ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঘন অন্ধকারে লুকানো মানুষেরা || সাইফুল্লাহ সাইফ

সাইফুল্লাহ সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১০ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘন অন্ধকারে লুকানো মানুষেরা || সাইফুল্লাহ সাইফ

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

একসাথে পাঁচ-ছয়টি টর্চ লাইটের আলো এসে দিনের মত করে রাতের ঘন অন্ধকারকে গিলে ফেলেছে। টর্চের কণিক আলোর রেখাগুলো ক্রমেই দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে আলোর প্রক্ষেপণ বাড়িয়ে মিশে যায় বৃক্ষঘেরা বাগানের সীমানার প্রাচীরে। এই এক আলোর খেলায় কতগুলো সতর্ক পা একসাথে নিজেদের অস্তিত্ব অদৃশ্যকরণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ‘যদি একবার ধরা পড়ে!’ তাদের চেতনার হৃৎপিণ্ডের ভারি কম্পনের সাথে বাজে আতঙ্কের রেকর্ডটি। সেই ঘটনাটি ঘটার সম্ভাব্যতা মনে করলে পরবর্তী ঘটনা যে কি হতে পারে সেদিকে কেউই এগোতে চায় না আর। এখন বরং নিজেদের অদৃশ্য করতে হবে। যেভাবে একটি গিরগিটি গাছের রং ধারণ করে নিজেকে গাছের গুঁড়িতে অদৃশ্য করে ফেলে। তাদের মাথায় আর কিছু খেলা করুক না করুক একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়- এই আলোর চালক যারা, তারা পুলিশ। ইতিপূর্বের পুলিশি সে অভিজ্ঞতা ওদের আছে। এতোগুলো হাই পাওয়ার টর্চের আলোর কম্বিনেশন ঘটে যখন মধ্যরাতে কোন পলাতক আসামী ধরতে বিদ্যুৎহীন এই গ্রামে পুলিশের আবির্ভাব হয়।

এমন কিছু একটা যে ঘটতে পারে সেটা আগেই ধারণা করেছিল সবাই। আর এই ধারণা থেকেই নিজেদের বাড়িঘর সবচেয়ে অনিরাপদ ভেবে অবস্থান পাল্টানোর পরিকল্পনা চলে আসে। চলাচলের মূল রাস্তাটাকে পাশ কাটিয়ে এই মাঝ রাত্রিতে কাঁটাগুল্মের ঝোঁপ-ঝাড়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছিল তারা।

তারা সর্বমোট চারজন। একজন শিশু আছে ঘুমন্ত অবস্থায় মায়ের কোলে। একজন তরুণী আছে, বেখেয়ালে হাঁটতে গিয়ে ইতিমধ্যে যে পায়ের তলায় একটি কাঁটা ফুটিয়ে এখন লেংচাচ্ছে। আর আছে একজন পথ নির্দেশক। সবার আগে আগে নির্দেশক লোকমান ঝোঁপ-ঝাড় সরিয়ে হাঁটার জন্য পথ উন্মুক্ত করে দেয়, বাকি দু’জন সেই পথ মেপে সামনে এগোয়।
এভাবেই এগোচ্ছিল খুব সাবধানে পা গুনে গুনে দাবার গুটির মত ছক এঁকে। বিশাল বড় বাগান, এলাকার মানুষ বাগানটিকে ছাড়া বাগান নামে চেনে। বেশিরভাগ সুপারি গাছের সারি। এই অঞ্চলটি সুপারি গাছের জন্য বিখ্যাত। গাছগুলো আকাশছোঁয়া লম্বা, পাতলা লিকলিকে, বাতাসের সাথে দোলে। বাগানের অন্যান্য বৃক্ষরাও বহু বছরের পুরনো ঐতিহ্য ধারণ করে আছে দৈর্ঘ্যপ্রস্থে। রাত্রিতে এই গাছগুলো যেন আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। রাতের হালকা বাতাসে গাছের পাতায় পাতায় বন্ধন ও বিচ্ছেদের কানাঘুষার অবিরাম শব্দ চলতে থাকে। বাগানের ওপারে এক বিস্তৃত ফসলী জমির মাঠ। তারপর মূল রাস্তা। যে রাস্তাটা এই মুহূর্তে বিপদসংকুল ও তিনজোড়া চোখের সম্মিলিত সতর্কের নিশানা।

