ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একটি পারিবারিক নৈশভোজ || কাজুও ইশিগুরো

শরীফ আতিক-উজ-জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ৬ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একটি পারিবারিক নৈশভোজ || কাজুও ইশিগুরো

কাজুও ইশিগুরো

অনুবাদ : শরীফ আতিক-উজ-জামান

জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে ফুগু নামে এক ধরনের মাছ পাওয়া যেত। একবার এর একটা খেয়ে আমার মা মারা যান, তারপর থেকে মাছটি আমার কাছে বিশেষ এক গুরুত্ব বহন করে। এর বিষ থাকে যৌনগ্রন্থিতে, দুটি নাজুক থলির ভিতর। কাটার সময় খুব সতর্কতার সাথে এই থলি দুটো ফেলে দিতে হয়, সামান্য বেখেয়ালে থলি ফুটো হয়ে বিষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এরপরও বলা সহজ নয় আস্ত্ৰোপচারের মাধ্যমে এই কাজটি সফলভাবে করা গেল কি গেল না। শুধুমাত্র খাওয়ার সময়ই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে, যেমন পাওয়া গিয়েছিল আমার মায়ের বেলায়।
ফুগুর বিষক্রিয়া ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক, আর পরিণতি সবসময়ই মারাত্মক। সাধারণত মাছটা যদি কেউ সন্ধ্যায় খায়, তাহলে সেই ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে প্রচণ্ড ব্যথায় আক্রান্ত হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণায় গড়াগড়ি দিতে থাকে এবং সকাল হতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। যুদ্ধের পরপরই এই মাছ জাপানে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করার আগ পর্যন্ত রান্নাঘরে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্ৰোপচারের মাধ্যমে বিষগ্ৰন্থি ছাড়িয়ে রান্না করে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে ফুগু খাওয়ানোর জন্য জাপানিদের একটা বাতিক চেপেছিল যেন।

আমার মায়ের মৃত্যুর সময় আমি ক্যালিফোর্নিয়া ছিলাম। এসময় বাবা-মায়ের সাথে আমার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল এবং তার মৃত্যুর দুই বছর পর টোকিও ফেরার আগ পর্যন্ত ওই বিষয়ে আমি আর তেমন কিছু জানতে পারিনি। সাধারণত মা সবসময়ই ফুগু খেতে আপত্তি করতেন, কিন্তু ওই বিশেষ অনুষ্ঠানটি ছিল ব্যতিক্রম, সেদিন তার স্কুল জীবনের এক সহপাঠী তাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন, যাকে তিনি আঘাত দিতে চাননি। বিমানবন্দর থেকে কামাকুরা জেলার বাড়িতে যেতে যেতে বাবা আমাকে সব কথা খুলে বলেছিলেন।

‘বিমানে কিছু খেয়েছ?’ বাবা জানতে চাইলেন। চা পানের ঘরে মেঝেতে বিছানো তাতামি’র (এক ধরনের জাপানি মাদুর)উপুর বসে আছি।

‘ওরা হাল্কা খাবার দিয়েছিল।’

‘তুমি নিশ্চয় ক্ষুধার্ত। ঠিক আছে, কিকুকো আসামাত্রই আমরা খেয়ে নেব।’

আমার বাবা একজন ভয়াল-দর্শন মানুষ, শক্ত চোয়াল, ক্ষিপ্ৰ কালো ভ্রু। স্মৃতি হাতড়ে এখন আমার মনে হয়, তার সাথে চৌ এন লাইয়ের চেহারার যথেষ্ট মিল আছে, যদিও তিনি মনে মনে কখনোই এই ধরনের তুলনা লালন করতেন না, কারণ তার শরীরে বয়ে যাওয়া খাঁটি সামুরাই বংশের রক্ত নিয়ে তিনি বিশেষভাবে গর্বিত ছিলেন। সাধারণত তার উপস্থিতিতে হাল্কা কথাবার্তা মোটেও উৎসাহ যোগাত না, যে কোনো মন্তব্য শুরু করার অদ্ভুত এক ধরন ছিল তার, যা কোনো কাজে আসত না, বরং মনে হতো যেন কথাবার্তা এখানেই শেষ। আসলে সেই বিকেলে তার মুখোমুখী বসে আমার শৈশবের একদিনের কথা মনে পড়ে গেল, যেদিন তিনি 'বৃদ্ধাদের মতো বকবক করার জন্য’ কয়েকবার আমার মাথায় আঘাত করেছিলেন। স্বভাবতই বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে আমাদের কথাবার্তা বারংবার দীর্ঘ বিরতি দ্বারা বাধাগ্ৰস্ত হচ্ছিল।

