ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের মোবাইলের বিবর্তন (পর্ব-১)

মো. রায়হান কবির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের মোবাইলের বিবর্তন (পর্ব-১)

মো. রায়হান কবির : একটা সময় বাংলাদেশের মোবাইল বাজারে স্যামসাং খুব একটা জনপ্রিয় ছিলনা। এর কারণ এটা নয় যে স্যামসাংয়ের মোবাইল আকর্ষণীয় ছিলনা। বরং এর কারণ ছিল স্যামসাং মোবাইলের কিছু সীমাবদ্ধতা।

 

স্যামসাং এর মোবাইলগুলো ছিল খুবই সুন্দর এবং এর ক্যামেরাও ছিল দারুন। শুধু একটি কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা হারায় আর তা ছিল স্যামসাংয়ের মোবাইলগুলোর ব্লুটুথ এবং ইনফ্রারেড (ডাটা শেয়ার এর অপশন) আমাদের এখানে কাজ করতো না। তাই সেই সময়ে আমাদের দেশের বাজারে সিমেন্স এবং নকিয়া ফোন খুব ভালো বাজার পায়। কারণ তাদের ব্লুটুথ এবং ইনফ্রারেড খুব অনায়াসেই কাজ করতো। স্যামসাং ব্যাপারটা ধরতে পারে। এবং পরে যখন তাদের ফোন এদেশে ডিলারের মাধ্যমে বিপণন করে তখন এদেশের চাহিদার দিকে লক্ষ্য করেই ফোন বাজারজাত করে।

 

এভাবেই স্যামসাং তাদের মোবাইলগুলো বিশ্বব্যাপী কাস্টমাইজ করে বাজারজাত করে মোবাইল জগতে তাদের অবস্থান জানান দেয়। ধীরে ধীরে স্যামসাং মোবাইল সেক্টরে তাদের অবস্থান পাকা করতে নিয়ে আসে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা। তাদের নিজস্ব অপারেটিং সফটওয়্যার যখন অন্য মোবাইল সফটওয়্যারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিলনা, তখন তারা ঝুঁকে অ্যান্ড্রয়েডের দিকে। আর অ্যান্ড্রয়েড স্যামসাংয়ের মোবাইলের বাজারকে এনে দেয় অভাবিত সাফল্য এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম।

 

তাই স্যামসাংয়ের অ্যান্ড্রয়েড সিরিজ বা গ্যালাক্সি সিরিজের শুরুর গল্পটা কেমন ছিল সেটা একটু দেখে নেই। স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি সিরিজ এবং প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ফোনের যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল স্যামসাং গ্যালাক্সি নামের ফোন দিয়ে। ৩.২ ইঞ্চির পর্দার এই মোবাইলে ব্যবহার করা হয় অ্যান্ড্রয়েডের ১.৫ ভার্সন। যার নাম ছিল ‘কাপ কেক’।

 

বাচ্চাদের প্রিয় সব খাবারের নামের সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েডের সখ্যতা নতুন নয়। সেই প্রথম ভার্সন থেকে যার শুরু। তাই স্যামসাংও তাদের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য বেছে নেয় কাপ কেক ভার্সনকে। এই ফোনের আরেকটি বিশেষত্ব ছিল, এই ফোনের মাধ্যমেই স্যামসাং তাদের ফোনে ৩.৫এমএম হেডফোন জ্যাক প্রথম ব্যবহার করে। এর আগে স্যমসাং তাদের ফোনের জন্যে আলাদা হেডফোন জ্যাক ব্যবহার করতো। এর ফলে হেডফোনের ব্যবহারে সকল ফোনের মধ্যে একটা সার্বজনীনতা চলে আসে। এভাবেই স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি সিরিজের শুরু করে।

 

তবে এই গ্যালাক্সির সঙ্গে ‘এস’ যুক্ত হয় প্রায় এক বছর পরে, ২০১০ সালের ২৩ মার্চ। এই তারিখেই স্যামসাং তাদের এস সিরিজের প্রথম ফোন আনে। যার নাম হয় ‘স্যামসাং গ্যালাক্সি এস’। এস সিরিজের প্রথম মোবাইল ফোনটি অবশ্য ৪ ইঞ্চি পর্দার ছিল। আর এতে অ্যান্ড্রয়েডের ২.১ ভার্সন ব্যবহার করা হয় অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে। যার নাম ছিল ‘এক্লেয়ার’। চিনেছেন তো কোন এক্লেয়ার? হুম যা ভেবেছেন ঠিক তাই, এটা আপনার প্রিয় চকলেট ক্যাডবেরি এক্লেয়ার এর নামেই নামকরণ করা হয়। এবং এই মোবাইলটি ৭২০ পিক্সেলে ভিডিও ধারণ করতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই মোবাইলটি বাজারে আসার পর স্যামসাংকে মোকাবেলা করতে হয় তার প্রধান প্রতিপক্ষ অ্যাপেলের মামলা।

 

পেটেন্ট ইস্যুতে অ্যাপেল, স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয় এই ফোনের ফিচার দেখে। কিন্তু স্যামসাংয়ের অগ্রযাত্রাকে কিন্তু রুখে দিতে পারেনি আমেরিকান এই মোবাইল জায়ান্ট। কিছুদিনের ভেতরই স্যামসাং বের করে তাদের এস সিরিজের ২য় ফোন ‘স্যামসাং গ্যালাক্সি এস টু’। এই ফোনের বিজ্ঞাপনে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ বলে যে, এটাই বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা মোবাইল সেট। যা কিনা ৮.৫ এমএম পাতলা ছিল।

 

এস সিরিজের আপডেট ভার্সনগুলো যেমন অ্যান্ড্রয়েডের আপডেট ভার্সন ব্যবহার করতো, তেমনি এগুলোর পর্দাও ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে। এস টু সেটটি তে ব্যবহার করা হয় ৪.৩ ইঞ্চির পর্দা। এবং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আসে অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ ভার্সন, অ্যান্ড্রয়েড জিঞ্জার ব্রেড। এস টু ভার্সনেও স্যামসাং উন্নত মানের ক্যামেরা ব্যবহার করে। আর স্যামসাং তাদের ব্যবসায় পায় নতুন এক দিগন্ত। অ্যাপেলের সঙ্গে তাদের লড়াই জমে ওঠে বেশ। ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে অ্যাপেলের একচেটিয়া আধিপত্য ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সেখানে নিজের জায়গা একটু একটু করে দখল করে এই কোরিয়ান জায়ান্ট। 

 

(২য় কিস্তিতে থাকছে গ্যালাক্সি সিরিজের বাকি ফোন এবং সর্বশেষ ফোন গ্যালাক্সি এস ৭ এবং গ্যালাক্সি এস ৭ এজ সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য)

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়