তারা হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে আয়াতুল কুরছি পড়ছিল। কিন্তু এতোটা আতঙ্কিত ছিল যে তাদের মনে মনে পড়া দোয়া ফিসফিস করে ঠোঁট থেকে পড়ে যাচ্ছিল বাতাসে। আর বাতাসগুলো বাড়তি শক্তি পেয়ে ভারি হয়ে উঠছিল। এভাবে চলতে চলতে একটি মুহূর্ত এসে তাদের সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। এতোগুলো আলোর সমাবেশ যখন রাস্তা থেকে একসাথে এসে বাগানে পড়ল, তখন তারা স্রেফ দাঁড়িয়ে গেল, যেন বনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা পুরনো বহু মূল্যবান ধাতবমূর্তি কয়েক। তারা চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল। হাঁফর উঠছিল একই ছন্দে মৌন আন্দোলনের শ্লোগান নিয়ে। চোখ খুলে তারা আলোটিকে ঘুরে অন্যদিকে চলে যেতে দেখে নিশ্চিন্ত হলো। ফুসফুসে জমানো ভারি বাতাসের চাপটা একটু একটু করে কমে যেতে থাকল।

পথনির্দেশক লোকমান তখন বলল, ‘ভাবি! পুলিশ নাই। চইল্যা গেছে। এবার হাঁটেন।’
লোকমানের ভাবি ফেরদৌসি আরও কিছুক্ষণ সবাইকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলল।
ফেরদৌসির ছোট বোন জমিলা একটু পর বোনকে উদ্দেশ্য করে খুব চাপাস্বরে বলল, ‘পুলিশ কি আমাগো বাড়িতে যায় নাকি আপা?’
ফেরদৌসি একটুখানি কী ভেবে যেন বলল, ‘হুম।’
কিন্তু ঘটনা ঘটলো তার উল্টোটা। বরং জমিলা স্বরগ্রাম ভারি করে বিলাপ রচনা করতে যাচ্ছিল, ‘বাবার কী হবে গো! আমার ভাইয়ের কী হবে?’
ফেরদৌসি চড়া ধমকে তাকে থামিয়ে দেয়। তারা আবার হাঁটতে থাকে। অন্ধকারে। নিশাচর পলাতক সেজে।
তাদের গন্তব্য যতটা কাছে ছিল ততটাই দূরে সরে গেছে। অথচ এতটুকুন মাত্র পথ! ওরা তো ছোটবেলায় প্রায় এক ছুটেই পার হয়ে যেত এই ছাড়া বাগান। বাগানটাই বিপদ। আড়াআড়িভাবে বাগান পাড়ি দিয়ে অন্য পাশের রাস্তা ধরতে হবে। রাস্তায় উঠতে উঠতে কেটে যাবে ঘনঘটার দুশ্চিন্তা। বাগানের ওপারে অন্য গ্রাম, অন্য জনপথ। সেখানে এপারের উত্তাপ না থাকারই কথা। কিন্তু দুশ্চিন্তা তারপরও থাকবে, তখন আর নিজেকে নিয়ে নয়, বাবা মা ও ভাইকে নিয়ে।

ফেরদৌসির বাবা রশিদ শিকদারের জমিতে ওরকাত থাকে জগাই ও সুধারানীর সংসার। তাও অনেককাল আগে থেকে, তখন রশিদ শিকদারের বাবার আমল। তিনি ছিলেন এলাকার ব্যাপক প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় মেম্বার। চারপাশের প্রান্তরে দৃষ্টিদূর পরিব্যাপ্ত জমির অধিকর্তা। তার হাতেপায়ে ধরে জগুর বৃদ্ধ বাবা মিনতি করে এক টুকরো জমি চাইল মাথা গোঁজার জন্য। নদীভাঙ্গা নিন্মশ্রেণির হিন্দু জগুর বংশ। নদীর গর্ভে দিয়ে আসে পূর্বপুরুষের গড়ে তোলা ঘাম ও শ্রমের মাটিটুকু। বছর কয়েক আগে জগাই ও সুধারানী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসালামের অনুসারী হয়। ধর্মের সাথে এখানকার জুম্মা মসজিদের ইমামসাবের পরামর্শে তাদের নতুন পরিচয়ে জগাই হয় জয়নাল ও সুধারানী হয় সুরাইয়া। কিন্তু যে জগাই নাপিতকে সবাই ‘জগু’ বলে বলে অভ্যস্ত সেই জন্মকাল থেকে, তাকে তো হঠাৎ করে কেউ নতুন সম্বোধনে যেতে পারবে না। মানুষের ভাষার অভ্যস্ততার একটা ব্যাপার থেকে যায়। তাছাড়া জয়নালেরও যদি কোনো আপত্তি থাকত তার জগু পরিচয়ে তাহলেও অন্য কথা ছিল! জগু বিবেকহীন হলেও একেবারে আবেগহীন নয়। এই জগুকে সে কি অস্বীকার করতে পারে?