‘ব্যবসাটা গুটিয়ে যাওয়ার কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছে,’ আমি বললাম যখন দেখলাম অনেকক্ষণই কেউ আর কোনো কথা বলছে না। তিনি গম্ভীরভাবে মাথা নাড়লেন। আসলে গল্পটার এখানেই শেষ নয়। তিনি বললেন, ‘ব্যবসাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওয়াতানাবে আত্মহত্যা করে। সে অসম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে চায়নি।’

‘ও, তাই।’

‘১৭ বছর ধরে আমরা একসাথে ব্যবসা করেছি। আদর্শবান ও সম্মানীয় মানুষ। আমি তাকে খুবই সম্মান করতাম।’

‘আপনি কি আবার ব্যবসা করবেন?’ আমি জানতে চাই।

‘আমি এখন অবসরে। নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য বয়সটা যথেষ্ট বেশি। আর ব্যবসাপাতির ধরণ পাল্টে গেছে, বিশেষ করে বিদেশিদের সাথে লেনদেন। ওরা ওদের মতো করে সবকিছু করতে চায়। বুঝলাম না কীভাবে এমন হলো, ওয়াতানাবেও বুঝতে পারেনি।’ তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, ‘চমৎকার আদর্শবান মানুষ একজন।’ চা পানের ঘর থেকে বাগানটার সবকিছু দেখা যায়। যেখানে আমি বসে ছিলাম সেখান থেকে পুরনো পাতকুয়াটার খানিকটা দেখা যাচ্ছিল। যখন ছোট ছিলাম  তখন বিশ্বাস করতাম ওখানে ভূত আছে। ঘন গাছগাছালির মধ্য দিয়ে এখন কোনোরকমে নজরে পড়ে। সূর্যের বেশিটা ঢলে পড়ায় বাগানের বেশিরভাগ জায়গায় ছায়া পড়েছে।

‘তুমি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছ জেনে আমি খুব খুশি,’ বাবা বললেন, ‘আশা করি এবার অনেকদিন থাকছ।’

‘আসলে আমি কী করব এই মুহূর্তে ঠিক জানি না।’

‘শুধুমাত্র একটি কারণে আমি সবকিছু ভুলে যেতে প্রস্তুত আছি। তোমার মাও সবসময় তোমার ফিরে আসাকে স্বাগত জানাতে তৈরি ছিল, তবে তোমার আচরণে সে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিল।’

‘আপনার সহানুভূতি আমি উপলব্ধি করি। তবে ওই যে বললাম, এখনো কিছু ঠিক করিনি।’

‘আমি এখন বিশ্বাস করি যে, তোমার মনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না,’ বাবা বলে চললেন, ‘অনেকের মতো তুমিও নানা কানকথা শুনে বেড়াচ্ছ।’

‘সম্ভবত আমাদের এটা ভুলে যাওয়া উচিত যেমনটা আপনি বললেন।’

‘যেমন তুমি চাও। আর একটু চা দিই?’

ঠিক তখনই সারা বাড়িতে একটি মেয়ের গলা শোনা গেল।

‘শেষমেশ তাহলে কিকুকো এলো,’ বাবা উঠে দাঁড়ালেন।

অনেক বছর দূরে থাকা সত্ত্বেও, আমার বোনের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। মনে হয়, আমাকে আবার দেখতে পেয়ে সে খুব বেশিমাত্রায় আবেগতাড়িত হয়ে থাকবে, তাই খানিকক্ষণ বিচলিত ভঙ্গিতে খিলখিল করে হাসা ছাড়া সে আর কিছুই করল না। এরপর বাবা যখন তাকে ওসাকা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন তখন সে থামল। তার প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত ও গতানুগতিক উত্তর দিল। উল্টো সে আমাকে কিছু প্রশ্ন করল, কিন্তু মনে হলো ভয়ে খানিকটা কুঁকড়ে আছে, কারণ তার প্রশ্ন হয়তো কোনো বিব্রতকর প্রসঙ্গ টেনে আনবে। কিছুক্ষণ পর আমাদের কথাবার্তা কিকুকো আসার আগে যেমন চলছিল তারচেয়েও পাতলা হয়ে এল। একটু পর বাবা উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, ‘আমাকে রাতের খাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে। আসলে ওই ব্যাপারগুলো আমার উপর চেপে বসেছে, তোমরা কিছু মনে কোরো না। কিকুকো তোমার খেয়াল রাখবে।’

বাবা বেরিয়ে গেলে আমার বোনটা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে স্বতঃস্ফূৰ্তভাবে তার ওসাকার বন্ধুবান্ধব আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনো নিয়ে কথা বলতে শুরু করল। তারপর হঠাৎই বাগানে বেড়ানোর কথা বলল এবং ঘর থেকে আমরা বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। রেলিঙের গায়ে ঠেস দিয়ে রাখা খড়ের চপ্পল পায়ে গলিয়ে আমরা বাগানে নেমে এলাম। দিনের আলো প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।

‘আধাঘণ্টা ধরে সিগারেট খেতে না পেরে প্রায় মারা যাচ্ছি,’ একটা সিগারেট ধরিয়ে সে বলল।

‘তা খাস না কেন।’

পিছন দিকে ইশারা করে নিঃশব্দে দুষ্টুমিভরা হাসি হাসল।

‘ও, তাই বল,’ আমি বললাম।

‘ভাবতে পারিস আমার একজন ছেলেবন্ধু আছে?’

‘হ্যাঁ, পারি।’

‘দেখ, সে আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। আর আমার পড়া শেষ হওয়া মাত্রই তার সাথে যেতে বলছে।’

‘তাই নাকি, তাহলে তুইও আমেরিকা যেতে চাস?’

‘যদি যাই, তাহলে সংকেত-সফরের মাধ্যমে যাব।’ কিকুকো আমার মুখের সামনে বুড়ো আঙুল তুলে নাচাল। ‘লোকে বলে এটা খুবই বিপজ্জনক, কিন্তু আমি ওসাকায় এটা করেছি, খুব মজার।’

‘তাই নাকি। তাহলে কোন ব্যাপারটায় তুই অনিশ্চয়তায় ভুগছিস?’

আমরা সরু একটা পথ ধরে এগোচ্ছিলাম যেটা ঝোপঝাড়ের ভিতর দিয়ে পুরনো পাতকুয়াটার কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে কিকুকো বিনা কারণে বারংবার নাটকীয় ঢঙে ধোয়া টানছিল।

‘আসলে ওসাকাতে আমার অনেক বন্ধু জুটেছে। আমি তাদের পছন্দ করি । জানি না তাদের সবাইকে ছেড়ে যেতে পারব কিনা। আর সুইকি- যাকে আমি পছন্দ করি, কিন্তু আমি জানি না যে, তার সাথে আমি খুব বেশি সময় থাকতে পারব কিনা। বুঝতে পেরেছিস আমি কী বলতে চাইছি?’

‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’

সে হাসল, তারপর লাফ দিয়ে আমার আগে কুয়োটার কাছে পৌঁছে গেল। আমি হেঁটে তার কাছে আসার পর সে বলল, ‘মনে আছে, তুই সবসময় বলতি কুয়োটাতে ভূত আছে।’

‘হ্যাঁ, মনে আছে।’

আমরা দুজনই পাশ থেকে উঁকি মেরে দেখলাম।

‘মা সবসময় বলত যে, সেই রাতে তুই তরিতরকারীর দোকানের বৃদ্ধাকে দেখেছিলি,’ সে বলল, ‘কিন্তু আমি তার কথা বিশ্বাস করতাম না, আর তাই কখনো একা একা কুয়োর পাড়ে আসতাম না।’

‘মা আমাকেও তাই বলত। আরও বলেছিল যে, মহিলা নাকি একবার ভূত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আসলে সে আমাদের বাগানের মধ্য দিয়ে আড়াআড়ি পথে যেত। আমার ধারণা, এইসব দেয়াল ডিঙাতে তার খুব অসুবিধা হতো।’

কিকুকো খিল খিল করে হাসল। কুয়োটার দিকে পিছন ফিরে বাগানের দিকে তাকাল।

‘মা আসলে কখনো তোর উপর কোনো অভিযোগ করেনি, জানিস,’ সে বলল। তার গলার স্বর নতুন শোনাল। আমি চুপ করে রইলাম। ‘মা সবসময়ই আমাকে বলত যে, তোকে ঠিকঠাক মতো মানুষ করতে না পারাটা তাদেরই দোষ, তার আর বাবার। আরও বলত তারা আমার ব্যাপারে কতখানি যত্নশীল ছিল, আর তাই আমি এত ভালো হয়েছি।’ সে মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমিপূর্ণ হাসি হাসল, তারপর মায়ের প্রসঙ্গে ফিরে গেল, ‘বেচারা মা’ সে বলল।

‘হ্যাঁ বেচারা মা।’

‘তুই কি ক্যালিফোর্নিয়াতে ফিরে যাচ্ছিস?’

‘জানি না, দেখি কী করি।’

‘তার সাথে কী হয়েছে? ভিকি'র সাথে?’

‘সব চুকেবুকে গেছে,’ আমি বললাম, 'ক্যালিফোর্নিয়াতে আমার জন্য আর তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই।’

‘তোর কি মনে হয় আমার ক্যালিফোর্নিয়াতে যাওয়া উচিত?’

‘কেন নয়? আমি ঠিক জানি না। হয়ত তোর এটা পছন্দ হবে।’ আমি বাড়িটার দিকে তাকালাম। ‘আমাদের বোধহয় তাড়াতাড়ি ভিতরে যাওয়া দরকার। রাতের খাবার বানানোর জন্য বাবার সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।’

কিন্তু আমার বোনটা আরও একবার কুয়োর ভিতরে উঁকি দিল। ‘কই, কোনো ভূতটুত তো দেখি না।’ তার গলাটা একবার কেঁপে উঠল।

‘ব্যবসাটা গুটিয়ে যাওয়ার পর বাবা খুব বিগড়ে আছে, নারে?’

‘জানি না। বাবার কাছে আবার এসব বলাবলি করিস না।’ তারপর সে হঠাৎ সোজা হয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ‘বাবা কি তোকে ওয়াতানাবে সম্পর্কে কিছু বলেছে? কী বলেছে?’

‘শুনেছি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’

‘ওইটুকুই সব নয়। তিনি পুরো পরিবার সাথে নিয়ে গেছেন। স্ত্রী আর ছোট্ট মেয়ে দুটোকেও।’

‘তাই নাকি?’

‘ফুটফুটে মেয়ে দুটো। ওরা যখন ঘুমিয়ে ছিল তিনি গ্যাসের সুইচ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর মাংস কাটার ছুরি নিজের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।’

‘ও, বাবা শুধু বলছিলেন ওয়াতানাবে কতটা আদর্শবান মানুষ।’

‘অসুস্থ।’ আমার বোন কুয়োটার দিকে ফিরল।

‘সাবধান, পড়ে যাবি।’

‘কোনো ভূতটুত তো দেখি না,’ সে বলল, ‘তুই সবসময় আমার কাছে মিথ্যা বলতি।’

‘কিন্তু আমি তো কখনো বলিনি যে, কুয়োর মধ্যেই ভূত আছে।’

‘তাহলে কোথায় আছে?’

আমরা দুজনই গাছের ডাল আর ঝোপঝাড়ের দিকে তাকালাম। বাগানের আলো খুবই ঝাপসা। হঠাৎই গজদশেক দূরে একটা ফাঁকা জায়গার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললাম, ‘ওই যে ওখানে, এইমাত্র দেখলাম। ঠিক ওইখানটায়।’

আমরা জায়গাটার দিকে তাকালাম।

‘দেখতে ঠিক কেমন রে?’

‘আমি ঠিকমতো দেখতে পাইনি। ওখানটায় অন্ধকার।’

‘কিন্তু কিছু তো নিশ্চয় দেখেছিস।’

‘একজন বৃদ্ধা, ঠিক ওইখানটায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে।’

আমরা সেই জায়গাটার দিকে সম্মোহিতের মতো চেয়ে রইলাম।

‘তার পরনে একটা সাদা কিমোনো,’ আমি বললাম, ‘চুলের খানিকটা খুলে আলগা হয়ে বাতাসে উড়ছিল।’

কিকুকো কনুই দিয়ে আমার বাহুতে খোঁচা দিলো। ‘আহ থাম না। তুই আবার আমাকে ভয় দেখাতে চাইছিস।’ সে সিগারেটের বাকি অংশটাতে ঘন ঘন টান দিতে লাগল, তারপর খানিক্ষণ হতভম্বের মতো চেয়ে রইল। কয়েকটা পাইনের কাঁটাওয়ালা ডালে লাথি মারল। তারপর দাঁত বের করে হাসল। ‘চল দেখি, রাতের খাবারের কতদূর কী হলো,’ সে বলল।

বাবাকে রান্নাঘরে খুঁজে পেলাম। দ্রুত মুখ তুলে একবার আমাদের দেখলেন, তারপর আবার তার কাজ করতে লাগলেন।

‘নিজের কাজ নিজে করতে যেয়ে বাবা পুরোদস্তুর একজন বাবুর্চি হয়ে উঠেছেন।’ কিকুকো হেসে বলল। তিনি ঘুরে ওর দিকে তাকালেন, ঠান্ডা চাহনি।

‘এই পারদর্শিতার জন্য আমি তেমন একটা গর্বিত নই,’ তিনি বললেন, ‘কিকুকো এখানে এসে আমাকে একটু সাহায্য করো।’

কিছুক্ষণ আমার বোনটা নড়লচড়ল না। তারপর এগিয়ে গিয়ে হ্যাঙ্গার থেকে একটা অ্যাপ্রোন টেনে নিল।

‘এই তরকারীটাই শুধু রান্না করা বাকি, বাকিগুলোর দিকে একটু খেয়াল রাখলেই চলবে,’ তিনি তাকে বললেন। তারপর আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড অদ্ভুতভাবে চেয়ে রইলেন। ‘আমি চেয়েছিলাম তুমি বাড়িটা একবার ঘুরেফিরে দেখ।’ হাতে ধরে থাকা চপস্টিক দুটো নামিয়ে রাখলেন, ‘সেই কবে দেখেছ, তারপর অনেক সময় পার হয়ে গেছে।’

রান্নাঘর থেকে বেরুনোর সময় আমি পিছন ফিরে কিকুকোর দিকে তাকালাম।

‘ও খুব ভালো মেয়ে,’ বাবা খুব শান্তকণ্ঠে বললেন।

আমি বাবার পিছন পিছন এ-ঘর থেকে সে-ঘরে গেলাম। আমাদের বাড়িটা কত বড় আমি তা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। একটা প্যানেল সরে যায় আর একটা করে ঘর বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু ঘরগুলো ভয়ংকর রকমের খালি খালি। একটা ঘরের আলো জ্বলল না, আমরা খোলা জানালা দিয়ে প্রবেশ করা আলোতে খালি দেয়াল আর তাতামির দিকে তাকিয়ে রইলাম।

‘এই বাড়িটা একজন মানুষের একার বসবাসের জন্য খুবই বড়,’ বাবা বললেন, ‘বেশিরভাগ ঘর আমার তেমন কোনো কাজেই লাগে না।’

পরিশেষে বাবা বই আর কাগজপত্রে ঠাসা একটা ঘরের দরজা খুললেন। সেখানে ফুলদানিতে ফুল আর দেয়ালে ছবি টানানো ছিল। ঘরের এককোণে নিচু একটা টেবিলের ওপর কিছু একটা নজরে পড়ল। কাছে গিয়ে দেখলাম, প্লাস্টিকের তৈরি যুদ্ধজাহাজের একটি মডেল, শিশুরা যেমন তৈরি করে থাকে। একটা খবরের কাগজের ওপর রাখা ছিল। এর চারপাশে হরেক রকমের ধূসর রঙের প্লাস্টিক ছড়ানো ছিল।

বাবা হেসে উঠে টেবিলটার কাছে এসে মডেলটা হাতে তুলে নিলেন।

‘ব্যবসাটা গুটিয়ে যাওয়ার পর আমার হাতে এখন যথেষ্ট সময় আছে,’ তিনি বললেন। তিনি আবারও হেসে উঠলেন আর তা খানিকটা অদ্ভুতভাবে। কিছু সময় তার মুখটা খুবই শান্ত দেখাচ্ছিল। ‘যথেষ্ট সময়।’

‘এ তো ভারি অবাক করা কথা,’ আমি বললাম, ‘আপনি তো সবসময়ই খুব ব্যস্ত ছিলেন।’

‘খুবই ব্যস্ত,’ হেসে তিনি আমার দিকে তাকালেন। ‘আমি আসলে তোমাকে একথা বলতে চাইনি, কিন্তু সম্ভবত এটাই এখন আমি করতে পারি। আমার বিশ্বাস তোমার মায়ের মৃত্যু কোনো দুৰ্ঘটনা নয়। তার মধ্যে অনেক রকমের ভয়ভীতি কাজ করত। আর ছিল হতাশা।’

