ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাজশাহীতে অনুমোদনহীন হরমোন প্রতিষেধক!

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজশাহীতে অনুমোদনহীন হরমোন প্রতিষেধক!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীতে অনুমোদনহীন একটি হরমোন প্রতিষেধকের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। নারীদের গর্ভে সন্তান ধারণের চিকিৎসায় এই প্রতিষেধকটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন একজন নারী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। আবার প্রতিষেধকটির একমাত্র বিক্রেতাও তিনি।

অভিযোগকারীরা জানান, রাজশাহী নগরীর কোনো ফার্মেসিতে এ ওষুধ পাওয়া যায় না। ফলে তার কাছ থেকেই চড়ামূল্যে রোগিদের প্রতিষেধকটি কিনতে হয়। তাদের ভাষ্য, প্রতিষেধকটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। যাদের ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে তারা এই প্রতিষেধক শরীরে নেওয়ার ফলে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত একটি হসপিটালে এই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বার। তিনি সেখান থেকে রোগিদের সেবায় চিকিৎসাপত্র দিয়ে থাকেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত প্রতিষেধকটির নাম ‘ইনজেকশন হিউমগ’ (রহল. ঐঁসড়ম (১৫০ ও.ট)। এই প্রতিষেধকের বাজারজাতকারী ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে এর কোনো অনুমোদন নেই।

জানা গেছে, খোদ ভারতেই প্রতিষেধকটি নিষিদ্ধ। এই প্রতিষেধকটি নারীদের গর্ভে সন্তান ধারণে হরমোন বৃদ্ধির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নারীদের মাসিকের ৩য়, ৫ম, ৭ম, ৯ম ও ১১তম দিনে প্রতিষেধকটি ব্যবহার করতে হয়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রোগিরা জানিয়েছেন, প্রতিষেধকটি ব্যবহারে ফলে ত্বক খসখসে হয়ে যায়, শরীরে ব্রণ বের হয়, চোখ লাল হয়, মেজাজ খিটখটে হয়ে যায়, মুখম-লে দাঁড়িগোফ বের হয় ও অস্বাভাবিক যৌনাকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া প্রতিষেধকটি শরীরে নেওয়ার পর শরীরের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মনে হয়, অস্বাভাবিক কোনো জগতে চলে গেছি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে প্রতিষেধকটির অনুমোদন নেই স্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিষেধকটির গুণাগুণ ও কার্যকারিতার কথা বিবেচনা করে কিছুদিন ব্যবহার করেছি। এতে আশানুরূপ ফল পেয়েছি। অনেক নারীর সন্তান হয়েছে এই প্রতিষেধকটি ব্যবহারের ফলে। এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই। তবে বাংলাদেশে বৈধতা না থাকায় বর্তমানে প্রতিষেধকটি ব্যবহার করছি না।’

বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন? এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকার একটি পার্টি এসে দিয়ে যেত। তারা বৈধতা না থাকলেও সব নিয়ম মেনেই নিয়ে আসতেন। তারা প্রতিষেধকটির লাইসেন্স নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’

নিজে বিক্রি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন দেশে-বিদেশে বেশিরভাগ ডাক্তার নিজেদের সেন্টার থেকে ওষুধ নিতে বলেন। কারণ এতে ওষুধের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা ভালো থাকে। এই প্রতিষেধকটি ৬ ঘণ্টার বেশি ফ্রিজের বাইরে রাখলে তার গুণাগুণ ও কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফার্মেসিতেও ফ্রিজ আছে কিন্তু তাদের অনেক ওষুধ। ফলে আলাদাভাবে এই প্রতিষেধকটির প্রতি গুরুত্ব দিতে পারেন না।’

চড়ামূল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় রুপিতে এই প্রতিষেধকটির একটি ডোজের মূল্য ১৮৪৬ রূপি। অথচ আমি এই প্রতিষেধকটির একটি ডোজ ১৮৫০ টাকায় বিক্রি করতাম।’

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. ফেরদৌস নিলুফার বলেন, ‘গ্রুপ না দেখলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সঠিক বলা সম্ভব না। তবে যেকোনো ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সেটা কম বা বেশি।’

চিকিৎসক নিজে ওষুধ বিক্রয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো ঠিক না। ওষুধ তো ফার্মেসির মাধ্যমেই বিক্রয় করতে হয়।’

 

কম দামে ওষুধ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা যে কীভাবে পারেন! তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।’

 

 



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১২ ডিসেম্বর ২০১৬/তানজিমুল হক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়