ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অরণ্যের জন্য অরণ্যে রোদন || বিপ্রদাশ বড়ুয়া

বিপ্রদাশ বড়ুয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৫ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অরণ্যের জন্য অরণ্যে রোদন || বিপ্রদাশ বড়ুয়া

প্রকৃতির উপর গায়ের জোরে প্রভুত্ব করতে গিয়ে মানুষ তার ভুল বুঝতে পেরেছে মাত্র কিছুকাল আগে। এজন্য সচেতন মানুষ এখন প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ শুরু করেছে। মায়ের মতো সমীহ ও ভালোবাসা, বোনের মতো আদর-সোহাগ। কেন? এসব কথার উত্তর আছে আমার বিভিন্ন বইয়ে। সব সময় বইগুলোতে সমস্যা ও সমাধান বলা হয়েছে তা নয়, সৌন্দর্য তুলে ধরার মধ্যে এই সত্য আপনা-আপনি উঠে এসেছে। আমার গল্প-উপন্যাসেও প্রকৃতি তার অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৌন্দর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। মানব মনের অপার রহস্য ও প্রকৃতি তো এক অর্থে ভাই-বোন। আদিবাসীরা প্রকৃতিকে এভাবে মা-বাবা, ভাই ও বোনের মতো দেখে। তাদের কাছ থেকে আমি এই সত্য খুঁজে পেয়েছি। তারা নিজেদের বাঁচার তাগিদে প্রকৃতি থেকে খাদ্য অন্বেষণ করে, পশু-পাখি বধ করে, গাছপালা কেটে ব্যবহার করে কিন্তু কখনও উজাড় করে বা অনর্থক ধ্বংস করে নয়। এমনকি এই ভাগাভাগির ব্যাপারে তাদের সামাজিক বা গোত্রের বিধি-বিধান মেনে চলার দৃঢ় প্রবণতা রয়েছে। ফলে বন ও পশু-পাখি হয়ে আছে তাদের সমাজ ও গোষ্ঠীর অচ্ছেদ্য অংশ।

আজকের মানুষ কৃষিজ ফসলের অচ্ছেদ্য অংশ নদী-খাল-বিল-পুকুর অবিবেচকের মতো শাসন করছে। অথচ সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষ জেনে গেছে নদী তাদের পরম বন্ধু, সভ্যতার অচ্ছেদ্য সঙ্গী। পৃথিবীর সব আদি সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক। প্রাচীন কাল থেকে তাই মানুষ নদীর নাব্যতা নিয়ে চিন্তা করেছে। আস্তে আস্তে প্রাকৃতিকভাবে নদী নাব্যতা হারাতে বসলে বা গতি পরিবর্তন করতে থাকলে মানুষ গভীরভাবে লক্ষ করেছে। এমনকি মাঝে মাঝে নদীর তলদেশ খননের কথাও ভেবেছে। তার নমুনা পাওয়া যায় বাংলা-ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েকশ বছর আগে থেকে নদী খননের প্রক্রিয়ায়। কিন্তু নদীর মোহনার দিকে গতি পরিবর্তনের চিন্তা সবসময় বর্জন করেছে। পাহাড়-পর্বত ছেড়ে নদী সমতল ভূমিতে প্রবেশ করলে তাকে বলে নদীর প্রৌঢ় ও বৃদ্ধাবস্থা। বৃদ্ধাবস্থায় মোহনার নদী শাসন করা খুব কঠিন। এমনকি পাহাড়ে যৌবনাবস্থায়ও তাকে বাঁধ দিয়ে শাসন করা কঠিন। কর্ণফুলী নদী কাপ্তাই অঞ্চলে যৌবনাবস্থায় বাঁধ দিয়ে শাসন করার ফলে সেখানকার স্থানীয় মানুষের যে অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে তা আজ প্রমাণিত। সেখানকার অধিবাসীদের চরম মূল্যের বিনিময়ে সমতল এলাকার দেশবাসী বিদ্যুৎ-সেবা ভোগ করছে। আবার নদীতে যেকোনো বাঁধের ফলে উজানের মানুষ লাভবান হলেও ভাটি অঞ্চলের মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে। অথবা উজানের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভাটি অঞ্চলের মানুষও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত।

