ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিল্পী জামাল আহমেদের ছবিযাপন

কামালুদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিল্পী জামাল আহমেদের ছবিযাপন

River (Buriganga), Charcoal & pastel on paper

|| কামালুদ্দিন ||

‘অনেকদিন হয়ে গেল ছবি করার কথা ভাবছি কিন্তু এত দিনেও ক্যামেরাটা কোথায় বসাবো ভেবে পাচ্ছি না’- এটি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়-এর কথা। আমিও তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না, জামাল আহমেদের মতো বিদগ্ধ একজন শিল্পীকে নিয়ে কোথা থেকে লিখবো? তবু আমার কলমের কালি যেদিকে গড়িয়ে বা ছড়িয়ে যায় সেই পথ ধরে লিখে যাবো।

সত্যিকারার্থে শিল্পীর ছবির পথ কতটুকু প্রশস্ত সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে পথটি যে বহু দীর্ঘে একথা বললে অত্যুক্তি হবে না। সেই দীর্ঘ পথটি যে খুব সুচারু বা সুবিন্যস্ত তা কিন্তু নয়। সেই পথটির শরীর দেখলে বোঝা যায় কত জায়গায় অঙ্গহানি হয়েছে। তবু শিল্পীরা সেই পথ ধরে এগিয়ে যায় অদৃশ্য শিল্প-মন্দিরে। আমার মনে হয় পৃথিবীর কোনো শিল্পী সেই শিল্প-মন্দিরের উঠোনও ছুঁতে পারেননি। শিল্প-মন্দিরটি বরাবর অধরাই রয়ে গেছে। যেখানে স্প্যানিশ শিল্পী গঁয়্যা একাশি বছর বয়সে বলেছিলেন- আমি এখনও শিখছি। শিল্পী জামাল আহমেদও জীবন চর্চা যতটুকু করেছেন তার চেয়ে ঢের বেশী করেছেন ছবি চর্চা। তিনি ছবিযাপনের ভেতর দিয়ে জীবনযাপন করেছেন। তাঁর ছবিযাপনে কোনো বেষ্টনি ছিল না, তাই অবাধে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকতো তাঁর চিত্রাঙ্গন। যেমন- শিল্পী, শিল্পরসিক, কলাতাত্ত্বিক, শিল্পের সমঝদার, শুভানুধ্যায়ী এবং ছবির মডেল প্রভৃতি।

প্রসঙ্গক্রমে শিল্পীর মডেল বিষয়ে দু’ছত্র বলি। যেমন শিল্পীর ভুখা সাদা শূন্য পরিসরটি ছবি হয়ে ওঠার পেছনে ফিগারেটিভ পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে মডেলের অবদান অনস্বীকার্য। প্রয়োজনের খাতিরে শিল্পীর চোখে মডেলরা কখনো দেবতুল্যও হয়ে যায়। তবে বেশীরভাগ শিল্পী মডেল-দেবতাকে পূজা দেয় তার ছবি শেষ হওয়া অবধি। যখনই আসনস্থিত মডেল কাজ শেষে স্থান ত্যাগ করে শিল্পীর সাদা পরিসরে গিয়ে শিল্প হয়ে জায়গা করে নেয়, তখনই শিল্পীর পূজার থালায় ফুলের একটি পাপড়িও থাকে না। সেক্ষেত্রে শিল্পী জামাল আহমেদ একেবারেই অন্যরকম। তাঁর প্রতিটি মডেল অহর্নিশ শিল্পতুল্য, তারা ব্রাত্যজন নয়। সেসব মডেল তাঁর স্টুডিওতে বসতি স্থাপন করতেন। তিনি তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন সেটা ইতোমধ্যে অনুমেয়। এমনও হয়েছে মাঝেমধ্যে তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখতেন, মডেল ঘুমাচ্ছেন স্টুডিওতেই। তখন সাথে সাথে ছবি আঁকা শুরু করে দিয়েছেন এবং এক একটা তুলির টান মনে হচ্ছে ঘুম পাড়ানি গান! মডেল ঘুম থেকে জেগে দেখতেন, তারই প্রতিচ্ছবির ঘুম তখনো ভাঙেনি!

