ছয় কবির পদাবলি
অলঙ্করণ : অপূর্ব খন্দকার
অবশেষে || আসাদ চৌধুরী
তৃষ্ণার্ত আকাঙ্ক্ষা তার
কালো গর্তগুলো নেভাতে-নেভাতে
আলো ঢেলে ঢেলে
সামনে চলেছে।
মঞ্জিল কোথায়?
গন্তব্যের স্পষ্ট দাগ ঝাপসা এখন
গোয়ার মহিষ লণ্ডভণ্ড ক’রে গেছে।
হিশ্-হিশ্ ক’রে
সাপের মিমিক ক’রে
আমোদে মেতেছে
শান্ত ও নিরীহ জোঁকগুলো।
ক্ষোভ আর ঘৃণা ক্রমে ক্রমে
সর্বত্র ঘনায়-
জোয়ান লোকটা
নিজেকে দায়ী করে
অবশেষে।
ফিরে দেখা || অসীম সাহা
বাতাসে উড়ছে, উড়তে থাকুক জ্যোৎস্নায় ভেজা চুল
রাত্রি প্রহরে আকাশে ফুটছে লক্ষ তারার ফুল-
এর মাঝখানে একটি সে-গ্রহ-নক্ষত্রের ডালে
ঝুলে আছে দেখ-বজ্রপতনে কেন তুমি চমকালে?
অথচ তোমারি সোনালি ফিতেয় বসে আছে নীল পরী
হাওয়াতে দুলছে মিনিটের কাঁটা, কাঁপছে কালের ঘড়ি।
আমার হৃদয় তারই মাঝখানে উড়ে যায় দূর হ্রদে
সেখানে হাজার নর্তকীদের দেহ ভিজে যায় মদে।
তখন আমার ঢুলু-ঢুলু চোখে রাতের প্লাবন নামে
মাতাল নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি তোমার দেহের ঘামে।
মহুয়া-বুকের বিহ্বল টানে করি অপরূপ ভুল
রাতের আরতি শেষ হয়ে গেলে জ্যোৎস্নায় ভেজা চুল
আমাকে জাগায়- একাকী প্রহরে আমি হেঁটে আসি একা
তোমার আলোতে সেই তো নিজেকে বারবার চেয়ে দেখা।
মনও তো ভিজে যায়, এমনও পঞ্চাশে || আনিসুল হক
বৃষ্টি ঝরে পড়ে, জানালা কাচ ঘোলা,
জানালা খুলে দিই, রিকশা হুডতোলা
পর্দা উড়ে যায়, হলুদ, রিকশায়
লোকটা সাইকেলে, ভুলেছে দিক, হায়!
মাথায় ছাতা ধরা, ছাতাটা দুলে ওঠা,
হলুদ ব্যাং ছিল, গলাটা ফুলে ওঠা-
আমার শৈশব, সোনালি ব্যাঙ ডাকা,
কোথায় হারাল তা, বলতে পারো ঢাকা?
হলুদ সোনা যেন, ছড়িয়ে সারা মাঠ
বন্ধ ইশকুলে চলত ধারাপাত
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ ভেকেরা করে পাঠ
ছেলেরা ছুটে আসে ভাসছে সারা মাঠ
এবার ফুটবল মাঠটা বেদখল
ব্যাঙেরা ভেগে গেল ছেলেরা খলখল
বৃষ্টি থেমে গেছে জানালা উজ্জ্বল
বন্ধ করে লেখা অফিসে মন চল!
এমন দিনে কিগো অফিসে মন বসে?
মনও তো ভিজে যায়, এমনও পঞ্চাশে...
জড়িত, জড়ানো ও জড়িয়ে পড়া কবিতা || আলফ্রেড খোকন
তোমাকে পাওয়া হচ্ছে না সকালের ঘাস শিশিরসহ
তোমাকে অপাওয়া হচ্ছে দুপুরক্লান্ত বিকেল, দুঃসহ;
ও পাতা, বোটার লালায় জড়ানো সম্পর্ক, তোমাকে
আমরা এখানে মন্থর বসে লিখে রাখছি, কে কাকে!
লিখে রাখছি তোমার কথাটি আমাদের ভাল লাগত
মুছে রাখছি প্রিয় ডাস্টার- ব্ল্যাকবোর্ডটি মুছে দিত;
মুছে রাখছি ঘুমিয়ে পড়া সেই প্রেমন্ত মুখের নির্ঘুম,
তোমাকেও না-পাওয়া হচ্ছে যখন একান্ত নিজঝুম্
তখন তোমাকেই পেয়ে হারিয়েছি মধুর আলিঙ্গন!
মনের পেছনে ছুটতে ছুটতে এইতো আমাদের বন
হাত চেপে ধরে উঠে গেছি বহুতলা ভবনের সিঁড়ি
শিশুটির উঠতে চাওয়াকে আমরা বলেছি হামাগুড়ি;
শ্রেণিজড়িত ছিল মানুষের চাওয়া এবং না পাওয়ায়
সম্পর্ক জড়িত ছিল ফুল, গন্ধ অনতি দূরের হাওয়ায়;
ছন্দ জড়িত ছিল তোমার আকাঙ্ক্ষার সমান সমান
আমাকে ঘিরেই তোমাদের কণ্ঠ গেয়ে উঠত গান!
তোমাকে জড়িয়েই আমি বলেছি পাওয়া হচ্ছে না
আমাকে জড়িয়ে তোমার আর যাওয়া হচ্ছে না-
শিখেছি তোমার কাছে যত, এইসব শূন্যতার নাম
নগর আমাকে বসিয়ে লিখে রাখছে ছন্নছাড়া গ্রাম।
বেহালাবাদক || রাসেল রায়হান
...আর বেহালার রঙিন ভাঁজে
হাত বুলাতে গিয়ে আমার
মনে পড়ে যাবে গর্ভবতী স্ত্রীটির কথা।
এটা খুব স্বাভাবিক যে এক বেহালাবাদক
তার গর্ভবতী স্ত্রীর পেটকে
বেহালার
সবচেয়ে রঙিন
ভাঁজটির সাথেই তুলনা করবে
গয়ালের ফল || পলিয়ার ওয়াহিদ
গয়ালের ফলে গড়িয়ে যাচ্ছে মহুয়ার স্মৃতি
কুচফলের লালাংশের মতো তার হাসি ফেলে দিলে
তিলের তেলের সাথে মিশে সে হবে ঠান্ডা
নারকেল তেলের মতো শীতের শরীরে জমে গেছে মায়ের বকুনি
কাল রাতে খুব কেঁদেছে জোছনার জননী
আজ নরক থেকে কত দিন বাদে মুক্তি পেলাম...
বেঁচে থাকা আসলে কি খুব বেশি দামি?
খোদা মরণের স্বাদ মাঝে মাঝে দিও
যেন দুঃখের চোয়াল বেয়ে নেমে আসা ক্লান্তি
কেড়ে নিতে পারি
ভালো রেখো আমার দুর্বল সুখের সন্তান!
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুলাই ২০১৭/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন