ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করে অর্থবিল পাস

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ২৮ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করে অর্থবিল পাস

সংসদ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত নতুন ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত, ব্যাংক আমানতের ওপর বিদ্যমান আবগারি শুল্ক হ্রাস এবং চালের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাসসহ বেশকিছু সুবিধা দিয়ে অর্থবিল-২০১৭ পাস করা হয়েছে।

এ ছাড়া কম্পিউটার, সেলুলার ফোন ও তার যন্ত্রাংশ, যা দেশে তৈরি হচ্ছে, তার মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের ওপর আরোপিত শুল্ক বা কর হার কমানো হয়েছে।

বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এ সময় অর্থমন্ত্রী বহুল বিতর্কিত ভ্যাট আইন প্রত্যাহার এবং ব্যাংক আমানতের ১ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক মওকুফ করে ৫ লাখ টাকার ওপর আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক পুনর্বিন্যাস করেন।

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতা করেন অর্থমন্ত্রী।

আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তার এই প্রস্তাবকে আমি অনুশাসন মনে করে তার সব প্রস্তাবই প্রহণ করছি।

এরপর অর্থমন্ত্রী অর্থবিল উত্থাপন করলে তার বিরোধিতা এবং বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব করেন বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য।

অবশ্য কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব ও সংশোধনীগুলো নাকচ হয়ে যায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশান এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

বিল পাসের সময় অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটকে আবারও তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট উল্লেখ করে বলেন, ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছ করে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার না করে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো দেশই উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল হতে পারেনি। দেশকে উন্নত করতে হলে আমাদেরও একইভাবে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের মাধ্যমে জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা একটি সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফল হবই হব।

খাতওয়ারি শুল্ক প্রত্যাহার ও পুনর্বিন্যাস
অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটের শুল্ক প্রত্যাহার ও পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে একটি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম হিসেবে আমরা বিবেচনা করব এবং ধ্যান অথবা যোগের (মেডিটেশন) ওপরে আগামী ২ বছরে কোনো ভ্যাট আরোপ হবে না।

কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং তার যন্ত্রাংশ এখন দেশে তৈরি হচ্ছে। এগুলোকে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করে তাদেরকে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হবে।

শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের বিষয়ে বর্তমানে বলবৎ প্রজ্ঞাপনই বহাল থাকবে। তবে মোটরসাইকেল শিল্পের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপনীয় সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেন।

মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড অনেক সফটওয়্যার আমদানি করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করে। কতিপয় পণ্য বিনা আমদানি শুল্কে আমদানি করে। যেসব পণ্যে আমদানি শুল্ক নেই, সেগুলোর ওপর প্রস্তাবিত ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের ওপর আরোপিত শুল্ক বা কর হার অবনমিত করে সংযোজনকারীদের উপর প্রযোজ্য ৩০ শতাংশের স্থলে ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবার নির্মিত এলপিজি কন্টেইনারের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপ না করার প্রস্তাব করা হয়। এলপিজি সিলিন্ডার এখনো ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর। তাই স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় আমদানি পর্যায়ে লৌহনির্মিত এলপিজি কন্টেইনারের ওপর ভ্যাট বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে আরো বলেন, মোটরসাইকেলের সব যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে সাহায্য করার জন্য গত বছরের অর্থবিলে প্রোগ্রেসিভ উৎপাদনকে কিছু কর/শুল্কের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এবারে তাদের অগ্রগতি লক্ষণীয় না হওয়ায় সেটি বাদ দেওয়া হয়। তবে তারা জানিয়েছেন, অতি সত্বরই তারা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবেন এবং সেই বিবেচনায় এর ওপর বর্ধিত শুল্ক করাদি মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, জাপান দূতাবাস এবং নিটল নিলয় কোম্পানি আমাদের জানিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে হোন্ডা এবং অন্যান্য কোম্পানি মোটরসাইকেল এবং মোটর গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। সেই বিবেচনায় এজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ওপর আমদানি পর্যায়ে হ্রাসকৃত হারে শুল্ক-কর আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশে সোলার প্যানেল তৈরি হওয়ায় অধিকহারে সোলার প্যানেলের ওপর যে আমদানি শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব  করা হয়েছিল, সেটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল থাকবে। তবে সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়কর হার ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে গুড়া মসলা জাতীয় মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এগুলোর ট্যারিফ মূল্য বহাল রেখে ভ্যাটের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভ্যাট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যগণ এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি মূসক আইনের পূর্ণ কার্যকারিতা পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করছি। আগের ধারাবাহিকতায় কিছু সংশোধন করে ২০১২ সালের আইনই যেভাবে গত চার বছর ধরে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক তিন স্তরে আরোপ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এবারের বাজেট ঘোষণার পর দেশের সর্বস্তরে এর পক্ষে-বিপক্ষে যেভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে তা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। আমাদের সরকার জনগণের সরকার। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর জনগণের মতামত সঠিক পথে চলার নির্দেশনা দেয়।

বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমরা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৭.৪ শতাংশ। এটি অর্জনের বিষয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। ২০১৫-১৬ সালে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.০৫ শতাংশ। এর বিপরীতে আমরা ৭.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.২ শতাংশ। এর বিপরীতে বিবিএস এর সাময়িক হিসাবে আমাদের প্রবৃদ্ধি এসেছে ৭.২৪ শতাংশ। তার মানে হচ্ছে, আমরা বিগত ২ বছর যাবৎ আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছি। এ ধারা সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তির অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের সাম্প্রতিক ইতিবাচক পরিবর্তন আমার এই দাবির স্বপক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।

খাত ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এপ্রিল নাগাদ আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৭ শতাংশ এবং একই অর্থবছরের মে নাগাদ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.২১ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫.৫৯ শতাংশ। প্রবাস আয়প্রবাহ নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। তবে প্রবাস আয় প্রবাহ সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের মে মাসে আমাদের প্রবাস আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৩৮ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরে একই সময়ে ৮.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত (মে, ২০১৭) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে মোট ৮ লাখ ৩৭ হাজার প্রবাস নিয়োগ হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ লাখ ২২ হাজার। আশা করি, প্রবাস আয়কে ঘিরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনিশ্চয়তা অচিরেই দূর হবে।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি নির্দেশক অন্যান্য চলকগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষভাবে ম্যানুফেকচারিং ও মাইনিং খাতের উৎপাদন সূচক চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বর নাগাদ ৭.৪১ শতাংশ ও ২.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার ও হার ব্যবধান অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। আবার চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে নীট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০.৭ শতাংশ। মূলত দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা, নীতি কৌশলগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা ও এগুলোর সুসমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অব্যাহত সরকারি উদ্যোগের কারণেই ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথকে প্রশস্ত করেছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এডিপি বাস্তায়ন হয়েছে ৬৪.৭২ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১.৮৫ শতাংশ। এটি সরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সহায়ক মুদ্রানীতির অনুসরণের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রয়েছে। এটি টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপির ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জনে আমরা মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি জিডিপির ৩১.৯ শতাংশ।

কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না, এ মর্মে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ত্রৈমাসিক শ্রমজরিপ ২০১৫-১৬ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ২০১৩ সালের ৪.৩ শতাংশ হতে ২০১৫-১৬ সালের শেষ প্রান্তিকে ৪.০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা যেকোনো বিচারে উল্লেখ করার মতো। কর্মসংস্থান সঞ্চারি প্রবৃদ্ধি না হলে বেকারত্বের হার কমা সম্ভব হতো না।

বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে সচল রাখার বিষয়ে আমরা বরাবরের মতো এ বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা পর্যায়ক্রমে শিল্প স্থাপনের বাধাসমূহ দূরীকরণে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পিপিপির দক্ষ ও গতিশীল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি, বেসরকারি বিনিয়োগ অর্থায়নে ফান্ড স্থাপন, বিদেশি বিনিয়োগে বাধা অপসারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব চলমান উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের উন্নয়ন আকাঙ্খা পূরণে কাঙ্খিত অগ্রগতি সাধিত হবে।

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার কমার কারণে সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সঞ্চয়পত্র হতে অধিক ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনার ওপর একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণের কারণে কোনো পেনশনভোগী, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত কেউ যাতে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

তিনি বলেন, অনন্তকালের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকতে পারে না। সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে, মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার বাড়ে আর মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার কমে। বিষয়টি তাই আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তবে আমরা চাচ্ছি সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তা যেন সঠিক ব্যক্তিরা পায়। এজন্য আমরা এর একটি পুর্ণাঙ্গ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করব, যেখানে ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে সঞ্চয়পত্রের তথ্যকে সম্পৃক্ত করা হবে। পাশাপাশি পেনশন সুবিধা সর্বস্তরের জনগণের জন্য বিস্তৃত করতে চাই।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। সক্ষমতা বিবেচনায় বাজেটটি হয়েছে অতি উচ্চাভিলাষী-এরূপ মতামতও ব্যক্ত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহের মূলধন পুনর্ভরণ নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দেশের বৃহত্তম কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে এবং সেসব বিষয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বিচারাধীন আছে, যা এর আগে কখনো হয়নি। দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বেসিক ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠনের পর ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত ঋণ অনেক কমেছে। সবোর্চ্চ ৬৭ শতাংশ শ্রেণিকৃত ঋণ কমে বর্তমানে ৫২ শতাংশে নেমে এসেছে। একটানা ৫ বছর লোকসান দেওয়ার পর ২০১৬ সন শেষে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৫ সালে বেসিক ব্যাংক ২৫৬.৪২ কোটি টাকা পরিচালন ক্ষতির সম্মুখীন হলেও ২০১৬ সালে তা ৯.০৮ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। তাই মূলধন সরবরাহ না করা হলে ব্যাংকটি বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হতো। এর ফলে ব্যাংকটির আমানতকারী, ঋণগ্রহীতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দেশের ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হতো।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৭/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়