চলছে না গাড়ির চাকা, মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ
রাইজিংবিডি ডেস্ক : পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। ফলে অচল হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। সাধারণ মানুষ পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে।
সংসদে সদ্য পাস হওয়া পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা টানা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ধর্মঘট শুরু হয়েছে রোববার সকাল ৬টা থেকে। চলবে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত।
রাইজিংবিডির চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পরিবহন ধর্মঘটের নামে সড়কে নেমে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্যের কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ভর্তি পরীক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। রিকশা ছাড়া নগরীতে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে দিচ্ছে না পরিবহন শ্রমিকরা। চলছে না দূর পাল্লার কোনো পরিবহনও। সড়কে গণপরিবহন না থাকায় সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কর্মস্থলগামী চাকরিজীবীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকাল থেকে চট্টগ্রামে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
রোববার সকাল থেকে নগরীর বহদ্দার হাট, দুই নম্বর গেট, জিইসি, আন্দরকিল্লা, আগ্রাবাদ, দামপাড়া, সিইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শত শত মানুষ যানবাহন না পেয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। কোথাও কোনো গণপরিবহন চালাতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা। সিএনজি অটোরিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছে। অনেককে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে কিংবা গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলমান থাকায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। শত শত শিক্ষার্থীকে নগরী থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেখা গেছে।
রাইজিংবিডির কুমিল্লা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল জানান, কুমিল্লায় জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে পালিত হচ্ছে পরিবহন ধর্মঘট।
রোববার সকালে কুমিল্লার আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে যান চলাচলে বাধা দেন। এ সময় মহাসড়কের ওপর বসে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আট দফা দাবি মানা না হলে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সড়ক অচল করে রাখা হবে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা, চকবাজার ও টমসন ব্রিজ বাস টর্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন। সকাল থেকেইে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফাঁকা রয়েছে। এদিকে, যানবাহন না পেয়ে মহাসড়ক জুড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাইজিংবিডির যশোর প্রতিনিধি বি এম ফারুক জানান, সারা দেশের সাথে একযোগে যশোরাঞ্চলেও চলছে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি। কর্মবিরতি সফল করতে ভোর ৬টা থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা সকল প্রকার যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। এজন্য কর্মবিরতির শুরুতেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হওয়া সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা বেনাপোল বন্দরে আটকে পড়েছেন।
শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।
রাইজিংবিডির গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি বাদল সাহা জানান, ধর্মঘটের প্রথম দিনে গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ ১৬ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রোববার সকাল ৬টা থেকে জেলার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকেরা। ফলে গোপালগঞ্জের সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, মাদারীপুরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ধর্মঘটের ফলে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিকল্প উপায়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এ সুযোগে রিকশা, অটোরিকশায় নেওয়া হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া। আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।
রাইজিংবিডির টাঙ্গাইলের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহরিয়ার সিফাত জানান, সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘন্টা কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে টাঙ্গাইলে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
রোববার সকাল থেকেই জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলো থেকে দূর পাল্লা বা আন্তঃজেলার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। একদিকে, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকটাই অচল অবস্থায় রয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। অন্যদিকে, বাস না চলায় যাত্রীদের ভোগান্তিকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরা। গণপবিহনের অভাবে যাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছেন রেল স্টেশনে।
রাইজিংবিডির ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা তানভীর হাসান তানু জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে ঠাকুরগাঁওয়ে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক বন্ধ রয়েছে। এতে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তঃজেলা টার্মিনালগুলো থেকে কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। জেলা শহর থেকে গণপরিবহনের ঢাকা যাত্রাও বন্ধ রয়েছে। বিআরটিসির বাস পর্যন্ত চলতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা। বেশির ভাগ যাত্রীকে নির্ভর করতে হচ্ছে অটোরিকশা বা পায়ের ওপর। প্রধান সড়কগুলোতে কিছু রিকশা চলাচল করলেও অফিসগামী যাত্রী আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে প্রতিটি মোড়ে।
এদিকে, পরিবহন শ্রমিকরা এই কর্মসূচিকে কর্মবিরতি বললেও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট তারা অন্য যানবাহন চলাচলেও বাধা সৃষ্টি করছেন।
ঠাকুরগাঁও বিআরটিসি কাউন্টার থেকে জানানো হয়, তাদের বাসগুলো আটকে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিক্ষোভরত পরিবহন শ্রমিকরা এসব বাসের চালক ও সহকারীদের লাঞ্চিত করছে।
শ্রমিকদের আট দফা দাবি হচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে, শ্রমিকদের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না, সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে, ওয়ে স্কেলে (ট্রাক ওজন স্কেল) জরিমানা কমানোসহ শাস্তি বাতিল করতে হবে, সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ অক্টোবর ২০১৮/সাইফুল/এনএ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন