ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরল জাপান

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১১ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরল জাপান

সেনদাই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আবারও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরল বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তির দেশ জাপান। ২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা পরমাণুশক্তি কেন্দ্র বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পর এই প্রথম পারমাণবিকচুল্লি চালু করল দেশটি।

বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জাপানের সব পরমাণুশক্তি কেন্দ্র বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। প্রায় পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর নতুন করে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলো একে একে চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে জাপান। তবে পরমাণুশক্তি উৎপাদনে সরকারের নিরাপত্তাব্যবস্থায় আস্থা নেই দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষের। তারা আর কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চায় না। পরমাণুশক্তি উৎপাদনের বিরোধিতা করে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করে আসছে বেশির ভাগ জাপানি।

জনগণের বিরোধিতার মুখেই মঙ্গলবার সকাল থেকে চালু করা হয়েছে সেনদাই পরমাণু শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের ১ নম্বর পারমাণবিকচুল্লি। এর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে কাইশু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার নামের কোম্পানি।

পরমাণুচুল্লি চালুর বিরোধিতা করে মঙ্গলবার সকালে সেনদাই পরমাণুশক্তি কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। প্রায় একই সময়ে সেনদাই থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো অাবের বাসভবনের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে জাপানিরা।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন করে যে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে আর কোনো দিনও ফুকুশিমার মতো বিপর্যয় ঘটবে না। কিন্তু ফুকুশিমার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে জনগণ সরকারের এই প্রতিশ্রুতিতে কান দিচ্ছে না।

 

জাপানের মোট ২৫টি পরমাণু কেন্দ্র ফের চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। কিন্তু অধিকাংশ পরমাণু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের আপত্তি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

সেনদাই পারমাণবিকচুল্লি চালুর আগে এর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কোম্পানি কাইশু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, নিরাপত্তা সবার আগে। নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফুকুশিমার মতো বিপর্যয় আর কখনো ফিরে আসবে না জাপানে।

কাইশুর তথ্য অনুযায়ী, জাপানের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পরমাণুচুল্লি চালু হয়েছে। চুল্লিটি পুরোপুরিভাবে কার্যকর হতে ২৪ ঘণ্টা লেগে যাবে। আশা করা হচ্ছে, শুক্রবার নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে এটি। আগামী মাস থেকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে এই পরমাণুচুল্লি।

এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী অাবে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সেনদাই পরমাণুশক্তি কেন্দ্র। এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে।

২০১১ সালের মার্চ মাসে শক্তিশালী ভূমিকম্পে জাপানের উপকূলে সুনামির সৃষ্টি হয়, যাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ফুকুশিমা পরমাণুশক্তি কেন্দ্র। পরমাণুচুল্লি গলে পানির সঙ্গে মিশে যায়। এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে এখনো ক্ষতিকর পদার্থের বিকিরণ হচ্ছে। ক্ষতিকর এসব রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে ক্যানসারসহ জটিল রোগের সৃষ্টি করে। মাটি, ফসল এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্পদও রাসায়নিক ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সুনামিতে জাপানে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ নিহত হয় এবং এখনো আড়াই হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।


 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ আগস্ট ২০১৫/রাসেল পারভেজ/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়