Pigeons-3, Charcoal & pastel on paper


শিল্পী জামাল আহমেদ হচ্ছেন ছবিওয়ালা, যার ছবিতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্যময় বিষয়-বিন্যাস, মাধ্যমের স্বকীয়তা, চিত্রের পরিমিতিবোধ, পারঙ্গমতা ও চিত্রের কম্পোজিশনের অত্যধিক সরলতা। আমি মনে করি শিল্পীরা ছবি আঁকেন না, নিজেকে আঁকেন, কারণ প্রত্যেকটা শিল্পীর আলাদা স্বকীয়তা আছে। সেই স্বকীয়তাই হচ্ছে নিজের প্রতিবিম্ব। আর শিল্পীর চিত্রপরিসর হচ্ছে শিল্পীর আয়না। তাই দর্শকরা প্রত্যেকটি ছবিতে যিনি আঁকছেন ওই শিল্পীকে খুঁজে পান। সৃষ্টির জন্য স্রষ্টার যেমন উদ্বেল আকুতি রয়েছে তেমনি শিল্পের জন্য অনির্বচনীয় আকুতি রয়েছে শিল্পীর। শিল্পী জামাল আহমেদের ছবিতে বাস্তবের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মুখ্যতা কম। শিল্প সৃষ্টিতে বাধার বাঁধ ভেঙে গেছে অনেক আগেই। তাতে রিয়েলিজমেরও কোনো মান-অভিমান নেই। কিউবিস্ট তো স্পষ্টই বলে নিয়েছেন যে, তিনি জগতের নিখুঁত ছবির মতো শিল্প সৃষ্টিতে উৎসাহী নন; তাঁর উদ্দেশ্য মনের অস্পষ্ট আকৃতির দৃশ্যরূপ দেওয়া।

তবে তাঁর ছবিতে আছে অনুধ্যান। তাঁর ছবির বিশেষ অভিজ্ঞান হচ্ছে ধুলোবালির আস্তরণ যেনো উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। উপরন্তু এই ধুলোবালিই আমাদের দেশের সহজাত আবরণ। এই ধুলোবালি ঝেড়ে আমাদের প্রকৃতি আঁকলে ওই চিত্রে আমাদের দেশকে খুঁজে পাবো না। পিকাসোর কথায় বলি: ‘প্রকৃতি না-থাকলে শিল্পীও থাকে না। প্রকৃতিকে পুনঃনির্মাণ করতে গিয়ে শিল্পী তাকে অপমানই করেন।’ তা যেনো না হয়; আমাদের প্রকৃতি এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়। আমাদের দেশের গায়ের উপর ধুলোবালি মাখা একটি আবরণ আছে যা ছবির একটা টোনকে গায়েব করে দিয়েছে।

শিল্পী জামাল আহমেদের একক প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়ে গেলো গত ১০-২৪ নভেম্বর ২০১৮, উত্তরায় স্বনামখ্যাত গ্যালারি কায়াতে। চারকোল, পেন্সিল এবং প্যাস্টেল মাধ্যমের মোট বিয়াল্লিশটি চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে উক্ত গ্যালারিতে। প্রদর্শনীটির শিরোনাম হচ্ছে ‘Chronicles in Charcoal’. কাঠ কয়লার ধারা বিবরণী। সম্পূর্ণ ড্রয়িংনির্ভর প্রদর্শনী। ড্রয়িং কথাটার ভাবগত অর্থ হচ্ছে- রূপ নির্মাণের বিশেষ এক ভাষা।

প্রদর্শনীতে Racing Stallions ছবিতে পাঁচটি ঘোড়া দেখা যাচ্ছে সামনের দিকে ধাবমান। যেন দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবী কাঁপানো বীরযোদ্ধা দ্য গ্রেট আলেকজান্ডারের ঘোড়া যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রিহার্সেল করছে। চিত্রতলের ধুলোবালির যে গর্জন তাতে মনে হয় মাটিতে শিল্পী ড্রাই প্যাস্টেলের গুড়ো মেখে দিয়েছেন। ঘোড়া হচ্ছে শৌর্য বির্যের প্রতীক যেখানে প্রতাপ, সৌন্দর্য্য, গাম্ভীর্য্য, অহঙ্কার, তেজ সবই আছে কিন্তু হিংস্রতা নেই। এই ছবিতে একটি জিনিস লক্ষণীয় ঘোড়াগুলোর দৃষ্টিপাত সামনে, ডানে-বামে তাকালেও পেছনে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ বীরবাহী ঘোড়াও বোঝে পশ্চাৎপদ শুভক্ষণের দেহে পুরু আস্তরণ টেনে দেয়।

