ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রযুক্তির রাজত্বে বিলীনের পথে ‘শুভেচ্ছা কার্ড’ সংস্কৃতি

আহমদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ১ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রযুক্তির রাজত্বে বিলীনের পথে ‘শুভেচ্ছা কার্ড’ সংস্কৃতি

আহমদ নূর : কিছুদিন আগেও যেকোনো উৎসবে বন্ধু-বান্ধব, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা সুসম্পর্ক আছে যাদের সঙ্গে এমন মানুষদের কাছে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হতো।

 

ঈদ কার্ড ছাড়া যেন শুভেচ্ছা জানানো অপূর্ণ থেকে যায়। প্রিয়জনের কাছ থেকে কার্ড না পেলে শত অভিমান দানা বাঁধত মনের মাঝে। অথচ কালের পরিক্রমায় এ সংস্কৃতিটি হারিয়ে গেল ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফেইসবুক, ই-কার্ড, মোবাইল ফোন, এসএমএসের আড়ালে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈদকার্ডের প্রচলন অনেকটাই কমে গেছে। কার্ড সংস্কৃতি পুরনো ঐতিহ্যের। ডিজিটাল নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারে বিলিনের পথে এই কার্ড সংস্কৃতি।

 

কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া ঈদকার্ড ব্যবহার হচ্ছে না বললেই চলে।

 

রাজধানীর বিভিন্ন কার্ড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ঈদ ঘনিয়ে এলেও ক্রেতাদের কোনো আনাগোনা নেই। মাঝে মধ্যে দুয়েকজন ক্রেতা এলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা হচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।

 

ক্রেতা–বিক্রেতারা জানান, উৎসবে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা অনুমান করা যায়। পাশাপাশি একজন মানুষের রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ মাধ্যম থেকে। কিছু স্মৃতিও মনে করতে সাহায্য করে এ মাধ্যম।

 

অধুনিকতার কারণে মানুষ এখন কার্ড বিমুখ হচ্ছে। শুধু প্রচলন ধরে রাখতে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ঈদকার্ড ছাপায়। পাশাপাশি কার্ডকে ঘিরে যেসব মানুষের মধুর কোনো স্মৃতি রয়েছে তারাই শুধু কার্ড কিনছেন। হঠাৎ করে ক্রেতা কমে যাওয়ায় খানিকটা ক্ষতির মুখেও পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

 

কিছুদিন পর কোনো উৎসবে শুভেচ্ছা জানাতে ‘কার্ড পদ্ধতি’ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

স্ত্রীকে ঈদকার্ড দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রায়হান আহমদ। তিনি জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একই ব্যাচের নাইমা হক নামে এক শিক্ষার্থীর প্রেমে পড়েন তিনি। ভালোলাগার কথা নিজে বলতে না পারায় সাহায্য নেন কার্ডের।’

 

২০০৯ সালের ঈদুল ফিতরের সময় তাকে উপহার দেন ঈদকার্ড, সঙ্গে ভালোবাসার আহ্বান। এখন তাদের ঘরে তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। তবে ঈদকার্ড দিয়ে ভালোবাসার আহ্বান জানানোর স্মৃতি মনে রাখতে প্রতি বছর দুই ঈদে স্ত্রীকে উপহার দেন নান্দনিক সব ঈদকার্ড।

 

 

তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও অনেক ভালো ডিজাইনের ঈদকার্ড পাওয়া যেত। এখন তা আর পাওয়া যায় না। আগের মতো রুচিশীল ও নান্দনিকতা নেই।’

 

আইডিয়াল প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আগের মতো ঈদকার্ডের চাহিদা নেই। এখন এসএমএস আর ফেইসবুকে পোস্টে মানুষ ঈদ শুভেচ্ছা সেরে নেয়। তবে কিছু বয়স্ক লোক আছেন যারা কার্ড কিনতে আসেন। মূলত তাদের জন্যই আমরা কিছু কার্ড ছাপাই।’

 

তিনি বলেন, ‘আগে ঈদ ঘনিয়ে এলে দোকানে মানুষের লাইন থাকত। ভিড় সামলাতে দুই থেকে চারজন নিরাপত্তা রক্ষীর প্রয়োজন হত।  এখন আমরা গুটি কয়েক মানুষ অপেক্ষা করি।’

 

আজাদ প্রোডাক্টসের সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক আশিস চক্রবর্তী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এখন ঈদ শুভেচ্ছায়ও ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এ কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে শুভেচ্ছা জানানো বা যোগাযোগের এ মাধ্যম। ব্যাংক, বিমা ও সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া ঈদকার্ড কেউ কিনতে আসে না।’

 

খুব শিগগিরই এ প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মানুষ সংস্কৃতিকে গুরুত্ব না দিয়ে কীভাবে সময় বাঁচানো যায় সে ব্যাপারে চিন্তা করছে। আর এটাকে সহজ করে দিয়েছে ইন্টারনেট।’

 

এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী সফিউল আলম রাজা বলেন, ‘আগে চিঠির মাধ্যমে মানুষ যোগাযোগ করত। পরে যোগাযোগের আরো দ্রুত মাধ্যম হিসেবে কুরিয়ার চালু হলো। এভাবে মানুষ প্রযুক্তির সঙ্গে বদলে যায়।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘এখন মানুষ ই-মেইল, ফেইসবুক, এসএমএসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়। তবে এর মধ্যে প্রাণ নেই, আন্তরিকতা নেই। যেন প্রাণহীন এক ঈদের শুভেচ্ছা। সামাজিকতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে আমাদের কিছু হলেও পুরাতনকে অনুসরণ করতে হবে।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুলাই ২০১৬/হাসান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়