ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রহস্যময় আলুটিলা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রহস্যময় আলুটিলা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : হাজার বছর পুরোনো অন্ধকারাচ্ছন্ন আদিম গুহা। গুহাতে প্রবেশ করতেই পিচ্ছিল মাটি, ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। দেখতে আলুর মতো না হলেও, গুহার নাম আলুটিলা। এটি এখন খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমায় আলুটিলা গুহায়।

বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলায় মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে আলুটিলা গুহা অবস্থিত। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। এটি খাগড়াছড়ির খুব জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে মশাল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। শুধু তাই নয় তলদেশে একটি ঝরনা প্রবাহমান। গুহাটি দেখতে অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মতো, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেকপাশ দিয়ে বের হতে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগে। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে খুব কম হওয়ায় মাথা নিচু করে হেঁটে যেতে হয়।

আলুটিলা গুহার নামকরণ বিষয়ে উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আলুটিলার পূর্বের নাম আরবারী পর্বত। আলুটিলায় প্রচুর পরিমাণে বুনো আলু জন্মে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাগড়াছড়িতে খাদ্যাভাব দেখা দিলে, স্থানীয় জনগণ এই পর্বত থেকে বুনো আলু খেয়েই জীবনধারণ করেছিল। এরপর থেকেই এই পর্বতটি আলুটিলা নামে পরিচিতি পায়।

 


সম্প্রতি আলুটিলা গুহা দেখতে এসেছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আলামিন প্রান্ত। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার এর আগে কোনো গুহাতে প্রবেশ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। আলুটিলার গুহাতে প্রবেশ করে এক অপার্থিব বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। মাথার ওপর কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু ছাদ থেকে টুপটাপ পানি চুইয়ে পড়ছে। হাতে মশাল- ভেতরে, সামনে, পিছনে আলোআঁধারির খেলা। পিচ্ছিল পথ। পায়ে জোঁক কামড়ে ধরছে অথচ কিছু করার নেই। এ এক অপার্থিব অনুভূতি যার প্রকাশ আসলেই সম্ভব না।’

গুহার প্রবেশ মুখ পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ির নিচে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয় খুব সাবধানে। দর্শনার্থীরা সিঁড়ি বেয়ে নামেন আর উপভোগ করেন আশেপাশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যায় গোটা খাগড়াছড়ি শহর। পাহাড়ের পাদদেশে রহস্যময় সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলে দর্শনার্থীদের মনে জাগবে অন্যরকম শিহরণ।

 


ঢাকা থেকে আসা আরেক দর্শনার্থী জাহা শীহাব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আলুটিলায় প্রবেশ পথের পিচ্ছিল মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছিল, এই পিচ্ছিল জায়গায় একটা গুহার মধ্যে কীভাবে হাঁটবো। কিন্তু একটু এগুতেই শীতল পানির ধারা আর পাথরের উঁচু নিচু পথ শিহরিত করছিল। মোট কথা দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে!’

আলুটিলা পাহাড় চূড়ায় দর্শনার্থীদের কাছে মশাল বিক্রি করেন জরিনা ত্রিপুরা। প্রতিটি মশাল বিক্রি করেন ১০ টাকা দামে। জরিনা ত্রিপুরা জানান, প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ মশাল বিক্রি করেন তিনি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোশারেফ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আলুটিলা গুহায় প্রবেশ করে মনে হয়েছে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছি। এটি প্রকৃতির হাজার বছর পুরোনো একটি গুহা। আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় করে দর্শনীয় স্থানটির কিছু সংস্কার প্রয়োজন। ভালো খাবার রেস্টুরেন্ট, পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা ও নারীদের নিরাপত্তা জোরদার করলে এই গুহার প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহ আরো বাড়তো।’
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়