ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো- দ্য ওয়ান ম্যান আর্মি

শেখ আল মুমিন শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ৩১ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো- দ্য ওয়ান ম্যান আর্মি

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

শেখ আল মুমিন শুভ :তার অভিধানে ‘পরাজয়’ শব্দটির কোনো অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্ব নেই অনেক নেতিবাচক শব্দেরও। ‘পারব না’ কিংবা ‘পারা যাবে না’ এ ধরনের কোনো বাক্য বলেননি। বিশ্বাস করতে চান না এ শব্দগুলো কেউ ব্যবহারও করতে পারেন। তাইতো চেনা গ্রহে অচেনা হয়ে রয়েছেন তিনি।

বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। বিভিন্ন দেশের অনেক তারকা-মহাতারকা নিজেদের বিস্ময়কর ও চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলে পুরো ফুটবল বিশ্বকে মুগ্ধ করবে। যে কয়েকজনের ওপর আলাদা নজর থাকবে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তাদের মধ্যে অন্যতম।

নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারে ক্লাবের হয়ে সম্ভাব্য সকল শিরোপা জিতেছেন। আরেক ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির সমান পাঁচবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন সর্বশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। এত সব প্রাপ্তির পরেও বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স একেবারে মলিন। বিশ্বকাপে নেই কোনো স্মরণীয় পারফর্ম! কিন্তু হার না মানা রোনালদো শপথ নিয়েছেন, ভালো কিছুই উপহার দেবেন রাশিয়া বিশ্বকাপে।


রোনালদোর বিশ্বকাপ অভিষেক হয় ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে, মাত্র ২১ বছর বয়সে। তখনকার পর্তুগাল দলে ছিলেন ফিগো, ডেকো, পলেতা, সিমাও, ন্যানির মতো নামকরা খেলোয়াড়। কোচ হিসেবে ছিলেন মাস্টারমাইন্ড লুইস ফেলিপে স্কলারি। রোনালদো সেই সময়ে ফুটবল বিশ্বে ফুলের কুড়ির মতো ফুটতে শুরু করেছেন। ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে নিজের শৈল্পিক ফুটবল দেখিয়ে বিশ্বকে জানান দিয়েছেন যে, ‘আমি আসছি’। ওই বিশ্বকাপে রোনালদো মোট ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন এবং তার জার্সি নম্বর ছিল ১৭। তার অভিষেক বিশ্বকাপ ম্যাচ ছিল অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে, যাতে তার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়। ম্যাচের প্রথমার্ধেই কোচ তাকে মাঠ থেকে তুলে নেন একটি হলুদ কার্ড পাওয়ায়। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ গোল করেন দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে, পেনাল্টি থেকে। ম্যাচে তারা জেতেন ২-০ গোলে।

গ্রুপের শেষ ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি রোনালদোর। দ্বিতীয় পর্বে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে একাদশে ফেরেন রোনালদো। ‘নুরেমবার্গের যুদ্ব’ হিসেবে পরিচিত তীব্র মারামারি-পূর্ণ ম্যাচে পর্তুগাল জেতে ১-০ গোলে। সে ম্যাচে রেফারি ৪টি লাল কার্ড ও ৮টি হলুদ কার্ড দেখান। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। প্রচলিত আছে যে, ওই ম্যাচে ফাউলের ভঙ্গি করে তখনকার ক্লাব সতীর্থ ওয়েইন রুনিকে লাল কার্ড পাইয়েছিলেন রোনালদো। গোলশূন্য  থাকার ফলে ম্যাচটি টাইব্রেকারে যায় এবং শেষ পর্যন্ত পর্তুগাল ৩-১ গোলে জেতে। দলের হয়ে রোনালদো প্রথম গোল করেন।

