ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রক্তাক্ত তটরেখা

লঞ্চ-ট্রেনের যাত্রীরাও রক্ষা পায়নি

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২১ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লঞ্চ-ট্রেনের যাত্রীরাও রক্ষা পায়নি

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। মার্চে মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারা দেশ। সবার প্রত্যয় ছিল একটাই- দেশকে শত্রুমুক্ত করা। যুবক-তরুণরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর অবশেষে আসে মুক্তি। সারা দেশের ন্যায় মুক্তি সংগ্রামের সেই ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল উপকূলীয় জনপদের তটরেখা পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধের সেইসব ঐতিহাসিক তথ্যাবলী নিয়ে ধারাবাহিকের আজকের পর্বে খুলনা জেলা

ট্রেনযোগে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যাত্রীরাও রেহাই পায়নি পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনীর হাত থেকে। লঞ্চ-স্টিমারের যাত্রীদের ওপরও চলেছে বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ। খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চলেছে বাঙালিনিধন। এপ্রিল-মে মাসের দিকে খুলনা রেল স্টেশনে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ছিল ট্রেনের যাত্রী। ফেরিঘাট বধ্যভূমির অধিকাংশ ছিল লঞ্চ-স্টিমারের যাত্রী। বেরিকেড দিয়ে এদের ধরা হতো। এরপর এদের লুটপাট করা হতো। অবশেষে গুলি করে হত্যা। লাশগুলো যাতে নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, সেজন্যে হত্যার পর লাশের পেট চিরে নদীতে ফেলা হতো। ’৭১-এর এপ্রিলের দিকে দৌলতপুরের দিক থেকে কয়েকটি লঞ্চ আসছিল খুলনার দিকে। লঞ্চগুলো যাত্রীভর্তি ছিল। সকলের মনেই বাঁচার আকুতি। কিন্তু তারা আর বাঁচতে পারেনি। খুলনার চরের হাটের পাকিস্তানি সেনারা একে একে সব লঞ্চ থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে ফেলে। তাদের সবকিছু লুণ্ঠন করে। এরপর শুরু হয় হত্যাকাণ্ড। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে এদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত হয় অন্তত ৫০০ নিরীহ বাঙালি।   

১৯৭১ সালে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে খুলনার অনেক স্থানে। বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু বধ্যভূমি তারই সাক্ষ্য বহন করছে। রেল স্টেশন, রেল কলোনি সংলগ্ন ডোবা, ফেরিঘাট, শিকারপাড়া, গল্লামারী, গোয়ালখালী, ক্রিসেন্ট জুটমিল, ফরেস্ট ঘাট, কাস্টমস ঘাট, কান্তপুর, চরের হাট, চুকনগর, আজগড়া, সেনের বাজার, পাইকগাছা, দুর্জনীমহল, প্লাটিনাম জুটমিল, শলুয়া এবং নিউজপ্রিন্ট মিল বধ্যভূমি আজও হাজারো মানুষকে কাঁদায়।

চুকনগর হত্যাকাণ্ড খুলনা অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। এখানে নির্মমভাবে হত্যার শিকার বহু মানুষের স্বজনরা আজও কেঁদে ফেরেন। দিনটি ফিরে এলে তাদের মাঝেও নেমে আসে শোকের ধারা। ’৭১-এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে চুকনগর এলাকাটি সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর বহু মানুষ এখানকার স্মৃতিচিহ্ন দেখতে যান। হত্যাকাণ্ড হয়েছিল চুকনগরের ভদ্রা নদীর তীরে। খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে ডুমুরিয়া উপজেলায় এ এলাকাটি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, এখানে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০ মে। এর কয়েক দিন আগে বিভিন্ন স্থান থেকে এই এলাকা দিয়ে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বহু মানুষ। এদের মধ্যে যশোর, খুলনা, বরিশাল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা অঞ্চলের লোকজন ছিল। এরা পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছিল। ভারতে পারাপারের উদ্দেশ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন চুকনগরে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। খবর চলে যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে। তাদের টার্গেটের মুখে পড়ে মানুষগুলো। ২০ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সড়ক ধরে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকটি ট্রাক এসে পৌঁছায়। ট্রাক থেকে তারা নির্বিচারে গুলি করতে থাকে শরণার্থীদের ওপর। ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে চুকনগর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। ধারণা করা হয়, ওই একদিনের হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছিল ৬ থেকে ১০ হাজার বাঙালি।

