ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইতিকাফে গুনাহ মাফ ও হজের সওয়াব

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৮ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইতিকাফে গুনাহ মাফ ও হজের সওয়াব

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : ২১ রমজান থেকে শুরু হয়েছে দশ দিনের ইতিকাফ। ইতিমধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করে মাহে রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ শুরু করে দিয়েছেন।

 

আজ মঙ্গলবার ইতিকাফের দ্বিতীয় দিন। ইতিকাফের জন্য ২০ রোজার দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই মুসল্লিরা মসজিদে ঢুকে যান।

 

আগে আমরা ইসলামী শরীয়ত মতে ইতিকাফের নিয়মাবলী, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। মসজিদে ইতিকাফের কী ফজিলত সে বিষয়ের উপর আজ আলোকপাত করবো।

 

রমজানের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ করা আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) এর পছন্দনীয় উত্তম আমল। রাসুলের এই প্রিয় সুন্নতকে তাঁর বিবিগণও গুরুত্বের সঙ্গে আমল করেছেন। যা একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। 

 

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা ইতিকাফ করবেন, তারা প্রকৃত অর্থে সৌভাগ্যবান। অন্তত: তারা মাহে রমজানের শেষ দশ দিন আল্লাহর ঘরে আল্লাহর মেহমান হয়ে যান। দুনিয়ার পাপকাজ থেকে বেঁচে যান, আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তারা হয়ে যান মাসুম। আর প্রতিদিন ইতিকাফের বদলে সওয়াব লাভের পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে হজের মতো উত্তম প্রতিদান দেওয়া হয়।

 

আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী মুরতাজা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে (দশদিন) ইতিকাফ করলন, তিনি দুই হজ ও দুই ওমরাহ আদায়কারীর ন্যায় সওয়াব পেলেন। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, হাদীস- ২৯৬৬)।

 

হযরত হাসান বসরী (র.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে– ইতিকাফকারী প্রতিদিন একটি হজের সওয়াব পান। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, হাদীস- ৩৯৬৮)।

 

দশ দিন মসজিদে অবস্থান করার কারণে ইতিকাফকারী সবধরণের গুনাহ থেকে বেঁচে যান এবং তার আমলনামায় অসংখ্য নেকি যোগ হয়।

 

হাদিসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ইতিকাফকারী গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন। তার জন্য সমস্ত নেকি লেখা হয়, যেমন সেগুলোর সম্পাদনকারীর জন্য লেখা হয়। (ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, হাদীস-১৭৮১)।

 

উপরোক্ত হাদিসমতে, সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে মসজিদে ইতিকাফে থাকার কারণে ওইসময় পর্যন্ত ‍গুনাহ থেকে বান্দা বেঁচে থাকেন। আর ইতিকাফকারীর আমলনামায় তিনি মসজিদে অবস্থান করে যা আমল করছেন তার নেকি যোগ হবে। আর এমন নেকিও তার সঙ্গে যোগ হবে যা তিনি আমল করেননি।

 

যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মাহে রমজানে কোনো বান্দা একজন রোগীর দেখাশুনা করতেন কিন্তু ইতিকাফের কারণে তা পারলেন না। এমন করতে না পারা আমলের সওয়াবও ইতিকাফকারীর আমলনামায় যোগ হবে।

 

ইতিকাফ করার কারণে বান্দার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। হাদিসে আছে, উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে ইতিকাফ করেন তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (জামিউস সগীর, ৫১৬ পৃষ্ঠা, হাদীস – ৮৪৮০)।

 

ইতিকাফের জন্য রাসুল (সা.) উৎসাহ দিতেন। হাদিসে আছে প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবেন, আল্লাহ তা’আলা তার ও জাহান্নামের মধ্যভাগে তিনটি খন্দককে অন্তরার করে দেবেন, যেগুলোর দূরত্ব পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের দূরত্ব অপেক্ষাও বেশি হবে। (দুররে মনছুর, ১ম খণ্ড, ৪৮৬ পৃষ্ঠা)।

 

তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিত এমন বরকতময় সুন্নতকে নিজেদের উত্তম আমল হিসেবে গ্রহণ করা। জীবনে অন্তত: একবার হলেও ইতিকাফ করা চাই।

 

ইতিকাফের উপকারিতা বর্ণনা করে প্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্ত ফতোয়ায়ে আলমগীরীতে বলা হয়েছে, ইতিকাফ মানে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বান্দার নিজেকে সম্পূর্ণরূপে এবাদতে মশগুল করে দেয়া। সেই সঙ্গে দুনিয়ার কাজকর্ম থেকেও নিজেকে আলাদা করে রাখা। ইতিকাফকারীর সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নামাজের মধ্যে অতিবাহিত হয়। কারণ, এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পর আরেক ওয়াক্ত নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নামাজের জন্য অপেক্ষা করার কারণে নামাজের সওয়াব পাবেন। জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার জন্য অপেক্ষা করাও ইতিকাফের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। 

 

তাছাড়া ইতিকাফকারী ওই সব ফেরেস্তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখেন যারা প্রতিমুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলছেন। আর তাঁদের সঙ্গেই সামঞ্জস্য রাখেন যারা রাতদিন তাসবীহ পাঠ করেন কিন্তু তাতে একটুও বিরক্তি বোধ করেন না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ২১২ পৃষ্ঠা)। 

 

তাই আসুন! মাহে রমজানে ইতিকাফ করে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.) এর সুন্নত আমল করার তওফিক দিন… আমীন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়