সুধারানীও একইভাবে নিজেকে সুরাইয়া বানাতে পারেনি কোনোদিন।
প্রথম জীবনে সন্তানহীন জগু-সুধা দম্পতির প্রায় বৃদ্ধ কালে এসে দুই সন্তান পারু ও মতির পিঠাপিঠি জন্ম। ওদের বয়সের তুলনায় জগু ও সুধার শরীরটা ভেঙে পড়েছে অত্যাধিক, দেখে মনে হবে মাঝখানে একটা জেনারেশনের গ্যাপ পড়ে গেছে কীভাবে যেন।
জগুর মেয়ে পারু এই ঘটনার কেন্দ্র। তাকে নিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরবে চরিত্র, পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
মেয়েটি গতকাল সকালেও দিব্যি ছিল। অন্ধকার জড়ানো ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসি ঘরদর পরিষ্কার করে রান্নাবান্না করতে বসলো। জগু ও সুধা কাজে যাবার পর উঠোনে জমা মেহগনি পাতার স্তূপ ভেঙ্গে নিয়ে রাখল চুলার পাশে। পুকুর থেকে বাসনকোসন ধুয়ে আসল। স্নান শেষে কলসি করে জল আনতে গেল পাশের বাড়ি। কলতলায় ময়না ভাবির সাথে দেখা। তিনি ছেলেকে গোসল করাচ্ছিলেন।
ময়না ভাবি জিজ্ঞেস করলো, ‘পারু! বুলবুলের কোনো খবর পাইছস? অয় কি আর তরে নিবো না, নাকি!’
পারু বিরক্ত হয় এই প্রশ্নে। প্রতিদিনই উনার মুখে একই সুর। কোনো জবাব না দিয়ে সে কল চাপতে শুরু করলো।
‘কি গো! কতা কস না ক্যান?’
‘কি কমু? আমি জানি নাকি? আপনে গিয়া জিগান হ্যাঁরে!’

পারুর গরম মূর্তি দেখে ময়না ভাবি দমে যায়। তিনি আর কথা বাড়ান না। কিছুক্ষণ ছেলের বাঁদরামি নিয়ে বকবক করে ছেলেকে গোসল করানো শেষে চলে গেলেন।  
পারুর কথার আওয়াজ পেয়ে কলের পাশের ঘর থেকে পারুকে ডেকে ওঠেন মনির মা।
‘পারু! তোর মা’য় বাড়িত আচে? দেহা করতে কইস তো!’
‘মায় রাস্তার কামে গেছে গো বুজি!’
‘হেইলে বিয়ালে আইতে কইস। তর মারে লইয়া মোখন খনকারের বাড়িত যামু।’
কলে জল নিতে আসা শানু মনির মায়ের কথার সুর ধরে বলল, ‘তোমার আবার কী অইল খালা? খনকার বাড়িত যাইবা ক্যান?’
‘কাইল রাইতে ঘরের কোনাত মাডিত তলে তাবিজ পাইছি কয়ডা! এমনে তো বালামসিবত লাইগ্যা রইছে। ঘরের চাইরপাশে ব্যাকে অইল শত্রু।’
পারু ফিরে যাওয়ার সময় মনির মা তাকে আবার মনে করিয়ে দেয়।
‘পারু! তর মারে আইতে কইস কইলাম!’
‘আইচ্ছা। কমু।’   
 
যেহেতু জগু ও সুধা কাজের জন্য বাইরে থাকে, তাই ঘরের কাজগুলো পারুলকেই একা সামলাতে হয় প্রতিদিন। পারুর একমাত্র ভাইটাও হয়েছে ছন্নছাড়া গোছের। সারাদিন কোথায় কোথায় যে ঘুরে বেড়ায়! বেশ কবার জগু তাকে ধরেবেঁধে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়েছিল বংশপরম্পরায় খেয়ে পড়ে থাকার পেশা নাপিতগিরির কাজে। কিন্তু বাপকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিবারই সে উধাও হয়ে যায়। আজকালকার ছেলে কতক্ষণ আর পাহারা দিয়ে রাখা যায়! জগুও আশা ছেড়ে দিয়েছে ছেলের। এই বাইনমাছ টাইপের ছেলেকে যে সে কখনো হাতের মুঠোয় রাখতে পারবে না, সেটা সে টের পেয়েছিল ছেলের বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে।   

বাবা মা কাজে চলে যায়, ভাইটি নাকেমুখে সকালের খাবার খেয়ে ঘরছাড়া হয়। সারাদিন বাড়িতে পারু একা। সময় আটকে থাকে পারুর সামনে, তাই এই আটকে থাকা সময়টাকে সচল রাখার জন্য খুঁজে খুঁজে কাজ বাড়িয়ে নিয়ে লেগে যায়, ব্যস্ত থাকে। কী করবে সে? কতক্ষণ আর একা একা থাকা যায়। একা থাকলেই যে তার মাথায় সব উলটপালট চিন্তা জমাট বাঁধে।

একটি সাইকেল। শ্বশুরবাড়ি। বুলবুল।
পারু কলতলা থেকে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরই প্রতিবেশীদের কানে কানে কথা ভাসে, পারু বিষ খেয়েছে। ঐ যে জগুর মেয়ে পারু! কিছুক্ষণ আগেই না কথা হল!
যাদের সাথে পারুর কথার রেষ এখনো কাটেনি তারা খবরটি শোনা মাত্র প্রতিক্রিয়ায় জানাল, ‘আরে! এইসব গুজব! মিছা কতা! আমি এটটু আগেই তো পারুলের লগে কতা কইলাম কলতলায়!’
আরেকজন বলল, ‘হ! কয়দিন আগে ব্যাকে কইল মামুদার মা’র পোলা ফজইল্যা শউরে কারেন্টের শট খাইয়া মরছে! কই হেই পোলা তো ঠিকই ফিররা আইল! মাইনসের কাম কাইজ নাই কি করবো, দুইদিন পরপর সুর উঠাইয়া পাড়া গরম রাহে!’   
তারা যখন এই কথোপকথন করছিল, তখন পারুর বিষ খাওয়ার সংবাদ নিয়ে আসা লোকটি বিভ্রান্ত হয়ে যায়। এবং মনে মনে সেও স্বীকার করে নেয়, এইটা সত্যি একটা গুজব।
কিন্তু কথাটি ছড়াতে ছড়াতে একটা সময় পর কেউ আর বলতে পারল না, পারুর বিষ খাওয়াটি একটি গুজব। তারা রাত্রিতেই নিশ্চিত হলো, দুপুরের সেই জলজ্যান্ত মানুষটি এখন মরে পড়ে আছে ভোলা সদর উপজেলা হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে! প্রক্রিয়াধীন পোস্টমর্টেমে।

পুলিশের ইনস্পেকশন শুরু হয়ে গেছে। মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে পুলিশ হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে চলছে ঘটনার ইতিউতি। ফেরদৌসির পরিবার এই মৃত্যুর সাথে জড়িত সম্ভাব্য তালিকাভুক্ত আসামী। তাদের নামে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ধর্ষণের। কিন্তু মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা।
এই ধর্ষণ মামলার আসামী তালিকায় প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ফেরদৌসির পরিবারের পাঁচ সদস্য। ফেরদৌসি, তার বাবা রশিদ শিকদার, মা ময়মুনা খাতুন, বোন জমিলা ও ভাই মাসুদ জামসেদ। মাসুদ জামসেদ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী, আর অন্যরা সহযোগিতাকারী ও উৎসাহদাতা- এই রূপরেখায় একটা কেসের পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। আবুল কাশিমের সহযোগিতায় এলাকার মান্যবর ব্যক্তিদের ডেকে নিয়ে এসে জগুর ছেলে মতি ঘটনার কিছু নমুনাও দেখিয়েছে। তারাও সায় দিল আবুল কাশিমের সাথে। মুর্খ্যসুর্খ্য মানুষ জগু। তাকে সহযোগিতা করছে আবুল কাশিম। আবুল কাশিমের স্বার্থ রশিদ শিকদারের সাথে জমিজমা নিয়ে তার পুরনো মোকদ্দমা, যেটা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আবুল কাশিম মতিকে আশ্বাস দিয়েছে, অন্তত ক্ষতিপূরণ হলেও একটা মোটা অঙ্কের টাকা সে রশিদ শিকদারের কাছে থেকে উদ্ধার করে দেবে।