আমরা দুজনেই প্লাস্টিকের যুদ্ধজাহাজটার দিকে তাকালাম।

‘অবশ্যই,’ আমি শেষমেশ বললাম, মা চায়নি আমি স্থায়ীভাবে এখানে থাকি।’

‘আসলে তুমি দেখতে পাও না কিছু কিছু বাবা-মায়ের জন্য এটা কতখানি। তারা শুধুমাত্র তাদের সন্তান হারায় না, তারা এমনকিছু জিনিসের মাঝে তাদের ছেড়ে দেয় যা তারা বোঝে না।’ আঙুলের মাঝে তিনি জাহাজটা ঘোরাতে লাগলেন। ‘এই ছোট যুদ্ধ জাহাজগুলো এখানে লাগালে ভালো হয়, তাই না?’

‘সম্ভবত । এটা সুন্দর দেখাবে।’

যুদ্ধের সময় আমি একটি জাহাজে কিছুদিন কাটিয়েছি যেটা দেখতে প্রায় এই রকম ছিল। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল বায়ুসেনা হওয়া। আমি এটাকে সেভাবেই ভেবেছি। যদি তোমার জাহাজ শত্রুপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে বিধ্বস্ত হয়, তুমি যা করতে পার তা হলো পানিতে ভেসে থেকে সংগ্রাম করা আর জীবনরক্ষাকারী বায়ুচাকতির জন্য অপেক্ষা করা। কিন্তু উড়োজাহাজে, যা-ই বলো, সেখানে সবসময় চূড়ান্ত অস্ত্র।’ তিনি মডেলটা টেবিলের উপর রেখে দিলেন। ‘আমার মনে হয় না তুমি যুদ্ধে বিশ্বাস করো।’

‘সেভাবে বললে, না।’

তিনি ঘরের চারদিকে একবার চোখ বুলালেন। ‘এতক্ষণে বোধহয় রাতের খাবার তৈরি হয়ে গেছে,’ তিনি বললেন, ‘তুমি নিশ্চয় খুব ক্ষুধার্ত।’

রান্নাঘরের পাশে একটি স্বল্পালোকিত কক্ষে খাবার দেওয়া হয়েছে। টেবিলের উপর ঝুলানো একটা বড় লণ্ঠনই ছিল একমাত্র আলোর উৎস, ঘরের বাকি অংশে ছায়া পড়েছে। খেতে শুরু করার আগে আমরা একে অপরকে মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানালাম।

কথাবার্তা তেমন একটা হচ্ছিল না। যখন খাবার সম্পর্কে আমি সৌজন্যমূলক দু-একটি মন্তব্য করলাম, কিকুকো খিলখিল করে হাসল। তার পূর্বের বিচলিতভাব ফিরে এসেছে মনে হলো। বাবা অনেকক্ষণ কোনো কথা বলেননি। শেষমেশ তিনি বললেন, ‘তুমি আবার জাপানে ফিরে আসায় আমি অবাক হয়েছি।’

‘হ্যাঁ, খানিকটা অবাক করা ব্যাপার বৈকি!’

‘সম্ভবত, আমেরিকা ছাড়ার জন্য তোমার মনে বেশ খেদ আছে।’

‘সামান্য, বেশি নয়। আমি পিছনে বেশি কিছু ফেলে আসিনি, শুধুমাত্র কয়েকটা খালি ঘর।’

আমি টেবিলের চারদিকে তাকালাম। আলোআঁধারিতে বাবার মুখটা কঠোর আর ভয়ংকর দেখাচ্ছিল। আমরা নীরবে খেতে লাগলাম ।

হঠাৎ ঘরের পেছনে কোনো কিছুতে আমার চোখ আটকে গেল। প্রথমে আমি খেয়ে যাচ্ছিলাম, তারপর আমার হাতটা স্থির হয়ে গেল। বাকিরাও তা খেয়াল করল এবং আমার দিকে তাকাল। আমি বাবার কাঁধের পেছনে অন্ধকারে তাকিয়ে রইলাম।

‘ও কে? ওখানে ওই ছবিতে?’

