বিকেএসপিতে সৌম্যর আক্রমণাত্মক সেঞ্চুরি
ক্রীড়া প্রতিবেদক, বিকেএসপি থেকে: সৌম্যর ব্যাটে ছিল না রান। বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পেয়েছিলেন পুরনো পারফরম্যান্সের জোরে। আত্মবিশ্বাসে ছিল ঘাটতি। আউট হওয়ার ধরণ ছিল বাজে। চলছিল সমালোচনা। ২২ গজ যেন হয়ে উঠেছিল মরুদ্যান। লিগের ১১ ম্যাচে সৌম্যর ছিল না একটি ফিফটিও!
স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে থাকা সৌম্য আজ ফিরলেন স্বরূপে। বিকেএসপিতে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপরীতে খেললেন ১০৬ রানের ইনিংস। শুধু রানই করেননি, মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন প্রতিটি শটে। দারুণ সব শটস, নিখুঁত টাইমিং, অসাধারণ প্লেসমেন্ট ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে সৌম্য হয়ে উঠিছিলেন অনন্য। তবে যতটা ভালো ব্যাটিং করে সৌম্য সবাইকে মুগ্ধ করেছেন ঠিক ততোটাই বাজে শট খেলে ফিরেন সাজঘরে।
১০৬ রানের ইনিংসটি খেলেছেন মাত্র ৭৯ বলে। ১৩৪.১৭ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসটিতে ছিল ১৫ চার ও ২ ছক্কা। শেষ কয়েক ম্যাচে যে ভুলগুলো করেছেন সেগুলো থেকে আজ বেরিয়ে এসেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আঁটসাট উইকেটে বলের জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। শট খেলেছেন নিয়ন্ত্রিত। ড্রাইভ করেছেন বলের ওপর চোখ রেখে। শর্ট বলে পুল কিংবা হাফভলি বলগুলোকে দারুণভাবে প্লেসমেন্ট করে পেয়েছেন রান। বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি থিতু হওয়ার।
রূপগঞ্জের স্পিনার নাবিল সামাদকে অন ড্রাইভে লং অন দিয়ে চার মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন সৌম্য। তৃতীয় ওভারে কভার ড্রাইভে এবং লেগ সাইডে ফ্লিক করে শুভাশিষকে চার মারেন দুটি। এক ওভার পর শুভাশিষকে আরও তিনটি চার হাঁকান এ ব্যাটসম্যান। প্রথমটি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে, পরের দুটি মিড অন ও লং অফ দিয়ে।
১১তম ওভারে মোহাম্মদ শহীদকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্ট্রেইট হিটে মারেন ছক্কা। দারুণ ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতায় ৩৯ বলে সৌম্য পৌঁছে যান ফিফটিতে। শহীদকে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ৪৭ থেকে ৫১ রানে পৌঁছান এ ব্যাটসম্যান। হাফ সেঞ্চুরির পর শহীদের বলে টপ এজ হয়ে দ্বিতীয় ছক্কার স্বাদ পান সৌম্য।
পেসার তাসকিনকে থিতু হতে দেননি এ বাঁহাতি। ১৮তম ওভারে তাসকিনকে তিনটি চার হাঁকান। বলের লাইন পেতে ব্যর্থ তাসকিন বারবার দিচ্ছিলেন শর্ট বল। সময় নিয়ে ব্যাকফুটে শট খেলে তাসকিনকে এলোমেলো করে দেন এ ব্যাটসম্যান।
ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে চোখের পলকে মুহূর্তেই সৌম্য পৌঁছে যান নব্বইয়ের ঘরে। সেখানেও বিচলিত হননি। তাসকিনকে ২২তম ওভারে দুটি চার মেরে সৌম্যর রান পৌঁছে ৯৪-এ। নাবিল সামাদের পরের ওভারে নাঈমের মিস ফিল্ডিংয়ে আরেকটি বাউন্ডারির স্বাদ পান এ ব্যাটসম্যান। ৯৯ রান থেকে তিন অঙ্কে পৌঁছান এক রান নিয়ে।
৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি পৌঁছতে সৌম্যকে খেলতে হয় আরও ৩২ বল। সেঞ্চুরির পর কোনো উদযাপন করেননি এ ব্যাটসম্যান। ব্যাট উঠিয়ে অভিনন্দনের জবাব দেন একবার। সেঞ্চুরির পর এলোপাথারি শটে আরও একটি বাউন্ডারি পেয়ে যান। মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরিতেই খুশি এ ব্যাটসম্যান। তাইতো তিন অঙ্কে পৌঁছার পর ইনিংস বিলিয়ে আসেন নাবিল সামাদের বল।
বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হাওয়ায় বল উঠান সৌম্য। সিলি মিড অন থেকে মিড উইকেটে গিয়ে বল তালুবন্দি করেন মুমিনুল হক। তাতেই শেষ সৌম্যর দারুণ ইনিংসটি।
অফফর্মে থাকা সৌম্য আজ রান পেয়ে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। তার রান ফেরা বাংলাদেশ দলের জন্য আর্শীবাদ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাইজিংবিডি/সাভার (বিকেএসপি)/২১ এপ্রিল ২০১৯/ইয়াসিন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন