সারকোর ভূমিকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন
নিয়াজ || রাইজিংবিডি.কম
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) বিশেষ সংস্থা সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিলের (সারকো) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি হোসেন খালেদ।
তিনি বলেন, ‘সারকোর মতো প্রতিষ্ঠান সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতাসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতার জন্য সার্ক অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরিতে পিছিয়ে পড়ছে।’
শনিবার মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ‘সার্ক অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোতে বিকল্প বিরোধ কাউন্সিলের (সারকো) ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে হোসেন খালেদ এসব কথা বলেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক) এবং সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিল (সারকো) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার এবং সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, গত কয়েক দশক যাবত বাংলাদেশ সফলভাবে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে।
তিনি আরো জানান, বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির অভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এজন্য বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থার সাথে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ার ফলে দেশে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, সার্ক আরবিট্রেশন সেন্টার (সারকো) একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফর্ম, যেখানে ব্যবসায়িক বিরোধসমূহ স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে দক্ষতার সাথে নিষ্পত্তি করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াটি জনপ্রিয় করতে হলে এর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করতে হবে।
বিয়াক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের আদালতগুলোতে বর্তমানে যে পরিমাণ মামলা বিচারাধীন আছে, তা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তাই এ ধরনের মামলা-মোকদ্দমাসহ বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরবিট্রেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, একই সাথে আদালতে মামলার চাপও কমাতে সাহায্য করবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য বিষয়ক প্রক্রিয়াগুলো বিচারিক আদালতে সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়, যা দেশের বেসরকারি খাতকে নতুন নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে থাকে, এক্ষেত্রে আরবিট্রেশন এবং মেডিয়েশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিয়াক চেয়ারম্যান বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিয়াক ও সারকোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা গ্রহণের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।
সেমিনারে প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এম ফিদা কামাল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দেশের আদালতগুলোর মামলা জট কামানোর ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বাণিজ্যিক বিরোধের ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবহার করলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গত ১২ বছর যাবত এডিআর সিভিল প্রসিডিউর ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এডিআরের কার্যকারিতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।
এ সময় সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিলের মহাপরিচালক থুসানথা উইজেমানা বলেন, এ অঞ্চলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে সারকো একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআই ছিল ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৈশ্বিক এফডিআইর ১.৭ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, সারকোর মূল লক্ষ্য হলো- সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারাকে প্রসারিত করা।
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তফাজ্জল ইসলাম, বিচারপতি মো. আওলাদ আলী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম এবং প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ অংশ নেন।
সেমিনার শেষে সারকো, বিয়াক ও ডিসিসিআইয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/নিয়াজ/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন