ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ভাল ফলন হলেও যশোরের পাটচাষিরা হতাশ

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১৭ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাল ফলন হলেও যশোরের পাটচাষিরা হতাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : চলতি বছর যশোরে পাটের ভাল ফলন হলেও চাষিরা ভাল দাম পাচ্ছেন না। ফলে সোনালী আঁশে সোনালী স্বপ্ন দেখা এসব কৃষক এখন হতাশ।

চাষিরা জানান, যশোরে পাটের দাম কম হওয়ায় তাদেরকে বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ধার দেনা করে চাষ করা পাট এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে গেছে। তাই কৃষক বাঁচাতে ইতিমধ্যে পাটের দাম মণ প্রতি তিন হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে সমাবেশ করেছে যশোরের একটি কৃষক সংগঠন।

কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মের কারণে প্রান্তিক কৃষকরা পাটের ন্যায্যমূল্য পচ্ছেন না। এছাড়া পাটকল বন্ধ থাকায় পাটের চাহিদাও কমে গেছে। তাই সোনালী আঁশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দ্রুত দেশের সব পাটকল চালু করতে হবে। বন্ধ করতে হবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম। আর মণপ্রতি পাটের মূল্য তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।’

যশোর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর যশোরে মোট ৩১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি পাট কাটা হয়ে গেছে। তবে খরচ বিচারে বাজারে পাটের দাম খুবই কম।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শমসের গাজী  বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে এবার পাট চাষ করেছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পাট কাটা শেষ হয়েছে। আশা করছি এবার আমি ৩০ মণ পাট পাবো। তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে পাটের দাম বর্তমানে বেশ কম। এই দামে পাট বিক্রি করলে সবমিলে ৩৬ হাজার টাকা পাবো। সেই হিসেবে পাট চাষ করে এবার প্রায় ৯ হাজার টাকা ক্ষতির হওয়ার আশঙ্কা করছি।’

একই কথা জানালেন ওই এলাকার পাট চাষি নজরুল ইসলাম ও আনসার ঢালী। তারা জানান, এক বিঘা (৪২ শতক) জমিতে পাট চাষ করতে চাষ বাবদ এক হাজার টাকা, বীজ ৬০০ টাকা, নিড়ানি ২০০০ টাকা, সেচ বাবদ চার হাজার টাকা, সার এক হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া চাষকৃত পাট কাটতে খরচ হচ্ছে বিঘা প্রতি আরো পাঁচ হাজার টাকা। আর জমির লিজ আরো তিন হাজার টাকা। সব মিলে এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ ১৭ হাজার ১০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট পাওয়া যাবে ১০ মণ। অর্থাৎ মণ প্রতি উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৭১০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে ১২০০ টাকা দরে এই পাট বিক্রি করে তারা পাচ্ছেন ১২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বিঘা প্রতি ক্ষতি হচ্ছে ৫১০০ টাকা।

কৃষক হাসান খাঁ বলেন, ‘কৃষি ঋণ আর দাদন নিয়ে চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। গত বছর প্রথক দিকে পাটে দাম ভাল ছিল। ভেবেছিলাম এ বারও দাম পাব। কিন্তু পাটের দাম এবার কম। ১২০০ টাকায় পাট বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

তিনি জানান, বাজার দর থেকেও ১০০টাকা কমে দাদন মালিককে পাট দিতে হবে।

যশোর কৃষি অফিস জানায়, গত বছর যশোরে পাট চাষ হয় ৩০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪০০ হেক্টর। এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ভাল ফলন হলে আট মণ পাট হয়। আর বিঘা প্রতি গড়ে খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার টাকা। সেই হিসেবে মণ প্রতি পাটের উৎপাদন খরচ ২২৫০ টাকা।

কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোরের সভাপতি ডা. আব্দুল খালেক লস্কর বলেন, ‘দেশের অনেকগুলো পাটকল বন্ধ থাকায় পাটের দামে প্রভাব পড়েছে। এজন্য আমরা দ্রুত দেশের সব পাটকল চালু ও প্রতিমণ পাটের সর্বনিম্ন মূল্য তিন হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করেছি। এই দাবিতে গত ৩১ জুলাই শহরে মিছিল সমাবেশ করার পাশাপাশি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি।’




রাইজিংবিডি/যশোর/১৭ আগস্ট ২০১৭/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়