’৭১-এর নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে আরেকটি খুলনার গল্লামারী হত্যাকাণ্ড। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে নিকটেই গল্লামারীর অবস্থান। সংখ্যার হিসাবে কতজন বাঙালি এখানে প্রাণ হারিয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও স্পষ্ট করে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, এখানে অসংখ্য বাঙালি নিধন হয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। খুলনা শহর মুক্ত হওয়ার পর এখান থেকে উদ্ধার করা হয় দুই ট্রাক মাথার খুলি। তৎকালীন একটি দৈনিক পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, পিঠমোরা দেওয়া ট্রাকভর্তি বাঙালিদের নিয়ে আসা হতো এখানে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শুন্য ট্রাক ফিরে যেত। আর জীবন্ত মানুষগুলো নিথর পড়ে থাকত মাটিতে। প্রকাশ্য দিবালোকে চলেছে এ হত্যাকাণ্ড। খুলনার জজ কোর্টের পিছনে ফরেস্ট ঘাটে বাঙালিদের জবাই করা হতো। প্রতিরাতে অন্তত ২০ জনকে হত্যা করে পেট চিরে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। পাকিস্তানি সদর দপ্তরের সামনে ছিল খুলনার রূপসা তীরের কাস্টমস ঘাট বধ্যভূমি। এখানে বাঙালিদের হাত-পা বেঁধে ধরে আনা হতো। সেই অবস্থায় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করত পাকিস্তানি সেনাদের জল্লাদ বাহিনী। লাশগুলো ফেলে দেওয়া হতো রূপসা নদীতে।