ঢাকা নগরীর গভীর নলকূপ থেকে খাবার পানি উত্তোলন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত যে, এর ফলে ঢাকা নগরীর ধ্বংসের মুখে ছুটে চলেছে। আবার সারাদেশে কৃষিকাজ সচল রাখার জন্য গভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলনও আসন্ন বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ বাংলাদেশের নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহার করা যায় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অর্থাৎ আমরা ভাবী বংশধরের জন্য মাটির নিচের পানি থেকে গ্যাস কিছুই সামান্য পরিমাণও সঞ্চিত রেখে যেতে প্রস্তুত নই। নদী ও হাওরে পানি সংরক্ষণ করে যে-কাজ করা যায় তা না করে আমরা মাটির নিচের পানি ব্যবহার করছি। শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের মাটির নিচের পানির স্তর বিপজ্জনক পর্যায়ে নিচে নেমে যায় এই সত্য বিশেষজ্ঞরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও আমাদের সংবিত ফিরে আসছে না। ব্যাংককের মতো ঢাকা নগরীর গভীর নলকূপ থেকে পানি আহরণও এভাবে ঢাকাকে বিপন্ন করে তুলছে।

এই প্রসঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলে গ্যাস অন্বেষণের কথা গভীরভাবে বিবেচনা করার প্রশ্ন উঠেছে। সুন্দরবনে গ্যাস অন্বেষণ করতে গেলে দেশের একমাত্র অরণ্যে গভীরভাবে বিরূপ প্রভাব পড়বে জানা কথা। অথচ এখন সারা দেশে যে-পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার না করে সুন্দরবনকে তার আওতায় কেন আনা? পৃথিবীর বহু দেশ নিজের সম্পদ কীভাবে রক্ষা করা যায়, ভাবী বংশধরের জন্য কত বেশি জমা রেখে যাওয়া যায়, সেই পরিকল্পনা যতদূর সম্ভব করে রাখতে তৎপর। এই একটি কারণ ছাড়াও সামগ্রিকভাবে সুন্দরবনকে রক্ষা করাও পরিকল্পনার আওতায় আনা উচিত। গ্যাস আহরণ করতে গিয়ে একমাত্র অরণ্য ধ্বংস করলে বিরাট পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে তা বুঝতে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন পড়ে না। সমগ্র দেশের শতকরা ৮ ভাগ অরণ্যের মধ্যে সুন্দরবন একাই হয়তো ৫-৬ ভাগ হবে।

এমনিতেই সুন্দরবন দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আগে সুন্দরবনের এলাকা ছিল পটুয়াখালির দক্ষিণাঞ্চল থেকে। এখন পশ্চিম দিকে সরতে সরতে বরগুণা পেরিয়ে বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরার দক্ষিণাঞ্চলে গিয়ে ঠেকেছে। বরগুণা ও বাগেরহাটের হরিণঘাটা নদী এখন সুন্দরবনের পূর্ব সীমান্ত। এই নদী পার হয়ে মানুষের ক্ষমাহীন হন্তারক হাত এরই মধ্যে সেখানে যেতে শুরু করেছে। তার উপর সুন্দরবনের উত্তরাঞ্চল মানুষের অনবরত অত্যাচারে সংকুচিত হচ্ছে, অর্থাৎ সুন্দরবন ক্রমশ দক্ষিণ দিকে সরে যাচ্ছে। এই বিপদ ও বিপর্যয় সম্পর্কে প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয় কি একটু ভাববে না? রাজনৈতিক নেতা ও সিভিল প্রশাসন বিভাগের সচিবদের কি এতই নিরক্ষর ভাবব আমরা?

