ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নভেরার জীবনটাই একটা উপন্যাস: হাসনাত আবদুল হাই

হাসনাত আবদুল হাই || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নভেরার জীবনটাই একটা উপন্যাস: হাসনাত আবদুল হাই



শিবু কুমার শীল : নভেরা আহমেদকে নিয়ে উপন্যাস লিখলেন কেন? কোন বিষয়টি এই উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল?
হাসনাত আবদুল হাই : নভেরাকে নিয়ে উপন্যাস লিখলাম এই জন্য যে, নভেরার জীবন খুব ব্যতিক্রমী ছিল। সেই সময়ের নিরিখে তো বটেই, এখনকার নিরিখেও। খুবই ব্যতিক্রমী জীবনযাপন করেছে সে।  তো এইটা আমাকে আকর্ষণ করেছে। এ জন্যই তাকে নিয়ে উপন্যাস লেখার কথা ভেবেছি। এছাড়া তার জীবন ছিল খুবই বৈচিত্রপূর্ণ। সেই জীবনে অনেক কিছু ঘটেছে। এবং তিনি বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন, বসবাস করেছেন। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম... ঢাকা তো আছেই, এরপর রেঙ্গুন গিয়েছেন মূর্তি দেখার জন্য। লাহোর গিয়েছেন। মাদ্রাজ গিয়েছেন নাচ শেখার জন্য বৈজয়ন্তীমালার কাছে। লন্ডন গিয়েছেন ভাস্কর্য শেখার জন্য। লন্ডন থেকে প্যারিস গিয়েছেন ওখানে ছবিটবি দেখার জন্য। তো এভাবেই নভেরা একজন মেয়ে... মুসলমান পরিবারের মেয়ে হয়েও সেই ষাট দশক, পঞ্চাশের দশকেই এমন স্বাধীনভাবে বিচরণ করেছেন নিজের সত্তা রক্ষা করে। এবং অনেক পুরুষ বন্ধু... তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই- এটা আমার কাছে একটা উপন্যাস লেখার মতোই মনে হয়েছে। তার জীবনটাকে আমার কাছে বাস্তবের চাইতে ফিকশন বলেই বেশি মনে হয়েছে।

শিবু কুমার শীল : এই বিষয়গুলোই আপনাকে এই উপন্যাস লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে?
হাসনাত আবদুল হাই : হ্যাঁ। তার জীবনে উপন্যাস লেখার উপাদান ছিল। নভেরার জীবনটাই একটা উপন্যাস- এক কথায় বলতে গেলে। কেউ যদি না জানে, নভেরা একজন জীবিত মানুষের উপর ভিত্তি করে লেখা অথবা একজন মানুষের উপরে যিনি ছিলেন, যিনি আছেন, তাহলে মনে হবে নভেরা একটি কাল্পনিক চরিত্র।

শিবু কুমার শীল : আপনি কি বলতে চাচ্ছেন নভেরা ইটসেল্ফ এ মিথ?
হাসনাত আবদুল হাই : মিথ না। তার যে জীবন, সে জীবন এত চমকপ্রদ, এত অসাধারণ, এত অগতানুগতিক যে তাকে আটপৌরে জীবনের সঙ্গে মেলানো যায় না। আটপৌরে জীবনে অন্যরা যেভাবে জীবনযাপন করে, এমনকি শিল্পীরাও যে জীবনযাপন করে তার চাইতেও তার জীবন অনেক পৃথক ছিল, চমকপ্রদ ছিল এবং অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। যে কারণে তার জীবনযাপন মনে হয় যেন বাস্তব থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন। মনে হয় যেন এটা কাল্পনিক চরিত্র। তবে কল্পনা থেকে... কল্পনাটা যখন বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন সেটা একসময় মিথ হয়ে যায়। মিথ হতে হলে একটা সময়ের ব্যবধান লাগে। এই যে কল্পনা নভেরাকে নিয়ে, তাকে... তার সম্বন্ধে অনেক কথা, অনেক কাহিনী যা সমর্থিত নয়, যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে নয়, এগুলো সময়ের বিবর্তনে এক সময় মিথ হয়ে যাবে।