Racing Stallions, Charcoal & pastel on paper


river(buriganga) চিত্রের কিছু নৌকা দিগ্বিদিক ছুটছে আর অনেকগুলো জাহাজ দেখে মনে হচ্ছে অনেক দূরের অজানা পথ ডিঙিয়ে ক্লান্ত হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে জিরিয়ে নিচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। ওপারে অপরিকল্পিত গজিয়ে ওঠা শহরের কিয়দাংশও পিছু ছাড়েনি শিল্পী জামাল আহমেদের ছবিতে। তবে তাঁর এই বুড়িগঙ্গা সাম্প্রতিক সময়ের ক্ষতবিক্ষত সম্ভ্রম হারানো মৃত বুড়িগঙ্গা নয়। তাঁর ছাত্রজীবনের সেই সতেজ চোখে দেখা বুড়িগঙ্গা, যেখানে জলের স্নিগ্ধতা বা স্বচ্ছতা বিদ্যমান। গঙ্গা নদী হয়তো বা অনেক আগে জানতো একদিন তার শাখা নদী চৌহদ্দি ডিঙিয়ে ঢাকায় গিয়ে বুড়িয়ে যাবে এবং সেইসঙ্গে নবীনতা হারাবে। তাই মনে হয় আগেই নামকরণ করেছেন- বুড়িগঙ্গা।

উল্লেখ্য, শিল্পী জামাল আহমেদ যিনি পায়রার জন্য বেশ আলোচিত শিল্প সংগ্রাহক পাড়ায়। যার পায়রা গুলশান, বনানীর বাসায় বাসায় উড়ে বেড়াচ্ছে। গ্যালারি কায়ার প্রদর্শনীতে এমনই pigeon সিরিজের অনেকগুলো পায়রার ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যেনো গ্যালারিজুড়ে শান্তি বিরাজ করছে। খোদ শিল্পীই বলেন, ‘সবাই যদি ছবি বুঝতো আমি পায়রা আঁকতাম না।’ তাঁর চিন্তা-চেতনায় ছিলো- শিল্প বাঁচুক শিল্পী বাঁচুক। তাই শিল্পান্দোলনের এটি একটি পথ পরিক্রমা। তিনি চেয়েছেন আগে মানুষ শিল্প বুঝতে শিখুক, শিল্পকর্ম সংগ্রহ করুক। একদিন এমনিতেই মানুষ শিল্পের সমঝদার হবে, শিল্পানুরাগীতে পরিণত হবে, তাতে একদিন এই জাতি শিল্পিত জাতি হিসেবে উদ্ভাসিত হবে বিশ্বের শিল্পালোকে। যেখানে অনেক আগে থেকে স্বামী বিবেকানন্দ শিশুদেরকেও শিল্প বুঝতে শেখার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘শিশুরা যদি বেদ বুঝতে পারে শিল্প কেনো বুঝতে পারবে না।’ তাই শিল্পী জামাল আহমেদও এমন মহতি চিন্তায় সামিল হয়েছেন।

প্রদর্শনীর অনেকগুলো চিত্রে শিল্পী নারী দেহের নানাতল বিনির্মাণ করেছেন চারকোল, ড্রাই প্যাস্টেলে। কখনো রূপ, রস,কখনো নানাবিধ শরীর চক্র। কিছু চিত্রে কামজ বাসনা, আবার কিছু চিত্রে যৌবনের উচ্চকিত অনুকম্পা। উপরন্তু সব নারীই এমন বিশেষণের তোয়াক্কা করে না যেমন- The girl with pigeon- 3 চিত্রে দেখা যাচ্ছে মুহ্যমান একটি কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে মাথায় কমলা রঙের ফুল লাগিয়ে কী অদ্ভুত সুষমা ছড়াচ্ছে। হাতে একটি পোষা পায়রা এসে বসে আছে এবং সর্বত্র কালো বর্ণের লেপনে চিত্রভূমিতে আঁধার নেমে এসেছে। সেই আঁধারে যেন এক টুকরো জ্যোৎস্না। মেয়েটি কিসের যেন প্রহর গুনছে। এখানে কোনো লোলুপতা নেই, কামগন্ধহীন শুধু সৌন্দর্য চিত্রনের অস্ফুট অনুরণন রয়েছে গোটা পরিসরে ।

Rabindranath Tagore, Charcoal & pastel on paper


তাঁর চিত্রভূমিতে যেসব মানুষ ফসল ফলিয়েছেন সেসব মানুষেরা শ্রমক্লিষ্ট কাদাজলমাখা রোদে পুড়ে যাওয়া কৃষক, শ্রমিক, মজুর এবং বাউল। তাঁর মানুষগুলোর গায়ের রঙ সাদা ইউরোপিয়ানদের মতো নয়, তাদের গায়ে অনেক রঙের সংমিশ্রণ আছে। নদীমাতৃক এই ভূগোলে যাদের অন্তরে স্বতঃপ্রবাহিত ভাটিয়ালী গান। শিল্পী নন্দলাল বসুর মতে- ‘ঈশ্বর নাকি কালার প্যালেটের সব রঙ আমাদের ভারত বর্ষের মানুষের গায়ে লাগিয়েছেন। যার ফলে ইউরোপের মানুষের গায়ে কোনো রঙ দিতে না পারায় সাদা ক্যানভাসের মতো থেকে গেলো।’

প্রদর্শনীতে The old man of old Dhaka ছবিতে দেখা যাচ্ছে জীর্ণকড়ি খসে পড়া যৌবনশূন্য একজন মানুষ উপরাভিমুখ হয়ে কী যেন দেখছে। এই পৌঢ় মানুষটির জীবন প্রদীপের সলতে ও তেল দুটোই ফুরিয়ে আসছে। তার জীবনালেখ্যের রঙে গোধূলী নেমে আসছে। অল্পক্ষণ পরেই সূর্য-বাতি নিভে যাবে। পেছনে বৃদ্ধ শহরটির ক্ষত-বিক্ষত গায়ের চামড়া মাটিতে পড়ে যাওয়ায় শীর্ণকায় হয়ে শীতে কাঁপছে আর জায়গাজুড়ে সাদা কুয়াশা যেন ধুম্রজাল তৈরি করে রেখেছে।

তা ছাড়া গ্যালারিতে অনেক ভিড়ের মাঝেও দুটি মহান মানুষের উপস্থিতি আরো মহিমান্বিত করেছে প্রদর্শনীটিকে। পাশাপাশি দুটি শ্রদ্ধাঞ্জলি ঝুলছে দেয়ালে। একজন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অপরজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল খুবই ভক্তি শ্রদ্ধা করে রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’ বলে ডাকতেন। এদিকে রবীন্দ্রনাথও ভীষণ স্নেহ করতেন নজরুলকে। শিল্পী এখানে রবীন্দ্রনাথকে কিছুটা কালো বানিয়েছেন। তবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথায় (১০৯ নং পৃষ্ঠায়) রবীন্দ্রনাথের মা তার ছেলের গায়ের রঙ নিয়ে বলেন: ‘সব ছেলেদের মধ্যে রবিই আমার কালো। সেই কালো ছেলে দেখো জগৎ আলো করে বসে আছে।’ এদিকে নজরুলকে দেখতে পাচ্ছি দেহটি যেন নিজের না, তাই বোধহয় ঢিলেঢালা ভাব। তাঁর মৃত্যু ঘণ্টার রোমন্থন কিছুতেই থামছে না। অসুস্থ নিশ্চল দেহের ক্লেশ কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে কেটেছে এমনই । তাঁর এই প্রতিকৃতিতে বিদ্রোহের তেজ নেই।

The old man of old Dhaka, Pencil on paper


প্রদর্শনীর প্রতিটি চিত্রে রেখা, টোন ও মৃদু আলো-ছায়ার সম্মিলন দেখিয়েছেন শিল্পী। এমনিতেও শিল্পী জামাল আহমেদের ছবিতে রসের দখলদারীত্ব বেশী, তবে বাস্তব শৈলী চিত্রের রৌদ্রকরোজ্জ্বলের প্রক্ষেপণ নেই, আছে নিজের প্রজ্ঞার আলো-ছায়ার প্রলেপ। তাঁর ছবিতে দেশমাতৃকা ও দেশাত্ববোধের জয়ধ্বনির সুর-স্বচ্ছন্দের বিভা আছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ডিসেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়