ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঘুরে এলাম শান্তিনিকেতন

রাজীব পাল রনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৬ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘুরে এলাম শান্তিনিকেতন

শান্তিনিকেতন

রাজীব পাল রনী
হাওড়া রেলস্টেশন থেকে এক সকালে শুরু হলো আমাদের শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্যে যাত্রা। কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনের দূরত্ব ১৫৯ কিলোমিটার। পথের দুপাশে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে ৩ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলাম বুঝতেই পারলাম না। স্টেশন থেকে রিকশায় শান্তিনিকেতন ২০ মিনিটের পথ। কলাভবনের সামনে এসে আমরা রিকশা থেকে নামলাম। চোখে পড়ল রামকিংকরের বিখ্যাত দুটি ভাস্কর্য। একটি হলো, দুই সাঁওতাল রমণী সন্তান নিয়ে কারখানায় কাজ করতে যাচ্ছেন। অপরটি সাঁওতাল শ্রমিক পরিবারের দেশান্তরে যাত্রা।


কলাভবনের দরজা দিয়ে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলাম। লাল কাঁকড় বিছানো পথ। দুই পাশে সবুজের সমারোহ। ১৮৬৩ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে নির্জনে ঈশ্বরের উপাসনা করবেন বলে শান্তিনিকেতন তৈরি করেছিলেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম এসেছেন ১২ বছর বয়সে। ১৯০১ সালের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ‘ব্রাহ্মচর্যাশ্রম’ নাম নিয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। দিনটির স্মরণে আজও শান্তিনিকেতনে প্রতি বছর পৌষ মেলা হয়। ঋতুরাজ বসন্তে শান্তিনিকেতনে আরেকটি উৎসব হয়- বসন্ত উৎসব।


শান্তিনিকেতন মূলত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আশ্রম। ১৯২১ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুর গড়ালে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ঘুরে উত্তরায়ন কমপ্লেক্সে চলে এলাম আমরা। ভিতরে কড়া নিরাপত্তা। নিয়ম মেনে ৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমে বিচিত্রা ভবনে ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেলাম। এটি কবিগুরুর স্মৃতি সংবলিত সমৃদ্ধ জাদুঘর। জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথের ফুলদানি, তার নির্মিত কাঠের বাক্স, জাপানের উপহার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডি.লিট প্রদানকালে কবির ব্যবহৃত পোশাক, শিশুকাল থেকে পৌঢ়ত্ব পর্যন্ত কবির নানা বয়সের ছবি, গুরুত্বপূর্ণ দলিল, কবির চিত্রকর্ম, রাষ্ট্রপ্রধানদের দেয়া উপহার সামগ্রী, নোবেল পুরস্কার (প্রতিকৃতি) দেখে অভিভূত হলাম। এরপর চলে এলাম উদয়নে। এটি কবিগুরুর বাসভবন। এই ভবন তৈরিতে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের বিশেষ ভূমিকা ছিল। এখানে বসেই কবি আশ্রমবাসী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কবিতা পাঠ, নাটক ও জলসার আয়োজন করতেন।

বিশ্রাম শেষে বন্ধুরা মিলে হাঁটতে হাঁটতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম সবাই। বর্তমানে এ বাড়িতে কেউ থাকেন না। শান্তিনিকেতন দেখতে এসে বুঝলাম এখানকার প্রকৃতি এবং পরিবেশ সাদামাটা জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়। কোনো উঁচু দালান নেই, চারদিক ঘন সবুজ। বিকাল শেষ হতে চলল। নীল আকাশে রক্তিম আভা, হেলে পড়েছে সূর্য। বিদায়ের সব আয়োজন পূর্ণ। শান্তিনিকেতন থেকে সন্ধ্যার ট্রেনে কলকাতা রওনা হলাম। ট্রেনে হঠাৎ মনে পড়ল, মৃত্যুর কিছুদিন আগে কবি এই শান্তিনিকেতন সম্পর্কে লিখেছিলেন- ‘যখন রব না আমি/মর্ত্যকায়ায়/তখন স্মরিতে যদি হয় মন/তবে তুমি এসো হেথা নিভূত ছায়ায়/যেথা এই চৈত্রের শালবন।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অগাস্ট ২০১৪/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়