ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

পাসপোর্ট বানাতে ঢাকায় এসেছিলেন ‘বড় হুজুর’

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাসপোর্ট বানাতে ঢাকায় এসেছিলেন ‘বড় হুজুর’

আহমদ নূর : নতুন পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা ও জেএমবির একাংশের প্রাক্তন আমির মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে ‘বড় হুজুর’ ঢাকায় এসেছিলেন।

এর আগে তিনি উত্তরবঙ্গে আত্মগোপনে ছিলেন। সংগঠনের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়া, অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি ও  লোকবল কমে যাওয়ায় বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি। তাই নতুন কোনো কৌশল খুঁজতে তিনি বিদেশ যেতে চাচ্ছিলেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, আবুল কাশেমের সাধারণ কোনো শিক্ষা নেই। যা লেখাপড়া করেছেন তাও আরবি শিক্ষায়। আর ইংরেজি শিক্ষা তো একদমই নেই। বিদেশে গিয়ে যেন অন্য ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারেন সেজন্য সম্প্রতি তিনি ইংরেজি শেখার ওপর খুব জোর দিয়েছিলেন। ইংরেজি বই থেকে তিনি কিছু ইংরেজি শেখার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু পুরোপুরি শিখতে পারেননি।

সূত্র আরো জানায়, জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের সব পদ্ধতি তৈরি করতেন বড় হুজুর। প্রশিক্ষণ শেষে জঙ্গিদের যে শেষ বয়ান দেওয়া হতো, তাও দিতেন তিনি। সেই বয়ানে জঙ্গিদের শর্টকাট জান্নাতে যাওয়ার জন্য অনেক পদ্ধতি বলে দিতেন।

বক্তব্যে বলতেন, তারা (জঙ্গিরা) যদি পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মারা যায় তাহলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই জান্নাতে চলে যাবে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যদি কেউ সংগঠনের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয় তাহলে তার জান্নাতে যাওয়া সফল হবে না। এজন্য সংগঠনের সব গোপনীয় তথ্য দেয় না জঙ্গিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের শেষের দিকে বিদেশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জানায়, কানাডিয়ান এক ব্যক্তি রাজশাহীতে এক হুজুরের সঙ্গে বৈঠক করছে। তারা মূলত নব্য জেএমবি গঠনের জন্য একত্র হচ্ছে। তবে ওই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি চিহ্নিত করে দিতে পারেনি। এমনকি বাংলাদেশে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। তখন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বুঝতে পারেননি গুলশানে এত বড় হামলা হবে।

জিহাদের প্রকৃত সময় এখন না :  জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে দুটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। প্রথমত, ২০০৯ সালের শেষের দিকে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া তৎকালীন আমির সাইদুর রহমান মনে করতেন জিহাদের সময় এখনও আসেনি। অন্যদিকে সাইদুর রহমানের গ্রেপ্তারের পর তার সহচর বড় হুজুর মনে করা শুরু করেন, এখনই জিহাদের প্রকৃত সময়। আর এজন্য জেএমবি থেকে নব্য জেএমবি তৈরি হয়েছে।

এসব বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, বড় হুজুরের কাছ থেকে আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি তা খতিয়ে দেখছি। অনেক তথ্যের সত্যতাও পেয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন মাদ্রাসাভিত্তিক জঙ্গিদের ঘাঁটি নেই বললেই চলে। জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী ছোট ছোট নেতারা এখন বড় নেতা হচ্ছেন। তারা যেখানে থাকেন তাকে তারা সেইফ হাউজ বলেন। সেই সেইফ হাউজগুলোতে এখন জঙ্গিরা একত্র হন। তবে তাদের বড় ধরনের নাশকতা পরিচালনা করার সামর্থ্য নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকা থেকে নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা মো. আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। তিনি দিনাজপুরের রানীর বন্দর এলাকার একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় নিজ প্রয়োজনে তিনি বিকাশে এক ভক্তের পাঠানো টাকা আনতে দোকানে যাচ্ছিলেন। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মার্চ ২০১৭/নূর/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়