দুঃখ-দারিদ্র্য-হতাশার কথা ভাবতে ভাবতে আমাদের চিন্তায়ও এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য গাছপালার সৌন্দর্য ও সুষমার কাছে আমি আশ্রয় খুঁজি। রাষ্ট্র ও সমাজ যখন বিরুদ্ধাচারণ করে তখন একমাত্র পথ সমবেত আন্দোলন ও দ্রোহ রচনা। অন্য একটি পথ হলো, উটের মতো বালিতে মুখ গুঁজে আসন্ন ঝড় থেকে রক্ষা পাওয়া। উট মুখ বুজে ঝড় চলে যাওয়ার অপেক্ষায় কোনো মতে আত্মরক্ষা করে।

গাছপালার সৌকর্য ও সৌন্দর্য রচনাও আমার সে রকম একটি প্রয়াস। তারপরও আমি ভুলতে পারি না অপরিকল্পিতভাবে গাছ রচনার জন্য অপচয়ের দায়ভাগের কথা। ঢাকার রাস্তা অনবরত বড়-ছোট ও ছোট-বড় করার খেলা আমাদের চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে। শত শত কোটি টাকা এই খেলায় অপচয় হয়ে যাচ্ছে। এজন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। ঢাকার সড়কদ্বীপে কলাবতী আদর্শ গাছ। সারা বছর কলাবতী গাছে ফুল ফোটে এবং বৈচিত্র্যময় তার রঙ। এমনকি ছিটযুক্ত কলাবতীও প্রচুর পাওয়া যায়। খুব কষ্টসহিষ্ণু, অল্প পরিচর্যায় ফুল পাওয়া যায়। কিন্তু এ নিয়ে বিশদ কোনো পরিকল্পনা দেখি না।

ঢাকা নগরীতে যেখানে-সেখানে বড় বড় শপিং মল ও বহুতল মার্কেট অনবরত তৈরি হচ্ছে। এসব মার্কেটের প্রয়োজন বেশি নাকি বসতবাড়ি ও শিল্পকারখানা বেশি দরকারী? ঢাকার জন্য কয়টি মার্কেট হলে চাহিদা মিটবে তার খতিয়ান কি সরকারের আছে? এসব দোকান দেওয়ার জন্য উৎপাদন দেশে হচ্ছে কি? নাকি ১৬ কোটি মানুষের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যদ্রব্যের বাজার বসানোর জন্য সরকার মেধা খরচ করছে। ঢাকা শহরে আর কত হকার-মার্কেট প্রয়োজন?

সম্প্রতি ভেজাল ও নকল দ্রব্য প্রতিরোধের জন্য সরকারি উদ্যোগে অভিযান শুরু হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে বড় বড় কোম্পানি থেকে ছোট ছোট কোম্পানির সব জিনিসপত্রের নকল পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ভয়াবহ পর্যায়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকে গেছে। খাদ্যদ্রব্য থেকে ওষুধ, পানি থেকে কোমল পানীয়, মিষ্টি থেকে নুন, শিল্পজাত ক্ষুদ্রপণ্য থেকে তেল, প্রসাধনী থেকে মুড়ি বা জর্দা এমন কিছু নেই খাঁটি পাওয়া যায়। খাঁটি জিনিস থাকলেও নকলের ভিড়ে চিনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। নামী-দামী কোম্পানির বিস্কুটে পর্যন্ত উৎপাদনের তারিখ ও ব্যবহার অযোগ্য হওয়ার তারিখ নেই, অথবা দুয়ের একটি আছে অন্যটি নেই।

আমাদের দেশে সেলুন বা শপিং মল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু কোনো একটি ওষুধের দোকান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। বহু ওষুধ আছে তার গায়ে লেখা আছে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে। ঢাকায় গ্রীষ্মকালে ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করে। দেশজুড়ে প্রায় একই অবস্থা। তাহলে অধিকাংশ ওষুধের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানি, আপনারা বলবেন তাহলে আমরা বেঁচে আছি কী করে? হয়তো ওষুধ খাচ্ছি এই বিশ্বাসের জোরে, অথবা মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বলে, অথবা রোগে ভুগতে ভুগতে স্বাভাবিকভাবে সাময়িক ভালো হয়ে ওঠার জীবধর্মে, অথবা ঈশ্বর নামক করুণাময়ের অলৌকিক হস্তক্ষেপে, কঠিন রোগ হলে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করে! অথবা আমরা বেঁচে আছি এবং বেঁচে যাচ্ছি সেটিই বিস্ময়ের ব্যাপার। অথবা আমরা সবাই হয়তো মৃত, মরে বেঁচে আছি। শুনতে খুব গোলমেলে মনে হচ্ছে?