সেমিফাইনালে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স। ম্যাচে জিদানের করা একমাত্র গোলে পর্তুগালের বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। তৃতীয় স্থান নির্ধারিত ম্যাচে পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক জার্মানি। জার্মানির বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগারের জোড়া গোল ও পেটিটের আত্মঘাতী গোলের বিপরীতে নুনো গোমেজ এক গোল করেন। ফলে ৩-১ গোলে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয় পর্তুগাল তথা রোনালদোদের।
 


চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে যখন রোনালদো পা রাখেন, তখন ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৯৪ মিলিয়ন ডলারের খেলোয়াড়, সঙ্গে ব্যালন ডি’অর বিজয়ী এবং তার কাঁধে ছিল পর্তুগালের অধিনায়কের দায়িত্ব। কিন্তু দলে ছিল না ভরসার রাখার মতো কোনো খেলোয়াড়। ফলে গ্রুপপর্বে আইভরি কোস্ট ও ব্রাজিলের সঙ্গে ম্যাচে রোনালদো একরকম নিষ্প্রভ ছিলেন, যার ফলে দুই ম্যাচেই ড্র জোটে পর্তুগালের ভাগ্যে। শুধু দ্বিতীয় ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ৭-০ ব্যবধানে জয় পায় পর্তুগাল, যাতে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ৮৭ মিনিটে একটি গোল করেন রোনালদো।

দ্বিতীয় পর্বে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ওই আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী দল স্পেন। ম্যাচে স্পেনের পাসিং ফুটবলের কাছে পুরো পর্তুগাল হিমশিম খায়। শেষ পর্যন্ত ডেভিড ভিয়ার নয়নাভিরাম এক গোলের কাছে শেষ হয়ে যায় পর্তুগালের বিশ্বকাপ যাত্রা। পুরো আসরে চার ম্যাচ খেলে মাত্র এক গোল করেন রোনালদো।

২০১৪ বিশ্বকাপে রোনালদোর কাঁধে সওয়ার হয়ে পর্তুগাল ব্রাজিলে পৌঁছায়। সরাসরি সুযোগ না পাওয়ায় পর্তুগালের খেলতে হয় সুইডেনের সঙ্গে প্লে-অফে। প্লে-অফের দুই লেগ মিলিয়ে হ্যাটট্টিকসহ ৪ গোল করে পর্তুগালকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপে তোলেন রোনালদো। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে পুরোপুরি ফিট ছিলেন না রোনালদো। তার নিঃস্প্রভতা, পেপের লাল কার্ড মিলিয়ে চরম বাজে একটি ম্যাচ খেলে পর্তুগাল। ফলে পর্তুগাল ম্যাচ হারে ৪-০ গোলে।
 


দ্বিতীয় ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভেরালার অতিরিক্ত সময়ের অন্তিম মূহুর্তের গোলে কোনোরকম পরাজয় এড়ায় পর্তুগাল, ম্যাচ ড্র হয় ২-২ গোলে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে রোনালদো ঘানার বিপক্ষে বিশ্বকাপের একমাত্র গোল পান, ম্যাচে পর্তুগাল জেতে ২-১ গোলে। পর্তুগালের সমান পয়েন্ট পেয়েও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ থেকে জার্মানির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয় পর্বে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র এবং শেষ হয়ে যায় পর্তুগাল তথা রোনালদোদের মিশন বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৩ ম্যাচ খেলেছেন রোনালদো। যার মধ্যে ৫টি জয়ের সঙ্গে ৪টি করে পরজয় ও ড্রয়ের স্বাদ পেয়েছেন। পেয়েছেন দুটি হলুদ কার্ড। বয়স হিসেবে এটা তার শেষ বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কে জানে, বিধাতা হয়তো শেষ বিশ্বকাপে অন্যরকম স্পেশাল কিছু লিখে রেখেছেন তার জন্য! রোনালদো নিজেও হয়তো বা তার নিজের শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে সর্বাত্বক চেষ্টা করবেন। এটাই দেখার অপেক্ষা করতে হবে এখন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মে ২০১৮/শেখ আল মুমিন শুভ /ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়