ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বাংলাদেশ বেতারের জন্মদিন আজ

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশ বেতারের জন্মদিন আজ

শাহ মতিন টিপু : বাংলাদেশ বেতারের জন্মদিন আজ। ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বেতারের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ বেতারের জন্মকালের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মিলটি এখানেই যে এর ঠিক ৩২ বছর পর এ দিনটিতেই চূড়ান্ত বিজয় লাভের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয় বাংলাদেশ।

 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ‘বাংলাদেশ বেতার’ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিহার্য সঙ্গী। মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বাংলাদেশ বেতার। এই বেতারের আজ ৭৬ বছর। প্রসঙ্গত, বিশ্বে প্রথম রেডিও আবিষ্কারই হয়েছিল ১৮৯৮ সালে।

 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঢাকা বেতার কেন্দ্র। যুদ্ধের সময় এটি হয়ে যায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। আর সাফল্যের পর সাফল্যের খবর শুনিয়ে সহজেই কেড়ে নেয় মুক্তিকামী মানুষের মন।

 

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট নামে খ্যাত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের এক বলিষ্ঠ প্রচার কান্ডারি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কালজয়ী গান ও অনুষ্ঠানগুলো একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে দেশের জনগণকে স্বাধীনতার দিকে অনুপ্রাণিত করেছে।

 

কেবল কী তাই, মানুষের জীবনে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃত বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ বেতার। এখনো অবিরাম তথ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বেতার।

 

আরেকটি ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, একাত্তরে রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের  জনসভায় জাতির জনক যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, ১৯ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণ বেতারের কয়েক জন দুঃসাহসী কর্মকর্তা জীবনের ঝুঁকি সম্প্রচার করেছিলেন। এ ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালির নেতা পাকিস্তান সরকারের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করেন। এ ভাষণের বাঙালির স্বাধিকারের আকাঙ্খাকে আরও তীব্র করে তোলেন।

 

১৯৭১ সালে কালজয়ী ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার বেতারের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এ ভাষণ প্রচারের পর সর্বস্তরের মানুষ তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, ভারতবর্ষে ১৯২৭ সালে বেসরকারিভাবে মুম্বইতে সর্বপ্রথম বেতার কেন্দ্র চালু হয়। কলকাতায় চালু হয় ১৯৩৩ সালে। শুরুতে বেসরকারিভাবে চালু হলেও পরে বৃটিশ-ইন্ডিয়া সরকার ১৯৩৬ সালের দিকে নিয়ন্ত্রণে আনলে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তখন থেকেই শুরু হয় এই উপমহাদেশে বেতারের সর্বজয়ী যাত্রা।

 

আমাদের দেশে বেতার সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও-ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র’ নামে। ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে...’ গান দিয়ে।

 

১৯৩৯ সালে নাজিমুদ্দিন রোডে বেতার সমপ্রচার কার্যক্রম শুরু হলেও পরে ১৯৬০ সালে ঢাকার শাহবাগে বেতার ভবন পুনঃস্থাপন করা হয়। পরে আবার ১৯৮৩ সালে আগারগাঁওয়ে বেতার ভবন স্থাপন করা হয়। আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা কেন্দ্রটি মূলত ‘জাতীয় বেতার ভবন’। এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম।

 

বর্তমানে দেশের নানা স্থানে ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার প্রতিদিন ২৭৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অনুষ্ঠান প্রচার করছে। আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দারবান ও কুমিল্লা। এছাড়া অনুষ্ঠান প্রচারে ইউনিটগুলো হচ্ছে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, বহির্বিশ্ব কার্যক্রম, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেল এবং ট্রাফিক সমপ্রচার কার্যক্রম।

 

‘বেতার বাংলা’ নামে একটি দ্বিমাসিক ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা রয়েছে। ঢাকার ধামরাইয়ে ১০০০ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন ট্রান্সমিটার দ্বারা ঢাকা ‘ক’ সমপ্রচারিত হয়। বাংলাদেশ বেতার একটি পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং প্রতিষ্ঠান।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়