ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘দেশে অর্থবিত্ত হলে চলবে না, আমাদের পরিতৃপ্তি চাই’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ২৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দেশে অর্থবিত্ত হলে চলবে না, আমাদের পরিতৃপ্তি চাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, দেশে অর্থবিত্ত হলে চলবে না, আমাদের পরিতৃপ্তি চাই। আমাদের ন্যায় চাই। নীতিবান একটি রাষ্ট্র ও হৃদয়বান মানুষ চাই।

মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিতর্ক, রচনা, পোস্টার অংকন ও কার্টুন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমাদের দেশে আজকাল অর্থ বাড়ছে বলে অনেক সস্তি বোধ করছি। আমরা মনে করছি খুব ভালো। অর্থ দরকার, অর্থ না হলে মানুষ পশুতে রূপান্তরিত হতে পারে কিন্তু শুধু অর্থ হলে চলবে না, আমাদের পরিতৃপ্তি চাই। আমাদের ন্যায় চাই।

তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব ন্যায়বান মানুষ তৈরি করা। ন্যায়সঙ্গত শাসন ব্যবস্থা তৈরি করা। যে শাসন ব্যবস্থা থাকলে মানুষ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। শাসন ব্যবস্থায় যদি কোনো জায়গায় দুর্বলতা থাকে, কোনো ছিদ্র থাকে তাহলে মানুষ চাইলেও ভালো হতে পারে না। তাই এটা করতে হবে। ধরুন বাংলাদেশের দুইটি গ্রাম। একটি গ্রামে দারিদ্র্যতা রয়েছে, কিন্তু তারপরও তারা সুখী। আবার অন্য একটি গ্রাম প্রচুর সম্পদশালী ও অর্থবিত্তে ভরা। এ গ্রামের মানুষ রাতে মাদক বা চোরাচালানের ব্যবসা করে। তাহলে আমরা এটিকে কী আমরা উন্নতি বলতে পারবো? আমার অর্থবিত্ত আছে কিন্তু হৃদয়ের মধ্যে বিরাট ক্ষত।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আমরা কী এ ধরনের রাষ্ট্র চাই। এর স্বপ্ন কী আমরা দেখি। আমরা দেখি না। আমরা দরিদ্র থাকতে এর চেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু ন্যায়বান হয়ে থাকতে ভালোবাসি। সফলের চেয়ে পরিতৃপ্তি অনেক মহৎ জিনিস। একটি সফল মানুষ অনেক কিছু পেতে পারে তারপরও অশান্তিতে দগ্ধ হতে পারে। সে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাবে। প্রকৃত শান্তি কে পাবে যার পরিতৃপ্তি রয়েছে। যে অল্প পেয়ে বলে শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।

দুদকের দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দুদকের দুই ধরনের দায়িত্ব একটি অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে দমন করা, অন্যদিকে অপরাধীর বিবেককে ভালোবাসা দিয়ে জাগিয়ে তোলা। দমন করে কতটুকু সফল হওয়া যাচ্ছে তা আমরা দেখছি। মানুষের হৃদয়কে জাগিয়ে তুলতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে অপরাধের বিরুদ্ধে এক ধরনের শক্তি গড়ে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে দুর্নীতি দূর হবে। দুটোকে যদি আমরা পাশাপাশি বাস্তবায়ন করতে না পারি শুধু একটি পথে দুর্নীতি দূর হবে না।

অনুষ্ঠানের সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শুধুমাত্র দুদক দিয়ে দিয়ে দুর্নীতি দূর সম্ভব নয়। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গেলে সকল স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এক হয়ে এক সুরে একটি কথা বলবে, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই এক। এটি একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, দুর্নীতির ডালপালা অনেক। দুর্নীতি মানুষের মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে দেয়, দুর্নীতি রাজনীতিসহ সমাজ, পরিবেশ সবকিছুকে কলুষিত করে দেয়। দুর্নীতি আমাদের সবকিছুকে কলঙ্কিত করে দেয়। এ কলঙ্কের তিলক দ্বারা আমাদের এত কষ্ট ও ত্যাগের অর্জন স্বাধীনতার গায়ে কলঙ্ক লাগবে তা হতে পারে না।

চলতি বছরে দুর্নীতিবাজদের ৭০ শতাংশ সাজা হয়েছে এমন উদাহরণ উপস্থাপন করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বছর দুর্নীতিবাজদের ৭০ শতাংশ শাস্তি হয়েছে। আমরা শতভাগ শাস্তি নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এখন শুধুমাত্র পত্রিকায় খবর ও মানুষের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, আমরা নিজের গোয়েন্দা তৎপরতা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সব খাতে যারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে খ্যাত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব-এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি কমিশন থেকে বলে দিতে চাই দুর্নীতিবাজ কেউই শান্তিতে তাদের অনুপার্জিত অর্থ ভোগ করতে পারবে না। একই সাথে আমরা গভীরভাবে চেষ্টা করবো আমাদের আগামী প্রজন্মের সুকমল হৃদয় যাতে প্রস্ফুটিত হয় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেব।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দুদকের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন। সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়