ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

এ. ই. হাউসম্যান ও ফুটবল নিয়ে দুটি কবিতা

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৮ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এ. ই. হাউসম্যান ও ফুটবল নিয়ে দুটি কবিতা

আলফ্রেড এডওয়ার্ড হাউসম্যান (১৮৫৯-১৯৩৬)

ভাষান্তর: মুম রহমান

ফুটবল নিয়ে কবিতা লেখার কথা বড় কোন কবিই হয়তো ভাবেননি। অনেক খুঁজেও তেমন কবিতা চোখে পড়ে না। বিশ্বসাহিত্যে এবং বাংলাসাহিত্যেও ফুটবল নিয়ে কবিতা নেই বললেই চলে, তবে শিশুতোষ ছড়া আছে বেশ কিছু। তবে এ. ই. হাউসম্যান এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ফুটবল নিয়ে তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা পাওয়া গেলো।

আলফ্রেড এডওয়ার্ড হাউসম্যান (১৮৫৯-১৯৩৬) শুধু কবি নন, ইংরেজ ও ল্যাটিন সাহিত্য ইতিহাসে একজন সুবিদিত পণ্ডিত। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাটিন পড়াতেন। সৃষ্টিশীলতা আর পাণ্ডিত্য দিয়ে তিনি নিজেকে ধ্রুপদী স্থানে উন্নীত করেছেন। ৬৩টি গান নিয়ে তার প্রথম গীতিকাব্যগ্রন্থ ‘আ শর্পশায়ার ল্যাড’ (১৮৯৬) প্রকাশের সাথে সাথেই তিনি কবি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। কবিতায় তিনি ইংরেজ যুবসমাজ তুলে ধরেন। ভিক্টোরিয় যুগের শেষ পর্যায়ের ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলের যুবকদের আশা, হতাশা, সরলতা, সৌন্দর্য কবিতায় চিত্রিত করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আঘাত তাকে আলোড়িত করেছিলো। তাঁর একাধিক কবিতায় যুদ্ধের ছাপ লক্ষ্যণীয়। তাঁর কবিতা গীতিময় এবং সমকালীন চিত্রও তুলে ধরে।
এখানে বিধৃত একটি কবিতায় একজন মৃত মানুষের কথা আছে, যে কবরে শুয়ে তার মেয়ে, বন্ধু, চাষের ক্ষেত আর ফুটবলের কথা ভাবছে। ফুটবল এখানে তারুণ্য আর জীবনের প্রতীক হয়ে এসেছে। অপর কবিতায় ফুটবল যেন ওষুধ, ব্যথা-বেদনা নিবারণ করে। এই কবিতায় ফুটবলের সঙ্গে ক্রিকেট বাড়তি পাওনা। একই কবিতায় ফুটবল আর ক্রিকেটের কথা উল্লেখ এই প্রথম চোখে পড়লো। সম্ভবত ব্রিটিশদের ক্রিড়াপ্রেমী মনেরই পরিচয় আছে হাউসম্যানের কবিতায়।

আমার দল কি হাল চাষ করছে

 

‘আমার দল কি হাল চাষ করছে,

যে হাল আমিই চালাতাম

আর শুনতাম ঘোড়ার জিনের ঝমঝম

যখন আমি জীবিত লোক ছিলাম?’

 

আহা, ঘোড়ারা দৃঢ় পদে চলে,

জিনের শব্দ ঝমঝম বাজে এখন;

কোনো বদল নেই যদিও তুমি নিচে শায়িত

যে জমি চাষ করতে তখন। 

 

‘ফুটবল খেলা কি চলছে

নদীর তীর ঘেঁষে তেমন

বালকেরা কি ছুটছে চামড়ার বলের পিছে,

আমি তো দাঁড়িয়ে নেই এখন?’

 

আহা, বলখানি উড়ছে শূন্যে,

বালকেরা খেলছে মনেপ্রাণে;

গোলপোস্ট দাঁড়িয়ে, গোলকিপারও

দাঁড়িয়ে আছে ঠেকাতে গোলখানি।        

 

‘আমার মেয়ে কি খুশি,

যাকে ছেড়ে আসা কঠিন হবে ভেবেছিলাম,

আর সে কি এখন কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত

এখন যখন সন্ধ্যার পারে আছে শায়িত।’

 

আহ্‌ সে শুয়ে আছে আলতো,

সে কাঁদার জন্যে শুয়ে নেই

তোমার মেয়ে যথেষ্ট পরিতুষ্ট।

শান্ত হও, খোকা আমার, ঘুমাও।

 

‘আমার বন্ধুরা কি বেদনার্ত,

এখন আমি কৃশ আর সরল পাইনের মতো

আর সে কি ঘুমানোর জায়গা পেয়েছে

আমার চেয়ে ভালো কোনো বিছানায়?’  

 

হ্যাঁ, খোকা, আমি শুয়ে আছি আরামে,

আমি শুয়ে আছি যেমন বালকেরা পছন্দ করে

আমি উল্লাস করি এক মৃত মানুষের মিষ্টি হৃদয়ের প্রতি

কখনো জিজ্ঞাস করো না কার?

 

সপ্তাহে দুইবার শীত ব্যাপক

 

সপ্তাহে দুইবার শীত আসে ব্যাপক

এখানে আমি দাঁড়াই গোলপোস্ট অক্ষত রাখতে:

ফুটবল তখন ছিলো বেদনার সাথে লড়াইয়ের মাধ্যম

তরুণদের আত্মার জন্যে সার্থক।

 

এখন এই মার্চের কালে উইকেটে

আমি বের হই ব্যাট আর প্যাডসহ:

বিষাদের পুত্রকে দেখি ক্রিকেটে

আনন্দিত হওয়া চেষ্টায় রত।

 

চেষ্টা করবো আমি; চেষ্টায় কোনো ক্ষতি নাই

বিস্মিত হয়ে দেখি ছোট্ট উল্লাস

মানুষের হাড় শায়িত রাখে

পৃথিবীর বিছানায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়