‘কোন ছবি?’ বাবা সামান্য ঘুরলেন, আমার দৃষ্টি অনুসরণের চেষ্টা করলেন।

‘একদম নিচেরটা। সাদা কিমোনো পরা বৃদ্ধা।’

বাবা চপস্টিক দুটো নামিয়ে রেখে প্রথমে ছবি তারপর আমার দিকে তাকালেন।

‘তোমার মা।’ তার কণ্ঠস্বর খুব রূঢ় শোনাল, ‘তোমার মাকে চিনতে পারছ না?’

‘আমার মা ! আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ওখানটায় অন্ধকার। আমি ঠিক দেখতে পাচ্ছি না।’

কয়েক মুহূর্ত কেউ আর কোনো কথা বলল না। তারপর কিকুকো উঠে গিয়ে ছবিটা নামিয়ে এনে আমার হাতে দিল।

‘তাকে অনেক বয়সী মনে হচ্ছে।’ আমি বললাম।

‘মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে ছবিটা তোলা হয়েছিল,’ বাবা বললেন।

‘ওখানে অন্ধকার ছিল, আমি ঠিকমত দেখতে পাইনি।’

আমি মুখ তুলে তাকালাম, দেখলাম বাবা একটা হাত বাড়িয়ে আছেন। আমি ছবিটা তার হাতে দিলাম। তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখলেন, তারপর কিকুকোর দিকে এগিয়ে দিলেন। বাধ্য মেয়ের মতো সে উঠে গিয়ে ছবিটা আবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখে এলো।

টেবিলের মাঝখানে বড় একটা পাত্র রাখা, মুখটা এখনো খোলা হয়নি। কিকুকো ফিরে এসে বসলে বাবা এগিয়ে গিয়ে পাত্রের ঢাকনাটা খুললেন। খানিকটা ভাপ পাক খেতে খেতে লণ্ঠনের দিকে উড়ে গেল। তিনি পাত্রটা ঠেলে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।

‘তোমার নিশ্চয় খুব ক্ষুধা লেগেছে,’ তিনি বললেন। তার মুখের একপাশ ছায়ায় ঢাকা পড়েছে।

‘ধন্যবাদ।’ আমি আমার চপস্টিকসহ এগিয়ে গেলাম। ভাপটা খুবই গরম।

‘কী এটা?’

‘মাছ।’

‘ঘ্রাণটা তো খুব চমৎকার!’

সুরুয়ার মধ্যে মাছের টুকরোগুলো কুঁকড়ে প্রায় বলের গোল হয়ে আছে। আমি আমার পাতে একটা তুলে নিলাম।

‘নিয়ে খাও, অনেক আছে।’

‘ধন্যবাদ।’ আমি আর সামান্য একটু নিয়ে ডিসটা বাবার দিকে এগিয়ে দিলাম। দেখলাম, তিনি কয়েক টুকরো মাছ তার পাতে তুলে নিলেন । তারপর কিকুকো নিল।’

বাবা খানিকটা সামনে ঝুঁকলেন। ‘তোমাদের নিশ্চয় খুব ক্ষুধা লেগেছ,’ তিনি আবার বললেন। খানিকটা মাছ মুখে তুলে নিয়ে তিনি খেতে লাগলেন । আমি এক টুকরো মুখে নিয়ে খেতে লাগলাম। মাছটা খুব নরম, জিবের পরে খুব মাংসল মনে হলো।

‘খুব ভালো তো,’ আমি বললাম, ‘কী মাছ?’

‘মাছ আরকি।’

আমরা তিনজন নিঃশব্দে খেতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল।

‘আর একটু নেবে?’

‘আছে নাকি?’

‘আমাদের জন্য পর্যাপ্ত,’ বাবা ঢাকনাটা তুললেন, আবারো ধোয়া উড়ল। আমরা তিনজনই এগিয়ে গেলাম, হাত বাড়িয়ে তুলে নিলাম।

'এই যে,’ বাবাকে বললাম, ‘শেষ খণ্ডটা আপনার জন্য।’

‘ধন্যবাদ।’

খাওয়া শেষ হলে বাবা হাত-পা ছড়িয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেন। ‘কিকুকো’, তিনি বললেন, ‘একটু চা কর তো।’

বোনটা তার দিকে তাকাল, তারপর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাবা উঠে দাঁড়ালেন।

‘আমরা বরং পাশের ঘরে যাই, এখানে বেশ গরম।’

আমি উঠে তার পিছু পিছু চা খাওয়ার ঘরটাতে গিয়ে বসলাম। বিশাল জানালাটা খোলা, বাগান থেকে ফুরফুরে হাওয়া আসছে। খানিকক্ষণ আমরা চুপচাপ বসে রইলাম।