এতকিছুর পরও জানালা দিয়ে আকাশ দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে একটি মাকড়সার জাল হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে। আমার জানালায় এসে আটকে যাবে ভাবতে ভাবতে পেরিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তিনীর সুন্দর বাড়ির কাছে। অথবা তার চোখের উপর দিয়ে পাশের অবৈধ ছয় তলা ভবনের আড়ালে পচা পুকুরে, যেখানে উন্নত জাতের সরপুঁটি বা পাঙাশের চাষ হচ্ছে, যার পানি কারখানার বর্জ্য পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো রং ধারণ করেছে। আমি জানি না বাজার থেকে ওই মাছ বা তেমন পুকুরের মাছ আমার পাতে উঠে আসছে কিনা। উন্নত জাতের মাছ বা পেয়ারা গাছের চারা ইত্যাদি হরদম আমাদের দেশে চলে আসছে। চাষও হচ্ছে। এগুলোর জন্য প্রচুর যত্ন দরকার। দেশী জাতের পেয়ারা আমরা সে রকম যত্ন করি না, মাছও না। কেন? এজন্যও বিপর্যয় নেমে আসবে।

এভাবে দেশী জাতের ফল, মাছ, ধান, সবজি হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক জাতের পশুপাখি, মাছ, ধান সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে। দেশের আদিবাসীদের উপর নিগ্রহ চালিয়ে ঘরছাড়া করতে ব্যস্ত আমরা। ইকোপল্লীর নামে, গ্যাস উত্তোলনের নামে যদি মানুষ ও বনজঙ্গল হারাতে হয় সেই পরিকল্পনাকে ধিক। সেই পরিকল্পনা ও চিন্তা কখনও মঙ্গল আনতে পারে না।

আমার ধিক্কারে কোনো কাজ হবে না জানি। কিন্তু আদিবাসী হোক সংখ্যালঘু বা পশুপাখি হোক তারাই যদি বিপন্ন হয়ে যায় তাহলে সেই পরিকল্পনার কী অর্থ দাঁড়ায়? এই অর্থ কি আমরা করতে পারি যে তাদের শেষ করার জন্যই এই পরিকল্পনা?

ব্যাঙ রপ্তানির নামে সোনা ব্যাঙ শেষ হয়ে গেল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আদিবাসী প্রায় উচ্ছেদ হয়ে গেল।

গারো, খাসিয়া, সাঁওতাল, রাখাইন, রাজবংশী সাফ হয়ে গেল। স্বদেশে এখন তারা উদ্বাস্তু অথবা পরবাসী!

ময়ূর, বানর, গয়াল, নীলগাই, ভোঁদর, শেয়াল, শকুন, বাজ, হরিয়াল হারিয়ে গেল!

বিনি ধান নেই!

চিতল, দারকিনা, মহাশোল নেই।

রসালো সেই টমেটো নেই।

খাঁটি দুধ, ঘি, মাখন, তেল নেই।

বাসমতি, কাটারিভোগ, দাদখানি, গোপালভোগ, বিরই, চিনিগুঁড়া চাল আস্তে আস্তে উধাও।

ছাতকের কমলা নেই। পদ্মার ইলিশও শেষ হওয়ার পথে।

হাইকোর্টের লেকটি কোথায়? নেই।

পাটশিল্প? ধ্বংস হয়ে গেছে।

শাহবাগের বিখ্যাত কৃষ্ণচূড়া বীথি? জানি না।

রেসকোর্সের পুকুর, আর্ট কলেজের পুকুরের পানি কোথায় গেল? জানি না।

ঢাকার বিখ্যাত মসলিন? সে আবার কি?