গতবছর ঠিক এমন দিনে পারুর বিয়ে হয়েছিল আবুগঞ্জ বাজারের কাঁচামালের দোকানদার বুলবুলের সাথে। বিয়ের পাওনা দেনার চুক্তিতে কথা ছিল বুলবুলের ব্যবসায় কিছু পুঁজি দিয়ে ব্যবসাটা একটু জমিয়ে দেবে জগু আর যাতায়াতের সুবিধার জন্য দেবে একটা ফোনিক্স সাইকেল। টাকাটা কোনোরকমে ধারদেনা করে বুলবুলের হাতে তুলে দেয়া গেল বিয়ের সময়, বাকি রইল সাইকেল। বিয়ের দুইমাস পর শ্বশুর বাড়ি থেকে পারু প্রথমবারের মত বেড়াতে আসে বাবার বাড়ি। বুলবুলই তাকে দিয়ে যায়। কথা ছিল সপ্তাহখানেক পর সে এসে পুনরায় নিয়ে যাবে পারুলকে। সপ্তাহ গিয়ে মাস চলে গেল- বুলবুলের আর আসার নাম নেই! এক মাস অপেক্ষার পর জগু খবর নিতে গিয়ে জানতে পারে, বুলবুল লোকজনের কাছে প্রচার করে বেড়াচ্ছে, সাইকেল না পেলে সে কোনোভাবেই পারুকে আর ঘরে তুলবে না। সাইকেল ও পারু একসাথে ঘরে আসবে। নইলে আরেকটা বিয়ে করবে সে। কত মানুষ তার কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চায়! এমন এক জোয়ানের কি আর বউ পেতে সমস্যা হবে?

বুলবুলের এই কথা শোনার পর থেকে পারুর দিকে আর তাকানো যায় না। চিন্তায় চিন্তায় দুইদিনেই চোখেমুখে কালি পড়ে গেছে। মেয়েটার কষ্ট সহ্য হয় না সুধার। দিনভর একা একা পুকুর ঘাটে আনমনে বসে থাকে পারু। কোনো কথা নেই, কাজ নেই। কিছুতেই যেন কিছু আগ্রহ নেই। পারুর এমন অবস্থা সুধারানীকে নাড়া দেয়, তাকে বিধ্বস্ত করে।
সুধা পারুকে ডেকে বলল, ‘মাডি কাডার বিল পামু সামনে। তোর আর চিন্তা করন লাগবো না পারু। বুলবুলরে সাইকল কিন্না দেওনের ব্যবস্থা করুম আমি।’
পারু বলল, ‘কবে পাইবা ট্যাকা?’
‘সামনের মাসেই বিলের ট্যাকা পামু। মতিরে দিয়া বুলবুলেরে খবর দিমু। তর বাপেসহ গিয়া সাইকল কিন্না দিবো।’
সুধার কথা শুনে পারু যেন এতদিনের স্রোতের মাঝে কূল ফিরে পায়। আবার সেই ছলছলে হাসি ফোটে তার চেহারায়। মেয়ের এই হাসি কতদিন দেখে না সুধা!  
সুধা প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর থেকে প্রায়ই পারু মায়ের কাছে মাটিকাটা বিল পাওয়ার খবরাখবর জানতে চায়। উত্তর দিতে গেলে সুধার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, জলতৃষ্ণা জাগে।

মেয়ের বিয়ে দিয়ে জগু ও সুধার হয়েছে সর্বহারা অবস্থা। এমনিতে জগুর অভাবের সংসারে দিন এনে দিনে ফুরানোর নিয়ম। জগুর একার জীবিকায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে সুধাও রাস্তায় মাটি কাটার কাজ নেয়। দুইতিন মাসের একটা বিল আটকে আছে সুধার। চারপাশে এতো এতো দেনার চাপ যে প্রতিদিনই কোনো না কোনো পাওনাদার এসে দাঁড়ায় ঘরের উঠোনে। এটা ওটা নিয়ে যাওয়ার হুমকি ধামকি দেয়। সুধা তাদের বিদায় করে মাটি কাটার বকেয়া বিলটি দেখিয়ে।
পাওনাদারদের একজন রশিদ শিকদার। পারুর বিয়ের সময় জগু রশিদ শিকদারের পায়ে পড়ে টাকাটা ধার নেয়। রশিদ শিকদার জানতেন জগুর লেনদেনের হাত সুবিধার না। তারপরও জগুর মেয়ের বিয়ের মত একটা অনুভূতিকাতর বিষয় বলে তিনি টাকাটা দিতে রাজি হলেন। দুই মাসের মধ্যেই জগু টাকাটা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে। কিন্তু যথারীতি সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। জগুর অসংখ্য পাওনাদারদের কাতারে রশিদ শিকদারও তালিকাভুক্ত হয়ে যান। বেশ কবার জগু কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি। রশিদ শিকদার এই টাকার আশা এক পর্যায়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু তার বড় মেয়ে ফেরদৌসি শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি বেড়াতে আসে এরই মধ্যে। সে বাবার পাওনা টাকা নিয়ে জগুর টালবাহানার কথা শুনে ক্ষেপে যায়। ছোটভাই মাসুদ জামসেদকে নিয়ে জগুর বাড়িতে উপস্থিত হয়। জগুর ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রপ করে নিয়ে আসতে গেলে সুধা কথা দেয়, পরদিনই টাকাটা উঠিয়ে ফেরদৌসির হাতে দেবে।

