ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মাতৃভাষা শিক্ষায় বাধা যেখানে

নুরুচ্ছাফা মানিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মাতৃভাষা শিক্ষায় বাধা যেখানে

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা : আগামীকাল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।বাংলাদেশে সরকারিভাবে আদিবাসীরা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার।

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বহুল প্রতিক্ষীত নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চলতি বছরে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে চালু হলেও নানা সঙ্কটে তা প্রতিবন্ধকতার মুখে। সম্প্রদায় ভিত্তিক শিক্ষক, প্রশিক্ষণ ও পাঠদানের জন্য পৃথক শ্রেণিকক্ষ না থাকায় সরকারের ইতিবাচক এ উদ্যোগটি শুরুতেই সমস্যার সম্মুখীন ।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, চলতি শিক্ষা বর্ষে খাগড়াছড়ির ৫৯২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকমা সম্প্রদায়ের ৩৭৯৫ জন, মারমা সম্প্রদায়ের ১৭৯০ জন ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৫৫২ জন শিক্ষার্থীদের জন্য বই, খাতা, বর্ণমালা পরিচিতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রদায়ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের পাঠদানে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে পৃথক ক্লাসরুমের ব্যবস্থা না থাকায় একজন শিক্ষক দিয়ে একটি কক্ষেই তিন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। অন্যদিকে এবিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না থাকায় বছর শেষে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার মান অর্জন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তবে যেসব বিদ্যালয়ে এক সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ ইতিবাচক সাফল্য বয়ে আনবে বলে আশা শিক্ষকদের।

খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শর্মিষ্ঠা ত্রিপুরা জানান, ত্রিপুরা হয়েও ‘ককবরক’ বর্ণমালা পরিচিতি না থাকায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারি না।

আপ্রুমা মার্মা নামে আরেক শিক্ষক জানান, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিজস্ব মাতৃভাষা রক্ষায় সরকারের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক শিক্ষকই নিজ মাতৃভাষায় পাঠদান করাতে পারছেন না। অন্যান্য শ্রেণিতে এ কার্যক্রম উন্নীত করার আগে সঙ্কট উত্তরণে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক পদায়ন প্রয়োজন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন জানান, মাতৃভাষায় পাঠদানে সক্ষমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ৩০ জন প্রশিক্ষকও নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মাতৃভাষার লেখক প্যানেলের সদস্য মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, এনসিটিবি’র সাথে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক সঙ্কট দূর করতে ২৬১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকার পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে মাতৃভাষার শিক্ষা কার্যক্রম উন্নীত করবে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম বোর্ড মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লেখকদের সমন্বয়ে স্টাডিং কমিটি গঠন করা হয়। লেখক প্যানেলদের প্রণীত পাঠ্যপুস্তকে চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঁচ সম্প্রদায়ের নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।  



রাইজিংবিডি/খাগড়াছড়ি/৮ আগস্ট ২০১৭/নুরুচ্ছাফা মানিক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়