শিবু কুমার শীল : নভেরার ব্যাপারে আপনি প্রথম ইন্ট্রোডিউস হলেন কীভাবে?
হাসনাত আবদুল হাই : নভেরাকে আমি প্রথম দেখি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ শেষপর্বে পড়ি। তখন দেখেছি তিনি ইউনিভার্সিটিতে, ইউনিভার্সিটির কাছে ঘোরাঘুরি করছেন। সাদা শাড়ি পরা, সন্যাসীনির মতো, যোগিনীর মতো মাথায় চুল বাঁধা, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। তাকে এক দৃষ্টিতে দেখেই অন্যদের চেয়ে পৃথক করে বোঝা যেত। তাছাড়া সে সময় বেশি মেয়ে ছিল না। ষাটের দশকের শেষ দিকে ইউনিভার্সিটিতে খুব কম মেয়েই পড়াশোনা করত। তিনি ইউনিভার্সিটি এলাকায় এসেছিলেন কোনো কাজ উপলক্ষে। তিনি ওই সময় বিমূর্ত, অর্ধ-বিমূর্ত কিছু কাজ করছিলেন। গরু, মানুষ যেগুলো মাঝখানে হেনরি মুরের আদলে গোলাকার শূন্যস্থান আছে। সেই উপলক্ষে তিনি ইউনিভার্সিটিতে আসা-যাওয়া করতেন। তার সেই সময়ের বন্ধু এসএম আলী সঙ্গে থাকতেন। সাংবাদিক। পরে যিনি ‘ডেইলি স্টার’র  সম্পাদক হন। তো সেই ষাট সালের শেষের দিকে এসএম আলীর সঙ্গে তার খুব সুসম্পর্ক ছিল, ঘনিষ্ঠতা ছিল। দেখতাম একসঙ্গে তারা হাঁটছেন। এবং সেই সময় নভেরা কোথাও পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। যে কারণে তাকে একটা লাঠি নিয়ে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হতো। তখন নভেরাকে দেখেছি। যদিও কাছে থেকে দেখিনি। তবে সেটাই প্রথম।

ঢাকায় শেষ তাকে দেখি তিনি প্লেনে উঠছেন। তাকে এসএম আলী প্লেনে উঠিয়ে দিতে সাহায্য করছেন। ঢাকায় এই আমার তাকে শেষ দেখা। এটাও উনিশশ ষাট সালের শেষের দিকে। এরপর তাকে আমি আর কাছ থেকে দেখিনি। এই উপন্যাস লেখার পর যখন অনেক আলোচনা হচ্ছে, কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে; তার যে বোন (কুমুম হক), বোনের স্বামী তাদের পক্ষ থেকে সমালোচনা হচ্ছে, সেই সময় আমি শুনলাম তিনি প্যারিসে এবং বেঁচে আছেন। আমি একবার প্যারিস গিয়েছিলাম। তখন খুব ইচ্ছা হলো তার সঙ্গে দেখা করার। আমাদের যে দূতাবাস, সেখান থেকে বলা হলো নভেরা কারো সঙ্গে দেখা করেন না। আমি বললাম তবুও চেষ্টা করে দেখেন। তারা চেষ্টা করল এবং শেষপর্যন্ত বলল যে, গিয়ে দেখেন অমুক জায়গায় একটা বইয়ের লাইব্রেরি আছে। ওই লাইব্রেরির ভেতরে তিনি বসে থাকেন। অমি গেলাম একজন ফরাসি ড্রাইভারকে নিয়ে। গিয়ে দেখলাম লাইব্রেরির সামনে এক বিদেশি দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, ভেতরে নভেরা...। বলে, সে দেখা করবে না। কেন? বলে, তোমার উপরে খুব ক্ষুব্ধ! আমি বললাম, তিনি ক্ষুব্ধ কেন? বলে, তুমি তার সম্বন্ধে বানিয়ে বানিয়ে উপন্যাস লিখেছো। আমি বললাম, আমি তো বানিয়ে লিখিনি। তার সম্পর্কে অন্যেরা যা বলেছে সেগুলোই আমি গ্রন্থিত করেছি। আর এই গ্রন্থনার জন্য যেখানে যেখানে জোড়া দেয়া প্রয়োজন সেখানে আমি কিছুটা কল্পনার সাহায্য নিয়েছি। এছাড়া এটা মূলত সাক্ষাৎকারভিত্তিক। কেউ যদি তার সম্বন্ধে অসত্য; তারপর সঠিক নয় এমন কিছু বলে থাকে সে দায়িত্ব আমার নয়। তারপরও বলে, না সে তোমার সঙ্গে দেখা করবে না। সে খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। তখন ফরাসি ড্রাইভার আমাকে বলল, এটা লাইব্রেরি, পাবলিক প্লেস। এখানে সে আমাদের নিষেধ করতে পারে না। আমি কি পুলিশকে খবর দেব? আমি বললাম, দরকার নাই।