ফেরদৌসিকে দেয়া মায়ের এই কথাটি যেন বাসা বেঁধে যায় পারুর মস্তিষ্কে। ক্ষণে ক্ষণে এসে কামড়ে যায় তাকে। মাকে কিছু বলার সাহস পায় না পারু। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে পারু মায়ের কাছে যায়।
‘মা, তুমি কি ট্যাকাডা অগোরে দিবা?
‘কাগোরে?’ সুধার গলার বিরক্তি ঝাঁজ। সে যেন বুঝতেই পারেনি পারু কি কথা বলছে।
‘রশিদ শিকদাররে! তুমি না কইলা মাডি কাডার বিল পাইলে বুলবুলরে দিবা?’
এবার আর সুধা সামলাতে পারল না নিজেকে।
‘হ! কইসি। তুই দেহস না অবস্থা? আবার জিগাস। আমার আইসে মরণ!’
এক কথা থেকে আরেক কথা। আগামীকালের সম্ভাব্য পাওনা টাকাটা নিয়ে রাতে মা ও মেয়ের মাঝে একচোট ছোটখাটো ঝগড়া হয়ে যায়।  
পরদিন সুধা টাকা উঠাতে যায় শহরে। তার টাকা তুলতে যাওয়ার খবর জেনে যায় পাওনাদাররা। এবং তারা গিয়ে দাঁড়ায় বড় রাস্তার মাথায়।
সুধা ফেরার পথে যার যেটুকু পাওনা রাস্তার মোড় থেকেই জোর করে তুলে নেয় সুদে-আসলে।
বাড়ির পথে আসতে আসতে সুধার হাত শূন্য। কূলকিনারা হারানো অবস্থা তার। একে তো রশিদ শিকদারের টাকা দিতে হবে আজই, তার উপর পারুর মুখোমুখি হওয়া।
বাড়ি ফিরলেই সবার আগে পারু এসে সামনে দাঁড়াবে, ‘মা! টাকা পাইছো? বাবারে আইজকাই শহরে পাঠাও সাইকেল আনতে। তোমার জামাইরে খবর দেও। সাইকেল নিজেই দেইখ্যা কিনুক। পরে আবার ভেজাল করবো। হে বড় ভেজাইল্যা লোক।’
কী জবাব দেবে সুধা?
শহর থেকে ফিরে বাড়ি না এসে সুধা চলে যায় পাশের গ্রামে বোনের বাড়ি। ভেবেছিল দুই একদিন পর বাড়ি এলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রশিদ শিকদারের হাতে পায়ে ধরে কিছু একটা বলে সামলে নেবে। ততক্ষণে পারুরও রাগ পড়ে যাবে।

সুধার টাকা তোলার খবর চলে যায় শিকদারের বাড়ি। যারা পাওনা টাকা পেয়েছে তারাই জানায় এই খবর। পাওনাদারেরা যে যার মত করে টাকা নিয়ে গেছে, এবারও রশিদ শিকদার তার টাকাটা পাচ্ছে না।
রশিদ শিকদারের ছেলে মাসুদ জামসেদ আর নিজেকে সংযত করতে পারলো না। এমনিতে সে বড় শান্তশিষ্ট ছেলে। কিন্তু একবার মাথা গরম হলে তুলকালাম অবস্থা।  
‘শালার বুড়ি! এইবারও দিলো না?’
বুড়িকে একটা উচিত শিক্ষা দেবে বলে মাসুদ জামসেদ ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে ছুটে যায় জগুর বাড়ির দিকে। টাকা সে উশুল করেই ছাড়বে।
পারু তখন কলতলা থেকে জল নিয়ে ঘরে ফিরেছে।
মাসুদ ঘরে ঢুকে হাড়ি পাতিল ধরতে গেলে বাঁধা দেয় পারু। মাসুদ প্রতিরোধ করে। টাকা সে উশুল করবেই। তাদের শোধ প্রতিশোধ চলতে থাকে...
 