সূর্যপুরি, লেংরা, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ কোথায়? উন্নত জাতের আমের কাছে তাদের ফলন নাকি কিছু না। তাই কেউ চাষ করে না?

মা কোথায়?

ছোট পরিবারের নামে মা গ্রামের বাড়িতে একা আছে। বাবা মারা যাওয়ার পর মাও মরে যাবে। ঢাকা শহরে খবর দেওয়ার কেউ নেই বলে গ্রামেই তার দাফন হবে বা চিতার আগুনে ভস্ম হয়ে যাবে।

প্রেমিকা অমিতা? সে গতকাল গ্রামে গিয়েছিল। কোনো খরব নেই কেন?

সে তো মোহাম্মদ আফজালের জবর দখল প্রেমে এখন অসহায়। গতকাল থেকে।

ছেলে?

সে তো চাকরি নিয়ে আমেরিকার ডেট্রয়টে। আমেরিকান সহকর্মী সুন্দরীকে বিয়ে করে সেখানে ঘর কিনেছে। দেশে জনসংখ্যা এমন বেড়ে চলছে আর অর্থনৈতিক এত টানাপোড়েন যে ‘এক সন্তানই’ এখন অবলম্বন। সেই একমাত্র ছেলের বংশধর আমেরিকায় থেকে বাংলা ভুলে যাবে। দেশে আসবে ভ্রমণে। এক সন্তান হলে মামা, মাসি, খালা, রাঙা আপা, রাঙাদি, ফুলভাবী, মেজ-সেজ-ছোট মামা-মাসী কাকে কে ডাকবে?

তারপর? তারপর??

তার আর পর কী করে থাকবে? সবকিছুর সুখকর তারপর থাকে না।

ফুলগুলো কোথায় গেল? পারুল, বেলি, মালতী, চামেলি?

তাহলে ফুল খোঁজার অবসর হয়েছে? অবসর যদি হয়ে থাকে, ভালোবাসার অবসর যদি বের করা যায় তাহলে ফুল, গাছ, পাখি, অরণ্য, নীলিমা ও অমিতা ঠিক তোমার বা আপনার থাকবে। অমিতা, অনিতা, অর্পিতা, আফসারুন, আঞ্জুমান, আয়লা বা লায়লা আপনাকে খুঁজে নেবে, আপনিও খুঁজে পাবেন। কারণ মানুষও প্রকৃতির অংশ। আজ মানুষ তার জন্ম অর্থহীন করে তুলেছে। মানুষের জন্মই বৃথা ভাবা হচ্ছে। হতাশায় জর্জরিত হয়ে মানুষ ভাবছে এই পৃথিবীতে একবারই যদি জন্ম নিতে হয় তাহলে এমন সুন্দর পৃথিবীতে একবার জন্ম নেওয়ার কী মানে? একবারও জন্ম না নিলে কী এমন ক্ষতিবৃদ্ধি হত? এভাবে নিঃসঙ্গ মরার কোনো অর্থ হয় না।

জাঁ পল সার্ত্র বলেই দিয়েছেন, এই পৃথিবীতে মানুষের জন্ম নেওয়ার কোনো দরকারই ছিল না।

আপনি কী বলেন? পাশ্চাত্য জীবন-জটিলতা এসে পড়েছে! ঘাড়ে নিঃশ্বাস পড়ছে! গাছ কেটে এখন বনবিভাগ অফিসের সামনে ফোয়ারা বানায়। মৎস্য বিভাগ পুকুর ভরাট করে গাড়ির পার্ক বানায়।

হে বোধিসিক্ত পাঠিকা ও পাঠক, আপনি কোন পথ নেবেন?

প্রকৃতি নাকি মানুষ?

মনে রাখবেন মানুষ প্রকৃতির অংশ। মানুষের অংশ প্রকৃতি নয়।

তাহলে প্রকৃতির সন্তান মানুষকে চাই? আপনার শুভ বুদ্ধির জয় হোক।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জুন ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়