যখন আমি চলে আসছি তখন কাচের দেয়ালের ভেতর দিয়ে দেখলাম ভেতরে আধো আলো-অন্ধকার সেখানে। কালো একটা আলখেল্লার মতো পোষাক পরে একজন শীর্ণকায় মহিলা, এলোমেলো চুল... খুব যে সেজেগুজে আছেন তা নয়, বরং উল্টো। খুবই এলোমেলো অবস্থায় আছেন। কাপড় পুরোনো জীর্ণ, চুল অবিন্যস্ত। ঠিক নভেরাকে যেমন দেখেছি ইউনিভার্সিটিতে, সেই নভেরার ছায়া পেলাম না। যেন তার বিকৃতি আমি দেখতে পেলাম। তিনিই যে নভেরা এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারব না। আমার মনে হলো উনি নভেরা হবেন। সেই সময় ভেতরে আর কে থাকবে?



শিবু কুমার শীল : আপনার উপন্যাসের শেষের দিকে যেটা আমাকে ভারাক্রান্ত করেছে- রাশেদ নামে  লোকটি, যে কিনা তাকে বহুদিন ধরে খুঁজছে। খুঁজতে খুঁজতে সে যখন নভেরাকে পেয়ে গেল তখন আর নভেরার সামনে গেল না। কারণ, সে যে নভেরাকে খুঁজছে তিনি সেই নভেরা নন। যদিও সেটা নভেরাই ছিলেন। আপনার এই অভিজ্ঞতার সাথে প্রায় মিলে যায়। যদিও উপন্যাসটি আপনি তখন লিখে ফেলেছেন, আমার মনে হচ্ছে সেই ব্যক্তি যেন আপনি নিজে।
হাসনাত আবদুল হাই : সেই ব্যক্তির নাম রাশেদ নিজাম। তিনি ব্যাংকে কাজ করতেন লন্ডনে। নভেরার সঙ্গে তাদের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কাজিন ব্রাদার। চাচাতো ভাই। তো নভেরা অনেকদিন থেকে যোগাযোগহীন। তারা জানে না তিনি কোথায় আছেন। কিন্তু তাদের যথেষ্ট কৌতূহল ছিল তার সম্পর্কে। তারা যখন ছোট তখন থেকেই তাদের মধ্যে নভেরাপ্রীতি প্রবল ছিল। নভেরার কাছে যেতে পারলে, তার সঙ্গে কথা বলতে পারলে তারা খুবই আনন্দিত হতো। নভেরাকে খুঁজে বের করার জন্য রাশেদ নিজাম ও তার ভাই রসুল নিজাম চেষ্টা করেছে। তারা এটুকু জেনেছে যে, নভেরা প্যারিসে কোথাও আছেন। তবে কোথায় আছেন তারা ঠিক খুঁজে বের করতে পারেনি। রাশেদ শেষ পর্যন্ত এটুকু জানতে পেরেছিল যে, নভেরা মাঝে মাঝে প্যারিসের উপশহর স্ক্র্যাচবুর্গে একটা কফিশপে মাঝে মাঝে আসেন। এই তথ্য পেয়ে সে একটা চান্স নিলো- তিনি গেলেন সেখানে। সেই কফিশপে গিয়ে বসে থাকলেন। কিছু পরে দেখলেন ওই ধরনের মলিন বেশ, একটা কালো কাপড় ঠিক নভেরা যে-রকম পরতেন; নভেরা হয় খুব কালো কাপড় পরতেন, নয় খুব সাদা। কালো আলখেল্লার মতো। তারপর জীর্ণ শীর্ণ চেহারা, চুল এলোমেলো। একটা দারিদ্র্যের ছাপ তার অবয়বে। তিনি যে খুব সুখে নেই অর্থনৈতিক কারণেই এই ভাবটা খুব পরিস্ফুট। রাশেদ স্মরণ করল সেই আগের নভেরাকে- সুসজ্জিত নভেরা, সুন্দরী, রূপসী নভেরা, যুবতী নভেরা, খুব গোছালো নভেরা! কিন্তু তুলনা করে সে দেখল যে, সামনে যিনি বসে আছেন তিনি আগের সেই নভেরার প্রতিকৃতি মোটেই নন। তার ছায়াও বলা যাবে না। যেন একটা কঙ্কাল। তখন সে ভাবল এই মুহূর্তে সে যদি তার সামনে গিয়ে পরিচয় দেয়, তাহলে দুটো জিনিস হবে- নভেরা খুব বিব্রতবোধ করবেন। কেননা এই বেশে এই রূপে তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের সামনে আবার আবির্ভূত হতে চাইবেন না। তাকে রাশেদ নিজাম বিব্রত করতে চাইলেন না। দ্বিতীয় কারণ হলো, সে অতীতের নভেরাকেই মনে রাখতে চাইল। তার স্মৃতিতে আগের সেই নভেরা হাস্যোজ্জ্বল, মুক্ত বিহঙ্গের মতো চঞ্চল, সুসজ্জিতা রূপসী... বলতে গেলে দেবীর মতো একটি চরিত্র সেই নভেরাকেই সে স্মৃতিতে ধরে রাখতে চাইল। এই দুটি কারণে কাছে পেয়েও নভেরার সঙ্গে সে দেখা করল না। রাশেদ আমাকে যখন কথাগুলো বলল আমি তখনও ঠিক করিনি কীভাবে উপন্যাসটা শেষ করব। আমি যখন শুনলাম, মনে হলো এর চাইতে ভালো সমাপ্তি আর হতে পারে না।

