ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক

‘রাখাইনে সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করুন’

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রাখাইনে সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করুন’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এই আহ্বান জানানো হয়। ১৫ সদস্যের এই পরিষদের বৈঠকে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে ৩ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠক শেষে পরিষদের এক বিবৃতিতে রাখাইনের ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে সেখানে মানবিক সহায়তাকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।

 


নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি জাতিসংঘে ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূত তেকেদা আলেমু সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযানের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিষদের সদস্যরা এ সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিল পরিষদের স্থায়ী সদস্য ব্রিটেন ও অস্থায়ী সদস্য সুইডেন। ওই বৈঠকের পর জাতিসংঘে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফট বলেন, ‘গত নয় বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতিতে সম্মত হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।’

এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠকের আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমরা ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে।’ তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর এই নিপীড়নকে ‘কার্যত জাতিগত নির্মূল’ বলে মন্তব্য করেন।

রাখাইনে বেসামরিক লোকজনের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণকে ‘উদ্বেগজনক’ এবং ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, ‘আমি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিদের ফেরার অধিকার স্বীকার করে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ‘জাতিগত নির্মূলের’ শিকার হচ্ছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, তখন সেই পরিস্থিতি তুলে ধরতে এর চেয়ে ভালো কোনো শব্দ আপনি কি খুঁজে পাবেন?’

 


তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে যখন আমরা মিলিত হয়েছিলাম সে সময় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। এই সংখ্যা এখন তিনগুণ হয়ে প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার হয়েছে।’

তিনি এ সময় রাখাইনে ‘গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দেওয়া অথবা এমন কোনো আইনি মর্যাদা দেওয়ারও আহ্বান জানান, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি হামলা করেছে এ অভিযোগ করে সেখানে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে রোহিঙ্গারা। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী রোহিঙ্গাদের  নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/এনএ/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়