জগুর মেয়ে পারু বিষ খেয়েছে! খবরটি শুনে প্রথমেই এগিয়ে আসেন রশিদ শিকদার। তিনি লোকজন ডেকে নিয়ে অসুস্থ পারুকে হাতপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে পথেই পারুর মৃত্যু হয়। লাশ শহরে পৌঁছালে আত্মহত্যায় মৃত্যুর খবর চলে যায় পুলিশের কাছে। তারা তদন্তের জন্য থানা সদর থেকে লাশ পাঠিয়ে দেয় জেলা হাসপাতাল মর্গে।
পারুর মৃত্যুর পরপরই প্রথমে অভিযোগটি তোলে জগুর ছেলে মতি।
‘আমার বইন এমনি এমনি বিষ খায় নাই। শিকদারের পোলা বইনের ইজ্জত নিছে। আমার বইন বিষ খাইছে হেই অপমানে। আমরা এই মিত্যুর বিচার চাই। মামলা দিমু শিকদারের পোলার নামে।’
মতির ছেলের অভিযোগ শুনে নড়েচড়ে উঠেন রশিদ শিকদার।
‘একি বলছে জগুর ছেলে?’
মাসুদকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ শুনে রশিদ শিকদার হতভম্ব হয়ে যান। কোথাকার ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে!
মাসুদ জগুর বাড়িতে জগু-সুধা কাউকে না পেয়ে টাকা উশুল করতে ওদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য ঘরে ঢোকে। তখন কথা কাটাকাটি হয় পারুলের সাথে। পারুল কোনোভাবেই কিছু নিয়ে যেতে দেবে না। মাসুদও অনড়। একপর্যায়ে সে পারুলের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে নিয়ে আসে এইসব। রশিদ শিকদার অবশ্য এর জন্য ছেলেকে কড়া শাসন করে দিয়েছিলেন সাথে সাথে।
‘কিন্তু এই সামান্য ঘটনাটিকে কোথায় নিয়ে গেল ওরা! এতো বড় সাহস ওরা পায় কই?’

রশিদ শিকদারের প্রশ্নের উত্তর পেতে সময় লাগে না। ইতিমধ্যে প্রচার হয়ে যায় এই ঘটনার প্ররোচনাকারী তার চিরশত্রু আবুল কাশিমের সংশ্লিষ্টতা।  
অথচ এই জগুর জন্য তিনি কিনা করেছেন! তাদের জমিতে বছরের পর বছর ঘর তুলে থাকে জগু। বিপদ আপদে সবার আগে ছুটে আসেন তিনি। জগুর মেয়ের বিয়ের সময় টাকা ধার দিলেন তিনি। এই জগুই তার শত্রু কাশিমের কূটচক্রে পড়ে তার ছেলের নামে এমন জঘন্য অভিযোগ তুলতে পারলো?  
এই কেস যদি একবার দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে শিকদারদের মান সম্মান একেবারে মাটিতে গিয়ে ঠেকবে। উপায় না দেখে তিনি গিয়ে ধরলেন এলাকার চেয়ারম্যান মোজাম্মেল পাটোয়ারিকে। যেভাবেই হোক এই অভিযোগ ধামাচাপা দিতে হবে। সম্পর্কসূত্রে মোজাম্মেল পাটোয়ারি রশিদ শিকদারের স্ত্রীর বড়ভাই।
থানা পুলিশ মোজাম্মেল সামলে নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন রশিদ শিকদারকে। সতর্ক করে দিলেন, তিনি যেন কিছুদিন অভিযোগকারীদের একটু দূরে সরিয়ে রাখেন। বলা তো যায় না, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে পড়ে! আর তাছাড়া পুলিশ একটু এদিকসেদিক করবেই। যেখান থেকে পারবে, সুবিধা নেবে।  