শিবু কুমার শীল : আমাকেও বিষয়টা ইমোশনাল করেছিল এই কারণে যে, একটা মানুষকে সে হন্যে হয়ে খুঁজছে, তাকে পাবার পর তার সাথে সে আর দেখা করল না। সেই ছেলেটির জন্য এবং নভেরা- দু’জনের জন্যই একটা মমতা বা বিষাদ তৈরি হয়।
হাসনাত আবদুল হাই : এর কৃতিত্ব কিন্তু রাশেদ নিজামের। এই যে দেখা না-করা, এর মধ্যে তার ভেতর যে একটা শৈল্পিক বোধ আছে এটা বোঝা যায়। সাধারণ মানুষ হলে কিন্তু এটা করত না। সে যখন আমাকে ঘটনাটি বলল, সেই মুহূর্তে আমার মনে হলো, রাশেদ নিজামের ভেতরে একজন শিল্পী রয়েছে। একজন শিল্পীই পারে, একজন কবিই পারে এই ধরনের অনুভ‚তির বশবর্তী হয়ে নিজেকে সংযত রাখতে। এই ঘটনা শুনলে বাস্তব মনে হবে না। মনে হবে বানানো, তাই না? সুতরাং নভেরার জীবনে নভেরা নিজে যা কিছু করেছেন সেগুলো যেরকম অবাস্তব মনে হয়, তার সঙ্গে যারা পরিচিত ছিলেন তাদেরও কিছু কিছু ব্যবহার কিন্তু অবাস্তব মনে হবে। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টির মধ্যে একটা আলো আঁধারী আবহ রয়েছে।

