রে বাবা সৈয়দ আহমেদ পরবর্তী সময়ে কলকাতায় ছিলেন। নভেরার শৈশব কেটেছে কলকাতায়। কলকাতার লরেটা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। স্কুল জীবনেই তিনি ভাস্কর্য গড়তেন।

 

১৯৪৭-এ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত ভাগ হয়ে যাওয়ার পর তারা পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুমিল্লায় চলে আসেন। এ সময় নভেরা কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। বাবার অবসর গ্রহণের পর তারা সবাই আদি নিবাস চট্টগ্রামে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

 

তিনি লন্ডনে যান ১৯৫০ সালে। লন্ডনে তখন তার মেজো বোন শরীফা আলম বিবিসির একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন এবং বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন নাজির আহমেদ। নাজির আহমেদের ছোট ভাই হামিদুর রাহমান তখন ঢাকা আর্ট কলেজে পড়ছেন। কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের একজন তিনি, তার সহপাঠী ছিলেন আমিনুল ইসলাম। হামিদ যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন নাজির আহমেদ তাকে নিয়ে গিয়ে প্যারিসের বোজ আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু হামিদ প্যারিসে থাকতে পারেননি, তিনি লন্ডনে ফিরে ভাইয়ের ফ্ল্যাটেই উঠলেন। আর তখনই নভেরার সঙ্গে পরিচয় হামিদের। লন্ডনে হামিদ সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টে ভর্তি হলেন। এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য আর্টের ওপর প্রাথমিক কিছু জ্ঞানের প্রয়োজন হতো।

 

নভেরা ১৯৫১ সালে ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসের ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের মডেলিং ও স্কাল্পচার কোর্সে ভর্তি হলেন। এখানে ভর্তি হতে শিল্পকলা বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের প্রয়োজন ছিল না। ১৯৫১-৫২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইন প্রথম প্রবর্তিত হলো। এ সম্পর্কে প্রসপেক্টাসে বলা ছিল, ‘শিল্পকলার শিক্ষকদের জন্য এটি একটি স্বীকৃত যোগ্যতা হবে।’ কোর্সটি চার বছরের। প্রথম দুই বছর পর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা, পরবর্তী দুই বছর পর ডিপ্লোমার জন্য ফাইনাল পরীক্ষা। নভেরা ১৯৫৫ সালে কোর্স শেষ করে ডিপ্লোমা পেলেন।

 

১৯৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রাহমান একসঙ্গে ফ্লোরেন্সে যান। প্রথমে তারা শিল্পী আমিনুল ইসলামের আতিথ্য গ্রহণ করেন এবং পরে তিনজন একত্রে একটি স্টুডিওতে উঠে যান। নভেরা মাস দুয়েক শুধু ঘুরে দেখলেন। ডক্টর ফোগেল ভেন্তুরিনো ভেন্তুরির নামে এক ইতালীয় শিল্পীর কাছে নভেরার নাম উল্লেখ করে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। এই শিল্পীর সাহচর্যে নভেরা দোনাতেলোসহ প্রাচীন কয়েকজন শিল্পীর কাজের সঙ্গে পরিচিত হন এবং দুই মাস তার কাছে কাজ শেখেন। ফ্লোরেন্স থেকে ভেনিসে গেলেন নভেরা ও হামিদ এবং সেখান থেকে লন্ডন। ১৯৫৪ সালেই ক্রিসমাসের ছুটিতে নভেরা ও হামিদ প্যারিসে রঁদার মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলেন। ভাস্কর্যের ছাত্রী স্বভাবতই অত্যন্ত অভিভূত হয়েছিলেন রঁদার কাজ দেখে।

 

কাজের স্বীকৃতি : ১৯৬১ সালে ভাস্কর হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি। পরে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে জীবনী উপন্যাস রচিত হয়েছে (নভেরা, হাসনাত আবদুল হাই, ১৯৯৪, গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯৯৫), নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র (নহন্যতে, এন রাশেদ চৌধুরী, ১৯৯৯)। জাদুঘরের একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে ‘ভাস্কর নভেরা আহমেদ হল’।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মে ২০১৫/রুহুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