‘বাবা,’ শেষমেশ আমি বললাম।

‘হ্যাঁ, বল।’

‘কিকুকো বলছিল ওয়াতানাবে-সান তার পুরো পরিবারসহ আত্মহত্যা করেছিলেন।’

বাবা চোখ দুটো নামিয়ে নিয়ে মাথা নাড়লেন। কিছুক্ষণ তিনি গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। ‘ওয়াতানাবে তার কাজের প্রতি খুবই নিবেদিত ছিল,’ তিনি বললেন। ‘ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়াটা ছিল তার জন্য চরম এক আঘাত। আমি আশঙ্কা করি এটা তার বিবেচনা ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলেছিল।’

‘আপনার ধারণা, তিনি যা করেছিলেন তা ভুল ছিল?’

‘অবশ্যই। তুমি কি বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখ নাকি?’

‘না না অবশ্যই না।’

‘কাজ ছাড়াও অন্য বিষয় আছে।’

‘হ্যাঁ।’

আমরা আবার নিচুপ হয়ে গেলাম। বাগান থেকে ফড়িং উড়ে আসছিল। আমি অন্ধকারের দিকে চেয়ে রইলাম। কুয়োটা আদৌ দেখা যাচ্ছিল না।

‘তুমি এখন কী করবে ভাবছ?’ বাবা জানতে চাইলেন, ‘আর কিছুদিন কি জাপানে থাকবে?’

‘সত্যি বলতে কি, আমি এখনো এ নিয়ে বেশি কিছু ভাবিনি।’

‘যদি তুমি এখানে থাকতে চাও, মানে এই বাড়িতে, তোমাকে স্বাগতম। অবশ্য যদি তুমি একজন বুড়ো মানুষের সাথে থাকতে অপছন্দ না কর।’

‘ধন্যবাদ, আমাকে এ নিয়ে আরও একটু ভাবতে হবে।’

আমি আরও একবার অন্ধকারের দিকে তাকালাম।

‘অবশ্যই,’ বাবা বলতে লাগলেন, ‘এই বাড়ি এখন খুবই বিষণ্ন। সন্দেহ নেই তুমি তাড়াতাড়িই আমেরিকা ফিরে যাবে।’

‘হয়ত, আমি এখনো জানি না।’

‘সন্দেহ নেই তুমি যাবে।’

খানিকক্ষণ বাবা তার হাতের উল্টো দিকটা পর্যবেক্ষণ করলেন। তারপর মুখ তুলে তাকালেন এবং বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

‘আগামী বসন্তে কিকুকোর পড়াশোনা শেষ হবে,’ তিনি বললেন, ‘সম্ভবত তারপর সে বাড়িতে ফিরে আসবে। সে খুব ভালো মেয়ে।'

‘সম্ভবত আসবে।’

‘সবকিছুর তখন আরও উন্নতি হবে।’

‘হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত, অবশ্যই হবে।’

আমরা আবার চুপ মেরে গেলাম, কিকুকোর চা নিয়ে আসার প্রতীক্ষায় রইলাম।

 

লেখক পরিচিতি:

‘দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে’র জন্য কাজুও ইশিগুরো ১৯৮৯ সালে বুকার পেয়েছিলেন। এবং বইটি নিয়ে ১৯৯৩ সালে একটি সফল চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও আরো তিনবার তিনি বুকারের জন্য তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। জন্ম নাগাসাকিতে, ১৯৫৪ সালে। একবছরের মধ্যে ফিরে আসার ইচ্ছা নিয়ে তার পরিবার ১৯৬০ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমালেও আর কখনোই ফিরে আসতে পারেনি। ইশিগুরো (বন্ধুরা তাকে ইশ বলে ডাকে) কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইস্ট অ্যাঙ্গোলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। জাপানি হলেও ব্রিটেনে বেড়ে ওঠার সুবাদে তার কথা বলার ধরন, আচার-আচরণ পুরোদস্তুর ইংরেজদের মতো। তবে বইপত্র ইংরেজিতে লিখলেও তার উপন্যাসের চরিত্ররা জাপানি। তার রচিত ৫টি উপন্যাসই পাঠকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘একটি পারিবারিক নৈশভোজ’ তার  A Family Supper গল্পের অনুবাদ। কাজুও ইশিগুরো এ বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
 

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অক্টোবর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়