শিবু কুমার শীল : যারা এই উপন্যাসটি লিখতে আপনাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন তাদের সম্পর্কে একটু বলেন।
হাসনাত আবদুল হাই : এই উপন্যাস লেখার প্রস্তাবনা আসে শিল্পী আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে। সুতরাং উপন্যাসটি আমি লিখেছি অনুপ্রাণিত হয়ে। তিনি যখন প্রস্তাব দিলেন, আমি বললাম, আমি তো তার সম্বন্ধে কিছুই জানি না বলতে গেলে। দূর থেকে দেখেছি। তিনি বললেন, আমি অনেক কিছু জানি সেটা আপনাকে বলব। আর অন্যেরা যারা তাকে চিনত জানত, যাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাদের কথা আমি বলব। তাদের সাথেও আপনি আলাপ করেন। এরপর আমিনুল ইসলামের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ হলো। তিনি শুরু করলেন ফ্লোরেন্স থেকে, ১৯৫৬ সালে একটা হোস্টেলে থেকে তিনি পড়াশোনা করছেন। একদিন হঠাৎ নভেরা ও শিল্পী হামিদুর রহমান সেখানে গিয়ে হাজির। তারা বললেন সেখানে থাকবেন। তখন ফ্লোরেন্সে খুবই আবাসন সংকট। চাইলেই জলদি বাড়ি পাওয়া যায় না। নিরুপায় হয়ে আমিনুল ইসলাম বললেন, তার এই রুম ছাড়া আর কোথাও যাবার জায়গা নেই, কিন্তু এই রুমে তারা তিনজন কীভাবে থাকবেন? নভেরা তখন বললেন, কেন? আমি বিছানার মাঝখানে শোব। আর তোমরা দু’পাশে দু’জন শোবে কিন্তু তোমরা কেউ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
এই কথা যখন আমি আমিনুল ইসলামের কাছে শুনি তখন আমার মনে হলো, এ যেন একটা উপন্যাসের ঘটনা। তারপর আরো গল্প শুনি আমি। আমিনুল ইসলাম ক্লাসে যেতেন, নভেরা আর হামিদুর রহমান ফ্লোরেন্স শহরে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন তিনি ফিরে এসে কাচের জানালা দিয়ে দেখেন নভেরাকে মডেল করে হামিদুর রহমান ছবি আঁকছেন। নভেরা প্রায় অর্ধনগ্ন হয়ে আছেন। এভাবেই তারা তিনজন ফ্লোরেন্সে অগতানুগতিক একটা জীবনযাপন করছিলেন। সকালে কাপড় পাল্টানোর জন্য শাড়ি দিয়ে পর্দা করা হয়েছিল, আর নভেরা পর্দার ওপাশ থেকে বলতেন- এই তোমরা কেউ কিন্তু তাকাবে না।
ফ্লোরেন্সে থাকতেই নভেরা এক ইতালিয়ান শিল্পীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ থেকে বোঝা যায় নভেরা পুরুষ বন্ধুদের ব্যাপারে খুব উদার ছিলেন। যাকে তার ভালো লাগতো তাকেই তিনি কাছে আসতে দিতেন। এই সম্পর্কগুলো দৈহিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছিল কিনা জানার উপায় নেই। তিনি পুরুষদের সাথে মেলামেশায় প্রমিসকিউয়াস ছিলেন। অনেকের সাথে মিশেছেন। তবে এই অনেকেই মানে যে কেউ না। যাদের সাথে তার রুচির মিল ছিল, ছবি আকা বা ভাস্কর্যের নেশা ছিল, তাদের সঙ্গে তিনি মিশতেন। তাদেরকে তিনি প্রশ্রয়ও দিতেন। কিন্তু তা যে খুব রুচিহীনতায় গিয়ে পৌঁছেছে এই কথা কেউ বলেনি। কিন্তু পুরুষ তো পুরুষই। তার পুরুষ বন্ধুদের মধ্যে কেউ হয়তো আরো ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছেন, হয়তো শারীরিক সম্পর্ক করতে চেয়েছেন। এটা খুব স্বাভাবিক, অনুমান করা যায়। তাদের এই বাসনা বা কামনা তারা চরিতার্থ করতে পেরেছিলেন কি না অজানাই থেকে যায়। আমিনুল ইসলামের সেসব গল্প থেকে আমি জানতে পারি, নভেরা আসলে শুধু ভ্রমণের জন্য ফ্লোরেন্স যাননি। বরং গিয়েছিলেন সেখানকার শিল্প দেখতে। ফ্লোরেন্সে রয়েছে অনেক নামকরা ভাস্কর্য, মাইকেলএঞ্জেলো-সহ অন্যান্য ভাস্করের ভাস্কর্যও রয়েছে। সেখানে একজন শিক্ষকের কাছে কিছুদিন তিনি পড়াশোনাও করেছিলেন। ফ্লোরেন্সের পার্কে তিনি এমন ভাস্কর্য বানিয়ে বাচ্চাদের দিয়েছিলেন যাতে তারা সেগুলো নিয়ে খেলতে পারে।

