ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শেখ জামালে ধরাশায়ী আবাহনী

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেখ জামালে ধরাশায়ী আবাহনী

পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দুটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন উন্মুক্ত চাঁদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ফতুল্লা থেকে : প্রথম পর্বের দারুণ পারফরম্যান্সের পর সুপার লিগের প্রথম রাউন্ডে জয় তুলে নিয়ে উড়ছিল আবাহনী লিমিটেড। শিরোপা প্রত্যাশীদের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল শেখ জামাল। শেখ জামালের ব্যাট-বলের দারুণ নৈপুণ্যে ধরাশায়ী আবাহনী লিমিটেড। ফতুল্লায় আবাহনীকে ২৬ রানে হারিয়ে সুপার লিগে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে শেখ জামাল।

মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৫৬ রান তোলে শেখ জামাল। জবাবে আবাহনীর ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৩০ রানে। প্রথম পর্বের লড়াইয়ে আবাহনীর কাছে ৪৭ রানে হেরেছিল দলটি। সুপার লিগে জয় তুলে মধুর প্রতিশোধ নিল জামাল।

শেখ জামালের ইনিংসে একাই দাপট দেখান ভারতের উন্মুক্ত চাঁদ। সুপার লিগের প্রথম রাউন্ডে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর আজও ফতুল্লায় সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন চাঁদ। ডানহাতি এ ওপেনার করেছেন ১০১ রান। ১৩৮ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান চাঁদ। আরেক ওপেনার সৈকত আলীর ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রান।

দুজন উদ্বোধনী জুটিতে ৯০ রান যোগ করেন। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দ্রুত রান তুললেও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সেই রানকে বড় করতে পারেননি। চারে নামা তানভীর হায়দার করেন ৩১ রান। নুরুল হাসান সোহানের ১৯ ও ইলিয়াস সানীর অপরাজিত ১৯ রানের সুবাদে লড়াকু স্কোর পায় শেখ জামাল।



শেখ জামালের রান তিনশ অতিক্রম না করার বড় কৃতিত্ব মাশরাফির। প্রিমিয়ার লিগে ৩২ উইকেট পাওয়া এ পেসার আজও উইকেট পেয়েছেন ৩টি। এক ওভারে সেঞ্চুরিয়ান চাঁদ ও জিয়াউর রহমানকে (৬) আউট করার এক ওভার পর সোহাগ গাজীর উইকেট তুলে নেন। ১০ ওভারের বোলিং স্পেলে ৪৬ রানে ৩ উইকেট নেন মাশরাফি।  ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

বোলিংয়ে আবাহনীকে নেতৃত্ব দেওয়া মাশরাফি শুরুতেই নেমে যান ব্যাটিংয়ে। শেখ জামালের একাদশে তিন স্পিনার-সানী, গাজী ও অপু থাকায় কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের ট্রাম্পকার্ড ছিলেন মাশরাফি।

কিন্তু শেখ জামালের অধিনায়ক সোহান বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন শুরুতেই। ডানহাতি স্পিনার গাজীকে প্রথমে বোলিং করানোর পর দ্বিতীয় ওভারে পেসার রাহীকে নিয়ে আসেন। তাতেই পেয়ে যান সাফল্য।

আবাহনীর দীর্ঘ ব্যাটিং লাইনআপ ভাঙতে শুরুতেই উইকেট দরকার ছিল শেখ জামালের। পেসার রাহী দ্বিতীয় ওভারেই কাজের কাজটা করে দেন। লেগ স্টাম্প থেকে আউট সুইং করা ডেলিভারিতে ক্রস খেলতে গিয়ে বোল্ড হন প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নামা মাশরাফি (৭)। দলের সবচেয়ে বড় তারকাকে ফেরানোর পর নাজমুল হোসেন শান্তকেও আউট করেন রাহী। একটু ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হন সুপার লিগে আগে দুই সেঞ্চুরি হাঁকানো শান্ত (০)।

একদিকে উইকেট হারালেও অন্যদিকে দারুণ ব্যাটিং করে যান ইনফর্ম এনামুল হক বিজয়। রাহীকে মিড উইকেট দিয়ে ফ্লিক করে ছক্কা এবং চার, অন সাইডে কাভার ড্রাইভ দিয়ে চার মেরে রানের চাকা সচল রাখেন বিজয়।  কিন্তু তার ৩৪ রানের ইনিংসটির লাগাম টেনে ধরেন অপু। একটু হাওয়ায় ভাসানো বল তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হন বিজয়।



রাহীর তৃতীয় শিকারে পরিণত হন মোহাম্মদ মিথুন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন মাত্র ৫ রানে। ৫৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবাহনী শুরুতেই চাপে পড়ে। দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ার পাশাপাশি রানের চাকায় লাগাম টেনে ধরেন শেখ জামালের বোলাররা।

পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন নাসির হোসেন ও ভারতের হানুমা বিহারী। ৩৫ রান যোগ করেন তারা। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতালেও আজ পারেননি বিহারী। পেসার রবিউল হকের সোজা ডেলিভারিতে বল মিস করে বোল্ড হন ২৩ রানে।

ষষ্ঠ উইকেটে নাসিরকে সঙ্গ দেন মোসাদ্দেক। দুজন দলের রানকে নিয়ে যান ১১২-এ। ৫৫ বলে ২৮ রান করা নাসিরকে ফিরিয়ে শেখ জামালকে ষষ্ঠ উইকেটের স্বাদ দেন জিয়াউর রহমান। তার দারুণ এক ইন-সুইংয়ে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন নাসির।

রাহীর করা ৩৩তম ওভারে দুই বাউন্ডারি মেরে মোসাদ্দেক ভয় লাগিয়ে দিয়েছিলেন শেখ জামাল শিবিরে। দ্রুত ২৭ রানেও পৌঁছে যান তিনি। কিন্তু ইলিয়াস সানীর ঘূর্ণিতে ৩৪তম ওভারে হার মানতে হয় তাকে। স্টাম্পের ওপরের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ওই রানে।



১৩৮ রানে ৭ উইকেট হারানো আবাহনীর হার তখন শুধু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু অষ্টম উইকেটে মিরাজ ও সানজামুলের ৫৩ রানের জুটি দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় শেখ জামালের জয়ে। উইকেটের চারপাশে বাউন্ডারি মেরে দ্রুত রান তোলেন তারা। এ জুটি ভাঙেন পেসার রবিউল হক। লো ফুলটস বলে কাভারে ক্যাচ দেন সানজামুল (২৭)। তাতেই যেন জয় নিশ্চিত শেখ জামালের। মিরাজ (৩৫) আউট হন পরের ওভারে সোহাগ গাজীর বলে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাসকিন (৩১)  আউট হলে ২৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শেখ জামাল।

বল হাতে রাহী ও রবিউল ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন।  ১টি করে উইকেট পেয়েছেন গাজী, সানী, অপু ও জিয়াউর।

ব্যাট-বলে অসাধারণ পারফরম্যান্সে শেখ জামাল তুলে নিয়েছে জয়। ব্যাটিংয়ে চাঁদ ও বোলিংয়ে রাহীর নৈপুণ্যে জয় নিশ্চিত হয় তাদের। ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে চাঁদের হাতে।

১৩ ম্যাচে এটি শেখ জামালের অষ্টম জয়, ১৬ পয়েন্ট। আবাহনীর ১৩ ম্যাচে চতুর্থ পরাজয়, ১৮ পয়েন্ট।



রাইজিংবিডি/ফতুল্লা/২৭ মার্চ ২০১৮/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়