ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যমুনার চর এখন স্বপ্নের চারণভূমি

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ৯ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যমুনার চর এখন স্বপ্নের চারণভূমি

শাহরিয়ার সিফাত, টাঙ্গাইল : যমুনার জেগে ওঠা চরে এখন সবুজের সমারোহ। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারাসহ বেশ কয়েকটি চরাঞ্চলের মানুষরা এখন নানা ফসলের আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এ যেন এক নীরব কৃষি বিপ্লব। আর এরমধ্য দিয়েই সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন যমুনায় জেগে ওঠা চরাঞ্চলের কৃষক। যমুনার চর এখন স্বপ্নের চারণভূমি।

একদিকে ভাঙন, অন্যদিকে জেগে উঠছে নতুন চর। প্রবাহমান যমুনা নদীর ভাঙ্গা-গড়ার মাঝেই যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় নদী পাড়ের মানুষদের।

একসময় এই যমুনায় জেগে ওঠা চরের বিস্তীর্ণ জমি পতিত হয়ে পড়ে ছিল বছরের পর বছর। এখন সে চিত্রটি আর নেই। কোনো জমি পতিত পড়ে থাকার দিন ফুরিয়ে গেছে। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে কোনো জমি অনাবাদী পড়ে থাকার সুযোগ নেই।

গত কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধু সেতু ঘিরে যমুনা নদীর টাঙ্গাইল অংশে জেগে উঠেছে শত শত একর চর। দফায় দফায় যমুনার ভাঙা-গড়ার খেলায় পলি জমে উর্বর হয়ে ওঠা এ জমিতে ছিল কেবল নানান জাতের আগাছা।



কিন্তু নদীভাঙনে বাস্তুভিটা হারানো মানুষরা জেগে ওঠা নতুন চরের আগাছা ও জংলা পরিষ্কার করে আবাদী জমিতে পরিণত করেছেন। তাদের কঠোর শ্রমে সেই জমিতে এখন ‘সোনা’ ফলছে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ভাঙা-গড়ার খেলায় প্রায় ২০ বছর ধরে যমুনা নদীর পূর্ব তীরে চর জেগে উঠছে। প্রতি বছরই একটু একটু করে বাড়ছে চরের ব্যাপ্তি। নদীর উভয় পাড়ের অনেক পরিবার সময়ের প্রয়োজনে ও জীবিকার চাহিদায় এসে ঘর বেঁধেছেন নতুন জেগে ওঠা এই চরে। ধীরে ধীরে বাড়ছে এর জনবসতির ব্যাপ্তি।

ফলে একসময়ের অনাবাদী এ চরে বর্তমানে ধান, পাট, ভুট্টা, মরিচ, গম, মসুর, খেসারি, ছোলা, চীনা বাদাম, মিষ্টি আলু, কেশর, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, তিশি, কালোজিরা, আখ ও মাসকালাইসহ নানা ফসলের আবাদ চলছে। এ যেন বালুচরে শষ্য বিপ্লব।

কৃষি বিভাগের সহযোগিতা বা পরামর্শ ছাড়াই শুধুমাত্র নিজেদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই রবিশষ্যর আবাদ করছেন এখানকার কৃষকরা।

গত কয়েক বছরে ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কোনাবাড়ি ও চরতেতুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বিলীন হয়ে যাওয়া জমি আবার জেগে উঠেছে। আর জেগে ওঠা এ চরে নদীভাঙনে সর্বহারা মানুষরা গড়েছেন সম্ভাবনার নতুন সংসার।

যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে ঘুরে দেখা যায়, ধু-ধু বালুচরে কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো, আবার কোথাও বা দুরন্ত কিশোরদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার দৃশ্য। এখানে হচ্ছে সরিষা, ভুট্টা, মশুর-খেসারি ও মাসকালাই, বাদামসহ অন্তত ১০ ধরনের রবিশষ্যের আবাদ। সেই সঙ্গে আবাদ হচ্ছে বোরো ধান, পাট ও আখ।

স্থানীয়রা জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর দক্ষিণ দিকের ৫নং পিলার থেকে ২৩নং পিলার ও সেতুর উত্তরদিকের ৬নং পিলার থেকে ১৭নং পিলার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশাল আকারের চর জেগে উঠেছে। প্রতিবছর এই সেতুর নিচে ধান, বাদাম, বিভিন্ন প্রকার সবজিসহ নানা কৃষিপণ্যের চাষাবাদ হচ্ছে।

খানুরবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আকন্দ জানান, বর্ষা মৌসুমে এ চর পানির নীচে থাকার কারণে বালু মাটির ওপর পলির স্তর জমে। যা ফসল আবাদের জন্যে খুবই উর্বর হয়ে ওঠে। আর এই জমিতে আবাদ করেই তাদের জীবিকা চলছে।

জুলমত শেখ নামের অপর এক কৃষক জানান, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে জমির মালিকরা অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। সেখানে গবাদি পশুও চরানো হয়। পাশাপাশি চলে নানা শষ্য উৎপাদন।

কৃষকদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন শষ্যের আবাদ হলেও, স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত তাদের সহযোগিতা বা পরামর্শ দিতে আসেনি। মাঠ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার দেখা পাননি তারা। নিজেদের চেষ্টাতেই সফল তারা ।

তাদের দাবি, শুষ্ক মৌসুমে কৃষি বিভাগ যদি গভীর নলকূপ বা অন্যকোনো উপায়ে সেচের ব্যবস্থা করে তাহলে এখানের চাষ-বাসে অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠতো।

তবে যমুনা চরে ফসলের সমারোহ দেখে খুশি জেলার কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাশিম জানান, ভূঞাপুরের চরাঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। ওই এলাকার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় হয়ত স্থানীয় মাঠকর্মীরা চরাঞ্চলের এই দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন না। তবে এই এলাকার কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে আরও অধিক ফসল ফলানোর চিন্তা ভাবনা চলছে।



রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৯ এপ্রিল ২০১৭/শাহরিয়ার সিফাত/টিপু/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়