এরপর আমিনুল ইসলাম লন্ডন যান ১৯৫৫ সালে। সেখানে নভেরার সাথে তার দ্বিতীয়বার দেখা হয়। লন্ডনে নভেরার বন্ধুদের আড্ডায় তিনি যান। ঘরের ভেতর দেখা যেত সবাই নভেরাকে ঘিরে বসে আছে। অনেক ঠান্ডা থাকায় চুলোর মতো ছিল যাতে কয়েন দিলে ঘর গরম হতো। নভেরা যখন বলতো, ঘর ঠান্ডা হয়ে গেল তখন চারপাশে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত কে আগে পয়সা দেবে। আমাকে এভাবে আমিনুল ইসলামই প্রথম নভেরা সম্পর্কে তথ্য দেন।
তারপর আমার ফ্ল্যাটে নভেরাকে যারা চিনতেন, তাদের আমন্ত্রণ জানালাম। সকালে আসবেন, নাস্তা করবেন, নভেরা নিয়ে কথা বলবেন, দুপুরে খাবেন, আবার বিকেলেও আলোচনা হবে। সেই আমন্ত্রণে সারা দিয়েছিলেন খান আতাউর রহমান, চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, এসেছিলেন কবি শামসুর রাহমান, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, মুর্তজা বশীর। তারা সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন, আর আমি একেকজনের কাছে গিয়ে নভেরা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। যেমন কবি শামসুর রাহমান বললেন, তিনি নভেরাকে দেখেন পুরান ঢাকায় হামিদুর রহমানের বাড়িতে। যে বাড়িতে নভেরা আর হামিদুর রহমান লন্ডন থেকে এসে একসাথে থাকা শুরু করলেন। ১৯৫৬-এর ঢাকা তাও আবার পুরান ঢাকা, খুব রক্ষণশীল সমাজ। সেখানে এটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সময়টা অনগ্রসর, নারী স্বাধীনতার কথা ওঠেনি। মেয়েরা বাইরে খুব কম বের হয়। স্কুলে কলেজে অনেক কম মেয়ে পড়াশোনা করে। সেই সময় অবিবাহিতা এক নারী ও পুরুষ একসাথে থাকা কল্পনার বাইরে। যদিও তারা একই ঘরে থাকতেন না, নভেরা থাকতেন উপরের ঘরে আর হামিদুর নিচতলায়। এখনো এই সমাজে এই ঘটনা শুনলে চমকে উঠতে হয়। বিদেশের লিভ টুগেদার সম্পর্কে আমরা শুনেছি কিন্তু এদেশে এখনো তা অবিশ্বাস্য ব্যাপার, আর এ তো ১৯৫৬ সালের কথা। যাই হোক, শামসুর রাহমান সেখানে গিয়ে দেখেন তাদের কাছে খাবার পাঠানো হতো। হামিদুরের মা নভেরাকে মেয়ের মতো স্নেহ করতেন। শামসুর রাহমান স্বীকার করেছিলেন, সেখানে তিনি যেতেন নভেরার আকর্ষণে। নভেরা যেহেতু ছিলেন সুন্দরী ও আধুনিকা। শামসুর রাহমান এই কথা বলেছিলেন যে, গেলেই নভেরার দেখা পাওয়া যেত না। তাকে বসিয়ে রেখে নভেরা সেজেগুজে তারপর আসতেন। বিনা সাজসজ্জায় সাধারণ পোষাকে তিনি কারো সামনে যেতেন না। সারাজীবন তিনি তাই-ই করেছেন, তবে শেষ জীবনে তা পারেননি। তিনি যদি সুন্দরী নাও হতেন তবুও হয়তো তিনি এভাবেই সেজেগুজে আকর্ষিত করার জন্য আসতেন। এটা তার চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে গিয়েছিল।

এরপর আমি খান আতাউরের সামনে বসি। তিনি বললেন নভেরার সাথে তার দেখা হয় লন্ডনে। খান আতা তখন বিবিসিতে চাকরি করছেন। সেই সাথে সিনেমাটোগ্রাফি শেখার চেষ্টা করছেন। তিনি নভেরার সাথে বেশ কয়েকবার কফি শপে দেখা করেন। তার কথায় নভেরাকে নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নভেরার সাথে সিনেমা নিয়ে আলাপ করতে যেতেন না। নভেরার সিনেমা নিয়ে আগ্রহ ছিলো না। তিনি ভাস্কর্য নিয়েই মেতে ছিলেন। সেই সময় নভেরা কিছু দর্শনের বিষয় নিয়েও নাকি পড়াশোনা শুরু করেন। আমি আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলাম- কোন দর্শন, নভেরা তো তেমন পড়াশোনা করেননি। খান আতা বললেন, তখন বুদ্ধিজীবী মহলে Sartre এর Existentialism খুব জনপ্রিয়। শিল্পীরা এ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। হয়তো সেই হুজুগে নভেরা এর প্রতি আকর্ষিত হয় এবং এ নিয়ে কিছু পড়াশোনা করে। এ থেকে বোঝা যায় মানুষ হিসেবে নিজের বাহ্যিক দিকে যেভাবে নজর রাখতেন, তেমনি শিল্পী হিসেবেও তিনি নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করছিলেন।



তারপর আমি যাই সৈয়দ জাহাঙ্গীরের কাছে। ১৯৫৬/৫৭-এর দিকে তিনি যখন লাহোর ছিলেন, তখন এসএম আলীর সাথে নভেরা সেখানে যান। কারণ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তিনি কাজের অর্ডার পাচ্ছিলেন না। ভাস্কর্য এমন জিনিস, যা একা একা তৈরি করে ঘর ভরিয়ে রাখা যায় না। কেউ আর্থিকভাবে সাহায্য করলে তারপর এটি তৈরি হয়। এখানে তেমন কেউই ছিলেন না। ফলে নভেরা ভাবলেন, লাহোর গেলে হয়তো কিছু কাজ পাওয়া যাবে। সেখানে নভেরা ও এসএম আলী একটা এপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করলেন। সেখানেই জাহাঙ্গীর তাকে দেখেন। দেখে তার মনে হয়েছিল, সে খুব উচ্চাকাক্সক্ষী, অনেক উপরে ঊঠতে চায় এবং তার জন্য যা কিছু করা দরকার তা করতে সে প্রস্তুত। নভেরা খুব পরিশ্রমী এবং তার মধ্যে নিষ্ঠা ছিল বলে জাহাঙ্গীর জানায়।
লাহোরের সেই বাড়িতে শিল্পী মুর্তজা বশীরের সাথেও নভেরার দেখা হয়। মুর্তজা বশীর বলেছিলেন, নভেরাকে তার একটু অহঙ্কারী মনে হয়েছে। সেটা নিজের কাজের জন্য না-রূপের জন্য, তা তিনি জানেন না। এই ধারণা কিছুটা নেতিবাচক। হয়তো কম দেখা হয়েছে বলেই আসল নভেরাকে তিনি চিনে উঠতে পারেননি। এ রকম হতেই পারে, সবাই তো সবসময় একই মুডে থাকেন না।