সেই থেকেই তাদের বাড়তি সতর্কতা। ছেলে মেয়েদের রাতের অন্ধকারে পাঠিয়ে দিলেন নিরাপদে। বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে জমিলাকে নিয়ে রশিদ শিকদারের বড় দুশ্চিন্তা। তাই তাকে বড় মেয়ের সাথে রাতের অন্ধকারে পাঠালেন তার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের কাছে।
সে রাতেই তদন্তের জন্য পুলিশ আসে। অবশ্য তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। পুলিশ সামান্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ফিরে যায়।

চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলেন পরদিন। এলাকার জনসাধারণের মতামত নিলেন। এই সম্ভাব্য মামলাটি নিয়ে এলাকাবাসীর রায় গড়পড়তা রশিদ শিকদারের পক্ষে। তাদের দাবি, মাসুদ জামশেদকে নিয়ে যে অভিযোগটা উঠেছে সেটা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। এ গ্রামের কৃষক মজুরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জন্মলগ্ন থেকে বেড়ে ওঠা মাসুদের। এমন কিছু তাকে দিয়ে সম্ভব না। এঁরা সবাই জানে, রশিদ শিকদারের ছেলে মাসুদ এই গ্রামের সবচেয়ে কুটিল ও ক্ষতিকর লোক আবুল কাশিম ও জগুর উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলের ষড়যন্ত্রের শিকার।

চেয়ারম্যান ডেকে পাঠালেন জগু ও সুধাকে। তাদের অভিযোগ শুনলেন। তারা মামলাটি করলে এর ফলাফল কোন দিকে যাবে তা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলেন।
এই মামলায় বরং জগু ও সুধারই ফেসে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ দেশে বাল্যবিবাহের আইন বড় শক্ত। এই আইনের প্যাচে পড়লে আর রক্ষা নেই তাদের। কে না জানে তাদের মেয়ের যে বাল্যবিবাহ হয়েছিল! বিয়ের সময় পারুর বয়স কত ছিল? এই চৌদ্দ কি পনেরো!
আরেকটা জোর অভিযোগ পাওয়া গেছে সুধাকে নিয়ে। মৃত্যুর আগের রাতে পারুর সাথে তুমুল ঝগড়া হয় সুধার। সুধা সাফ জানিয়ে দেয়, বুলবুলকে তারা কিচ্ছু দিতে পারবে না। এই ক্ষোভ থেকেই নাকি পরদিন পারু মায়ের সাথে রাগ করে বিষ খেয়েছে!

চেয়ারম্যানের নির্দেশে ধর্ষণের কেসটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায়নি। পুলিশি তৎপরতাও বন্ধ হয়ে গেছে।
পারুর মৃত্যু এখন শুধু একটি ঘটে যাওয়া ঘটনা। এই ঘটনার বিবরণটি আসবে এভাবে, ‘কিছুদিন আগে একটা মৃত্যু ঘটেছিল, যেটা তুমুল বিতর্কের পর এখন হাওয়ায় মিলে গেছে। সেই মৃত্যুর পর আরও কত ঘটনা যে ঘটে গেছে, তার কি কোনো হিসেব আছে? মানুষের এতো সময় ও স্মৃতি আছে নাকি যে সবকটা ঘটনাকে নিয়ে একই সাথে পড়ে থাকতে হবে? একটা ঘটনা ঘটবে তাকে মুছে দিতে আবার দ্বিতীয় ঘটনার আবির্ভাব হবে। এভাবেই তো চলতে থাকবে ঘটনাচক্র।’  

এতো চড়াইউত্রাই পেড়িয়ে পারুর পোস্টমর্টেম করা লাশটিও আর পৌঁছায়নি সুধাদের হাতে। বেশ কিছুদিন লাশের পেছনে থানা থেকে হাসপাতাল দৌড়ঝাঁপ করে এক পর্যায়ে তারা থেমে যায়।
পারুর মৃত্যু বিষয়ক উত্তাপ থেমে যাওয়ার পর জগুদের উচ্ছেদ করা হয় রশিদ শিকদারের জায়গা থেকে। ওরা এ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নেয়।
আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল কিছুদিন পর, যার সাথে হয়ত আগের ঘটনার কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। নতুন একটি হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় মাতম হয়ে গেছে। একরাতে বাড়ি ফিরতে পথে খুন হয় মাসুদ জামশেদ। মাসুদ জামশেদ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হয় জগুর ছেলে মতি। যদিও কিছু মানুষ ধারণা করছে, মতি নয় মাসুদকে খুন করেছে রশিদ শিকদারের পুরোনো শত্রুচক্র। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য মেলেনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুলাই ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়