ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিএসইউএমের শিক্ষাসফর

মোস্তফা ইমরান রাজু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিএসইউএমের শিক্ষাসফর

মোস্তফা ইমরান রাজু, কুয়ালালামপুর থেকে : রাজধানী কুয়ালালামপুরের আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে ছুটে চলেছে আমাদের বাস। সকাল সকাল কুয়ালালামপুরের অভিজাত এলাকা বুকিত বিনতাং থেকে ইউনিভার্সিটি মালয়া হয়ে যাত্রা শুরু হলো দক্ষিণ চীন সাগরের কোলঘেঁষা কোয়ান্তানের তেলুক ছিম্পেডাক সমুদ্র সৈকত অভিমুখে।

দু’দিনের এই সফরের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া। বার্ষিক এ সফরকে শিক্ষাসফর বলছেন সংগঠনটির নেতারা। ইউনিভার্সিটি মালয়া, ইউনিভার্সিটি সাইন্স ইসলাম মালয়েশিয়া, ইউসিএসআই, ইউএসআইএম, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া, লিংকন ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছেন এই সফরে।

মোহনা টিভির মালয়েশিয়া প্রতিনিধি শামসুজ্জামান নাঈমের উপস্থাপনায় চলন্ত পথেই শুরু হলো কৌতুক, গান আর কথোপকথনে আমাদের আড্ডা।

চার ঘণ্টার সফর শেষে আমরা পৌঁছালাম কোয়ান্তানের তেলুক ছিম্পেডাক সমুদ্র সৈকতে। পাহাড়ের পাদদেশের এই সৈকতের পাশেই একটি কটেজে ব্যবস্থা হলো রাত কাটানোর। এবার সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পালা।

পড়ন্ত বিকেলে হেলে পড়া সূর্যটার তীর্যক আলোয় চিকচিক করছে সৈকতের বালু। সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউ দেখে এক মুহূর্তের জন্য আপনি হারিয়ে যেতে পারেন কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ভেবে। মালয়েশিয়ার অন্যান্য সৈকতে আপনি হয়তো এমন ঢেউ পাবেন না। ঘণ্টাখানেক পরেই এই সৈকতে শুরু হলো আমাদের বিচ ফুটবল খেলা। খেলা শেষে কিছু সময় চলল বালু দিয়ে শহীদ মিনার তৈরির চেষ্টাও।

সন্ধ্যা আগত। লাল সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়েছে নীল সমুদ্রে। সান্ধ্য সমুদ্র দেখতে সৈকতে জড়ো হয়েছে কয়েকশ মানুষ। যাদের প্রায় সবাই মালয়েশিয়ান। বলে রাখা ভালো এ সমুদ্র সৈকতে বিদেশিদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। নেই প্যারাস্যুট, ব্যানানা বোট, স্পিড বোট কিংবা অন্য কোনো্ জলযান। তবে সমুদ্রের কোলঘেঁষে বসেছে বিশাল বাজার যেখান থেকে সস্তায় অনেক কিছু কিনতে পারেন আপনি। আছে কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস্, স্টারবাক কিংবা সাবওয়ের মতো খাবারের রেস্টুরেন্ট। শুধু যারা সমুদ্র সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তারা ঘুরে আসতে পারেন এই সৈকতে। তবে সমুদ্রস্নানে আগ্রহীদের সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। কারণ সৈকতের ঢেউ আর সমুদ্রে পানির অবস্থানই বলে দিচ্ছে এর ভয়বহতা কতটুকু।

 



মধ্যরাতে সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসে। বারবিকিউ পার্টি শেষে ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে আটকে গেলো মধ্যরাতের সমুদ্র দর্শন।

দু’দিনের সংক্ষিপ্ত সফর। শেষদিন বেলা সাড়ে ১২টায় হোটেল থেকে চেক আউট করার আগে শেষবারের মতো সমুদ্রে ছুটলাম। সকালের ঝলমলে সূর্যের আলোয় উত্তাল সমুদ্র আরো বেশি উচ্ছল। পাহাড়ের কোলঘেঁষা কাঠের সেতু পার হয়ে সামনে এগুচ্ছি আমরা। এই সেতুর আশপাশে বেশ কিছু বানর রয়েছে যা আপনাকে নানাভাবে বিরক্ত করতে পারে। সমুদ্রের কিনারায় ফেলে রাখা পাথরখণ্ডের ওপর কিছু ছবি ওঠানো শেষে আমরা ফিরলাম হোটেলে।

এখান থেকে আবার যাত্রা শুরু। কোয়ান্তান শহরে দেখার মতো খুব বেশি কিছু নেই। তবে শহরের মাঝে শাহ সুলতান আহমেদ শাহ স্টেট মসজিদটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এই মসজিদটি দেখে আমাদের যাত্রা শুরু হলো ঝর্ণা অভিমুখে। সৈকত থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রংধনু ঝর্ণা (রেইনবো ওয়াটারফল)। সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে গেলে আপনি দেখতে পাবেন রংধনু। তবে দুর্গম রাস্তার কারণে রংধনু ঝর্ণার (রেইনবো ওয়াটারফল) পরিবর্তে আমরা পার্শ্ববর্তী সুংগাই পান্দান ওয়াটারফলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

অসাধারণ এই ঝর্ণা প্রথম দেখায় আপনার ভালো লেগে যাবে। গেট দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়বে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ আর ব্রিজের পরেই বিশাল আকৃতির ঝর্ণা যেখান থেকে অঝোরে নামছে পানির ঢল। মনোমুগ্ধকর এই স্থানে এসে স্বচ্ছ পানির স্রোতধারায় নিজেকে না ভেজালে অনেক কিছুই আপনার অপূর্ণ থেকে যাবে।

মনোরম সমুদ্র সৈকতের পর মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা- দু’দিনের সফরের পরিপূর্ণতা পেলো। সঙ্গে যোগ হলো এক মালয়েশিয়ান মুসলিম রমণীর সততার দৃষ্টান্ত। সহকর্মী নাঈমের ফেলে আশা ক্যামেরা ফিরিয়ে দিয়ে যিনি অনেকদিন থেকে যাবেন আমাদের মানসপটে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মার্চ ২০১৭/রাজু/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়