মুর্তজা বশীর এক তথ্য দিলেন, লাহোরেও যখন নভেরা কাজ পেলেন না, তখন তিনি ভাবলেন তিনি নাচ শিখবেন। ভরতনাট্যম শিখতে তিনি মাদ্রাজে বৈজন্তীমালার কাছে গেলেন। তিনি বৈজন্তীমালার কাছেই সরাসরি শিখতেন নাকি সে সম্পর্কে সঠিক কেউ জানে না। কিন্তু তিনি যে নাচ শিখেছিলেন কিছু দিন সে কথাটি সুপ্রতিষ্ঠিত। এটাও তার জীবনের আরেক দিক, ভাস্কর্য শেখার পাশাপাশি ধ্রুপদী নাচ শেখার ব্যাপারেও তার আগ্রহ ছিল। সেসময় মাদ্রাজ যাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার, অনুমতির ব্যাপারও ছিল। কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে নভেরার যে নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায় তার পরিচয় পাই আমরা।
সাঈদ আহমেদ আমার এই আমন্ত্রণে আসতে পারেননি। আমি তার বাসায় যাই ইন্টারভিউ নিতে। তিনি নভেরা সম্পর্কে আমাকে অনেক কথা বলেছেন। সাইদ ভাই খুব রসিয়ে ঢাকাইয়া ভাষায় নভেরার কথা বলতেন। একটা কথা বারবার তিনি বলেছেন যে, নভেরাকে দেখে মনে হতো জীবনে সে কি চায় এ  সম্পর্কে নিশ্চিত না। নভেরা খুব চঞ্চল ও অস্থির ছিল। তিনি বারবার বলেছেন- she did not knwo who she was. তিনি বলতে চেয়েছেন নভেরার মধ্যে অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব ছিল। এই মূল্যায়ন আমার কাছে সঠিক মনে হয় না। কারণ প্রথম থেকেই নভেরা ভাস্কর হতে চাইতেন। সাইদ ভাইয়ের কথাটি অন্যান্য পুরুষের সাথে নভেরার যে সম্পর্ক সে ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। তার অনেক বন্ধু ছিলো, কোন পুরুষের সাথে তার কী রকম সম্পর্ক থাকা উচিত সেটা হয়তো তিনি নির্ধারণ করতে পারেননি।
ভাস্কর্যের বইগুলো সব ইংরেজিতে হওয়ায় নভেরাকে এ ব্যাপারে সাঈদ ভাই সাহায্য করতেন। লন্ডনে যেখানে নভেরা থাকতেন, বাড়ির মালিক ভাড়া না দেওয়ায় তাকে চাপ দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় লন্ডনে তিনি খুব একটা স্বচ্ছল জীবনযাপন করতেন না। মাঝে মাঝে সংকটে পড়েছেন। তবে পড়াশোনাটাকে তিনি খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন। পড়বার জন্য তিনি প্যারিস যান, তখন সাঈদ ভাইও যান সেখানে সেতার বাজাতে। প্যারিসে গিয়ে নভেরা অনেক জাদুঘরে গিয়েছেন, কাজ দেখেছেন, আলোচনা করেছেন। সাঈদ ভাই বলেছিলেন অনেকেই বলেছে নভেরা শহীদ মিনারের নকশায় কাজ করেছেন- এটা ঠিক না। এটা পুরোপুরি হামিদুর রহমানের কাজ। তিনি এসব নিয়ে নিবন্ধও লিখেছেন। আমি আমার বইতে লিখেছি, তখন শহীদ মিনারের সামনে তাবুতে কাজ করতেন নভেরা আর হামিদুর। তাদের জন্য খাবার আসতো। একজন ভাস্কর হয়ে নভেরা শুধু সেখানে গল্প করতেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি হয়তো নকশার ব্যাপারে হামিদুর রহমানকে সাহায্য করেছেন বা এঁকে হয়তো সাহায্য করেছেন- এটা স্বাভাবিক। তিনি হয়তো মূল নকশাকারী নন কিন্তু ডিজাইন তৈরির ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল। শহীদ মিনারের পেছনে শুধু একজন কাজ করে গেছেন এটা বললে বোধহয় ভুল হবে।

