ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কৃতজ্ঞ মুহিতুলের প্রতি শ্রদ্ধা

মুশফিকুর রহমান বাদল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২১, ২৭ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃতজ্ঞ মুহিতুলের প্রতি শ্রদ্ধা

মুশফিকুর রহমান বাদল : বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী এ এফ এম  মুহিতুল ইসলাম মাত্র ৬৩ বছর বয়সে মারা গেলেন এবং কাকতালীয়ভাবে প্রিয় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু মাস এই আগস্টেই।

 

মুহিতুল ইসলাম ছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি নিজ চোখে ভয়ার্ত রাতে নিরুপায় হয়ে দেখেছিলেন একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনা অফিসার কী নির্দয়ভাবে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারকে মেরে ফেলেছিল।

 

এই সাহসী কৃতজ্ঞ মানুষটির কারণেই শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয় এবং রায় কার্যকর দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল দেশবাসীর। এ মানুষটির সাহসী ভূমিকার কারণেই আজ আমরা বাঙালিরা অন্তত নিজেদের কিছুটা হলেও পাপমুক্ত হয়ে ভারমুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনিই সেই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাদী হয়েছিলেন বলেই আজ আমরা পিতৃহন্তারকের অভিশাপ থেকে কিছুটা হলেও দায়মুক্ত।

 

সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে তিনিও হয়তো মারা যেতে পারতেন। ঘাতকদের নির্মম বুলেটে তার মৃত্যুও সেই রাতে অবধারিত ছিল। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এজন্য যে, অন্তত তার কারণে হলেও যেন পুরো জাতি তার পিতার হত্যাকাণ্ডের দায়ভার থেকে মুক্তি পায়। যেমন করে কাকতালীয়ভাবেই সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রেখেছেন তার দুই সুযোগ্য মেয়েকে। যাদের বেঁচে থাকা আর নেতৃত্বের কারণেই জাতির পিতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে।

 

কিন্তু প্রকৃতির কি ইচ্ছা, সেই আগস্টের শোকের মাসেই জাতির পিতার বিশিষ্ট সহচর এম  মুহিতুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন! বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট ২০১৬) বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার চলাকালে দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাতে হয়েছে মামলার বাদী ও ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ৩২ নম্বরে উপস্থিত মুহিতুল ইসলামকে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ পেয়েই মামলা করেছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি একবার চেষ্টা করেছিলেন মামলা করার। তৎকালীন সরকারের অনুমতি ছাড়াই লালবাগ থানায় মামলাটি করতে গিয়েছিলেন তিনি। এজাহারের বিবরণ শুনে সে সময়ের ডিউটি অফিসার তার গালে কষে এক চড় বসিয়ে বলেছিলেন, ‘এ মামলার কারণে তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি।’ থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) হাতের সেইদিনে সেই চড়ের কথা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভুলতে পারেননি মুহিতুল ইসলাম।

 

দীর্ঘদিন পর হলেও বিচার সুসম্পন্ন হয়েছে, রায়ও বেশির ভাগ কার্যকর হয়েছে। যে চাপা কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়ে তিনি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছেন, মামলার বিচার সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি তার ওপর অর্পিত বিবেকি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন।  সমস্ত দায়ভার চুকিয়ে এবার হয়তো তার জীবন থেকেই অবসর নেওয়ার সময় হয়েছিল। তিনি তার দায়িত্ব শেষ করে ফের বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেতে যেন চলে গেলেন পরপারে। তার প্রিয় খেলার সাথী সেদিনে ছোট্ট মাসুম শেখ রাসেলের কাছে।

 

আমরা তাই সাহসী আর কৃতজ্ঞ মুহিতুল ইসলামের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মহান রাব্বুল আলামিন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন।

 

লেখক : সংবাদকর্মী


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৬/মুশফিক/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়