ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোবট গবেষণায় নতুন পথ দেখাল পিঁপড়া!

ফাতিমা রুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোবট গবেষণায় নতুন পথ দেখাল পিঁপড়া!

প্রতীকী ছবি

ফাতিমা রুনা : পিঁপড়া অত্যন্ত পরিচিত এক প্রাণী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। প্রায়ই এই প্রাণীটির মুখমুখি হই আমরা। বাসাবাড়ি, অফিস, গাড়ি, টেবিল কিংবা মেঝেতে সর্বত্রই এদের দেখা মেলে। পৃথিবীতে সর্বাধিক সংখ্যায় প্রাণীর বললে এই পিঁপড়ের নাম সবার ওপরে।

পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা দুনিয়ায় যেকোনো সময় মোট পোকা-মাকড়ের সংখ্যা প্রায় ১০০০০০০০০০০০। বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, এর মধ্যে এক শতাংশ পিঁপড়ে। অর্থাৎ বিশ্বে জীবিত পিঁপড়ার সংখ্যা অন্তত ১০০০০০০০০০। এরা সামাজিক প্রাণী দলবল ছাড়া চলতে পারেনা। তাই সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে লাইন ধরে চলে চলাচল করে।

একটা সাধারণ পিঁপড়াকে নিজের শরীরের তুলনায় বহুগুণ ভারি জিনিস তুলতে দেখে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররাও অবাক হয়ে যান।

বিপুল সংখ্যার এই প্রাণীদের নিয়ে সারাক্ষণ গবেষণা চলমান। সম্প্রতি এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, আমাদের ধারণার থেকেও পিঁপড়ার দিক নির্ণয় ক্ষমতা অত্যন্ত চমকপ্রদ। পিঁপড়া কম্পাসের পথ অনুসরণ করতে পারে যেকোনো উপায়েই, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বজায় রেখে চলতে পারে। এদের এই চলাকে তুলনা করা যেতে পারে- নিজের বাড়ি পৌঁছাতে আপনি পায়ে হেটে, ঘুর পথে বা ভিন্ন পথ অনুসরণ করে হলেও ঠিকই যেমন উপস্থিত হয়ে যান নিজ বাড়িতে, এরাও সেভাবে লক্ষ্যে অবচল থাকে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, পিঁপড়া আকাশে সূর্যের অবস্থান দেখে সঠিক পথ নির্ধারণ করে। এরা চারপাশের বস্তু অবলোকন করে সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে নিজ নিজ পথের লক্ষ্য ঠিক করে থাকে।  

এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির ড. এন্থনি অয়েস্টারচ বলেন, ‘আমাদের মূল আবিষ্কার হল- পিঁপড়া চলার দিককে আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করে নেয় তাদের দেহের অরিয়েন্টেশন অনুযায়ী।’

পিঁপড়া পোকামাকড়ের দুনিয়ায় নিজেদেরকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে তাদের এই দিক নির্ণয় ক্ষমতা দিয়ে।

বড় আকারের কলোনিতে বাস করে বলে এদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সংগ্রহ ও বহন করে নিয়ে যেতে হয় বাসায়। ফলে কখনো কখনো এদেরকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু কোনো ভুলভ্রান্তি না করেই পৌঁছে যায় গন্তব্যে। গবেষকরা বলেন যে, ছোট সাইজের হলেও পিঁপড়ের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মরুভূমির পিঁপড়ার ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের গবেষকরা পিঁপড়ার পথ চলার দিকনিদের্শনার ক্ষমতার এসব তথ্য উদঘাটন করেছেন।

পরীক্ষায় দেখা গেছে যে পিঁপড়া তাদের পথের লক্ষ ঠিক রাখে সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে। পিঁপড়ার চারপাশে আয়নার ব্যবহার করে সূর্যের ভুল অবস্থান দেয়া হলে এরা ভুল পথে চলতে শুরু করে।

যদি কখনো এরা পেছনে চলতে শুরু করে, খাবার বাসার বাইরে টেনে বের করে, এবং সূর্যের অবস্থান দেখে মিলিত তথ্যের ওপর পথ ঠিক করে নেয়। পরবর্তীতে থেমে, খাবার ফেলে দিয়ে দিক ঠিক করে আবারও তা পিঠে নিয়ে চলতে শুরু করে।

এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির আরেকজন গবেষক বারবারা ওয়েব বলেন, নিজে নিজে চলতে পারে এমন গাড়ির (সেলফ ড্রাইভিং কার) সঙ্গে পিঁপড়ের এই পথ নির্দেশ ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

কারেন্ট জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, পিঁপড়ার রয়েছে তুলনামূলক ক্ষুদ্র আকৃতির মস্তিষ্ক যা আলপিনের মাথার থেকেও ছোট, তারপরেও এরা সফলভাবে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করে এগিয়ে চলে।

এদের আচরণ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ শেষে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী নতুন কম্পিউটার অ্যালগরিদম তৈরির ক্ষেত্রে, যা রোবটে ব্যবহার করা হবে। পিঁপড়ার মস্তিষ্কের নিউট্রাল সার্কিট মডেল তৈরিতে গবেষকরা সক্ষম হয়েছেন। আশা করা হচ্ছে, রোবটে তা বাস্তবায়ন করা গেলে রোবট প্রাকৃতিকভাবে বনের ভেতরেও চালানো সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়