শিবু কুমার শীল : এর আগে আপনি এরকম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস লিখেছেন?
হাসনাত আবদুল হাই : হ্যাঁ লিখেছি শিল্পী এসএম সুলতানকে নিয়ে। তবে লিখতে গিয়ে আমাকে তেমন বেগ পেতে হয়নি। তিনি তখন জীবিত ছিলেন। তার সাথে আমি নানা জায়গায় ঘুরেছি, আলাপ করেছি। যেসব গ্রামে তিনি যেতেন, সেখানে গিয়েছি। তাকে যারা চিনতো তাদের সাথে আলাপ করেছি। কিন্তু নভেরাকে নিয়ে লিখতে কষ্ট হয়েছে। কারণ তার খুব কম ভাস্কর্য এ দেশে আছে। সুতরাং কাজ দিয়ে যে তাকে মূল্যায়ন করবো তার বেশি সুযোগ ছিল না। তবুও তার কাজ নিয়ে আমি লিখেছি। এটা শুধু জীবনী নয় তার শিল্পকর্মও এর মধ্যে এসেছে। শিল্পীর জীবন তার শিল্পকর্মের সাথেই জড়িত। ব্যক্তি নভেরা ও শিল্পী নভেরা দু’জন আলাদা হয়ে থাকেনি। এই বইটিতে আমি তার জীবন নিয়ে যখন বলেছি পাশাপাশি তার শিল্পকর্ম নিয়েও বলেছি। তিনি হেনরি ম্যুরের প্রভাবে ছিলেন বা আমাদের লোকজ পুতুলের আকৃতির ব্যবহার- এসব নিয়েও আমি কথা বলি। এভাবে আমি পূর্ণতা আনার চেষ্টা করি। যাই হোক, বইটি লিখে আমি সন্তুষ্ট। তবে কিছুটা অতৃপ্তি আছে। আরো তথ্য পেলে ভালো হতো। উপন্যাস হিসেবে তা সফল আমি মনে করি। এই উপন্যাসের একেক অংশ একেক আঙ্গিকে লেখা। কয়েকটা নাটকের মতো সংলাপধর্মী, আবার আছে ডায়েরির মতো, চিন্তা করে দেখলাম সে ডায়েরি লিখছে এটা উপস্থাপন করলে খুব অল্প কথায় অনেক বছর দেখানো যাবে। পুরোটাই অনুমানের উপর।

শিবু কুমার শীল : নভেরা বিষয়ে আপনার সর্বশেষ মূল্যায়ন কী? আপনি তাকে আজকের প্রেক্ষাপটে কতটা মৌলিক মনে করেন? একজন ভাস্কর হিসেবে তার সার্থকতা কি কেবল ঐতিহাসিকতায়?
হাসনাত আবদুল হাই : নভেরাকে স্বীকৃতি দিতে হবে প্রথম মহিলা ভাস্কর হিসেবে। তার তেমন কাজ আমরা দেখি না। কিছু কাজ আছে হোয়াইট সিমেন্টের। কয়েকটা আছে জাতীয় জাদুঘরে। তা থেকে মনে হয়েছে তিনি হেনরি ম্যুর দ্বারা প্রভাবান্বিত ছিলেন। তিনি পাবলিক লাইব্রেরিতে একটা ম্যুরাল করেন। সেখানে ময়মনসিংহের পুতুলের আকার ছিল। তা থেকে মনে হয়েছে তিনি দেশীয় অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন। কিন্তু এই একটা ম্যুরালে তিনি স্বকীয়তা তুলে ধরতে পারেননি। নিজস্বতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। হয়তো আরো সময় পেলে, বা আর্থ-সামাজিক সাহায্য পেলে তিনি তা করতে পারতেন। কেননা তাহলে তিনি আরো কাজ করতেন, অনেক কাজ করলে নিজের জায়গা খুঁজে পেতেন। সব শিল্পীই এভাবে কাজ শুরু করে অন্যের অনুপ্রেরণা নিয়ে, ধীরে ধীরে নিজের শৈলী খুঁজে পান। কিন্তু নভেরা পারেননি। কারণ তার কোনো পৃষ্ঠপোষক ছিল না। ফলে একজন বলিষ্ঠ ভাস্কর তিনি হয়ে উঠতে পারেননি।  






রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়