ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিবির ঠেকাতে বন্ধ রাখা হয় আবাসিক হল!

মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১০ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিবির ঠেকাতে বন্ধ রাখা হয় আবাসিক হল!

রাবি প্রতিনিধি : আতঙ্ক, শঙ্কা আর ভয়ের আরেক নাম শিবির। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রকাশ্যে কার্যক্রম না থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও তার পার্শবর্তী এলাকাগুলোতে শক্ত ঘাঁটি রয়েছে এদের।

 

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করতে চাইলেও কোনো পদ্ধতি কাজে আসেনি। তবে শিবির ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের নিরপত্তার দোহাই দিয়ে যেকোনো ছুটিতে হল বন্ধের আদেশ জারি করে রাবি প্রশাসন। এতে করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহানো ব্যতিত অন্য কোনো কাজে আসে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস ১৯৯২ সালে দখল করে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ২০১০ সালে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেনের নিহতের ঘটনায় দীর্ঘদিনের আধিপত্য হারায় শিবির। অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০০৯ সালের মার্চে তৎকালীন শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী নিহত হওয়ার পর রাবির আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

 

এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের নিরপত্তার দোহাই দিয়ে প্রতিবছর শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন ও দুই ঈদের ছুটিতে রাবি প্রশাসন আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ক্যাম্পাস খোলা থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে শিবির ক্যাডারদের হামলায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনা বন্ধ করতে পারেনি রাবি প্রশাসন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে শীতকালীন ছুটি উপলক্ষে ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে রাবি প্রশাসন। এ সময় প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী গত ২ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ২১ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখা হয়।

 

সর্বশেষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে গত ৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ছুটিতে আগামীকাল শনিবার থেকে আগামী ২২ জুলাই ২০১৫ পর্যন্ত আবাসিক হলসমূহ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এদিন দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যেও হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলেও জানা গেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শামীম রেজা বলেন, আগামীকাল (শনিবার) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আমাদের পরীক্ষা রয়েছে। এতে করে আমাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণে-অকারণে হল ছুটি না হলে ভালোভাবে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়া যেত।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, ‘যেকোনো ছুটি উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখা সমীচীন নয়। ছুটিতে আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রাখা যদি প্রশাসনের কাছে যৌক্তিক মনে হয় তাহলে শিক্ষকদের কোয়ার্টার খোলা রাখেন কোন যুক্তিতে? মুলত নিরপত্তার নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ হলসমূহ বন্ধ রাখার পিছনে প্রাধ্যক্ষদের জোরালো ভূমিকা রয়েছে বলেও জানান তারা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছর জুড়েই দায়িত্ব অবহেলা করে বিভিন্ন ভাবে কাজে ফাঁকি দিয়ে আসছেন। হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত হলে থাকেন না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হলে অবস্থানের নিয়ম থাকলেও তারা কেউ সঠিক সময়ে আসেন না কিংবা ত্যাগ করেন না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ অবগত হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেন না। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই হল বন্ধ করা হয় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

 

বিষয়টি অস্বীকার করে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব বলেন, ক্লাশ বন্ধ হওয়ার পর হলগুলোতে খুবই কম শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। এতো অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া ছুটির মধ্যে যেসব শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করেন তারা কোনো না কোনোভাাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এজন্য যেকোনো ধরনের ঝামেলা এড়াতে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট রয়েছে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে হল বন্ধ করা হয় কী না আমার জানা নেই। তবে শিক্ষার্থী থাকলেই ক্যাম্পাস নিরাপদ থাকে বলে তিনি জানান।





রাইজিংবিডি/১০ জুলাই ২০১৫/মেহেদী হাসান/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়