নিরীহ বাঙালিদের পুড়িয়ে হত্যার এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া যায় খুলনার প্লাটিনাম জুটমিল এলাকায়। আজও নিরবে কাঁদছে নিরীহ বাঙালিদের আত্মা। যতদূর জানা যায়, মিলের ৫৬ জনকে জ্বলন্ত বয়লারে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। বাঙালি শ্রমিকদের ধরে এনে বসানো হতো বয়লারের সামনে ২০ ফুট উঁচু প্রাচীরের পাশে। এরপর তাদের বস্তাবন্দি করে পায়ের দিক থেকে জ্বলন্ত বয়লারের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। ঢোকানো অংশ পোড়ার পর বাকি অংশ আস্তে আস্তে ঢোকানো হতো। স্বাধীনতার পর মানুষের বহু কঙ্কাল এবং হাড় পাওয়া গেছে খুলনার গোয়ালখালীতে। এখানে পাকিস্তানি বাহিনীর আরেকটি বধ্যভূমি ছিল। এখানে বহু মানুষকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। খুলনার শিকারপাড়া এলাকায় একটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে বহু মানুষকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী। খুলনা সদরের ভৈরব নদীর তীরে ক্রিসেন্ট জুটমিল আরেকটি বধ্যভূমি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পায়নি মিলের বাঙালি শ্রমিকেরা। হায়েনার দল শ্রমিকদের ধরে এনে হত্যা করে লাশগুলো নদীতে ফেলে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন চালিয়েছিল খুলনার খালিশপুর উপশহর এলাকায়। স্বাধীনতার পর ওই এলাকায় অসংখ্য গণকবর ও বধ্যভূমি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য নিউজপ্রিন্ট মিল বধ্যভূমি। মিলের দরিদ্র শ্রমিকদের ছিল চাকরি হারানোর ভয়। খুলনা বেতার থেকে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের ঘোষণা প্রচার করা হতো। বলা হতো, কাজে না গেলে বরখাস্ত করা হবে। বাঙালি শ্রমিকদের ভয় আরো বাড়ে। তারা পেটের তাগিদে কাজে যোগ দেয়। কিন্তু মরণফাঁদের কথা তারা জানত না। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলে পাকিস্তানি সেনারা একে একে সকলকে গ্রেপ্তার করে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে আরেকটি উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ড ঘটে দৌলতপুরের রংপুর বাজারের শলুয়া বাজারে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সেদিন ছিল পয়লা বৈশাখ। গুলি করে সেদিন বাজারের অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করা হয়। আরেকটি হত্যাকাণ্ডের কথা জানা যায় সেনের বাজার এলাকায়। খুলনা শহরের জেলখানা ঘাটের বিপরীত দিকে রূপসা উপজেলার সেনের বাজার। নদীর তীর থেকে এর অবস্থান ৩ কিলোমিটার দূরে। এখানে ঘটনাটি ঘটে পয়লা মে। পাকিস্তানি সেনারা বাজারে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানোর পর বাজারের আশপাশের বহু মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। খুলনা শহর থেকে উত্তরে ১৩ কিলোমিটার দূরে আজগড়া নামক স্থানে হয় আরেকটি বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড। সেখানে লাইনে দাঁড় করিয়ে মানুষগুলোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাঙালি নিধনযজ্ঞ চলে খুলনার দুর্জনীমহল এলাকায়। খুলনার পাইকগাছা এলাকার একটি নির্মম হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী বলেন, বারোয়ারি বাজারের দর্জি গুরুপদ, তার ছেলে অংশুপতি খোকন, মেয়ে মঞ্জু, ডলি ও পারুলকে একে একে গুলি করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধকালে খুলনা শহরে জনবসতি ছিল খুবই কম। যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ। প্রবহমান গল্লামারী নদীতে সেতু ছিল না। খুলনা থেকে অন্যান্য এলাকায় যাতায়াত ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এখনকার খুলনা-সাতক্ষীরা রোড ছিল না সেকালে। বর্তমান সময়ের জনবহুল গল্লামারী স্থানটি সেকালে ছিল খুবই নির্জন। এই নির্জন এলাকা পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্যস্থানে পরিণত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ধরে এনে তারা এখানে হত্যা করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনিক ভবনটি সে সময়ে একতলা ছিল। এই ভবনে পরিচালিত হতো বেতারের কার্যক্রম। ভবনসহ গোটা বেতারকেন্দ্র পাকিস্তানি বাহিনী শুরুর দিকেই দখলে নেয়। তাদের সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন বার্তা প্রচার করে বেতার থেকে। গোটা এলাকাটি নির্জন হওয়ায় গল্লামারীসহ সেই একতলা ভবনটির আশপাশের এলাকা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। নিরীহ বাঙালিদের করুণ আর্তি শুনতে পায়নি কেউ। নিথর প্রাণহীন লাশগুলো ভেসে গেছে গল্লামারীর নদীর স্রোতে।

তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, খুলনা এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চলেছে। প্রতি রাতে পাকিস্তানিরা হত্যা করত শতাধিক ব্যক্তিকে। দিনের বেলায় তাদের লাশ ভেসে আসত জোয়ারের পানিতে। এলাকাবাসী সেসব লাশ দাফনের সাহস পায়নি। অনেকে তাদের স্বজনদের চিনতে পারলেও নদী থেকে লাশ তুলে আনার সাহস পায়নি। এভাবে পাকিস্তানি জল্লাদদের হত্যাযজ্ঞ চলে অনেক দিন। একপর্যায়ে তারা হত্যাকাণ্ডের ধরণ বদলায়। গুলির বদলে তারা বাঙালিদের জবাই করে হত্যা করে। গল্লামারী নদীতে বইতে থাকে রক্তাক্ত স্রোত। দৈনিক বাংলা আরো লিখেছে, পাকিস্তানি বাহিনী সারাদিন ধরে নিরীহ বাঙালিদের ধরে হেলিপোর্ট ও ইউএফডি ক্লাবে জড়ো করত। মধ্যরাত হলেই এইসব মানুষদের বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো গল্লামারীর বেতার কেন্দ্রের সামনে। লাইনে দাঁড় করিয়ে এদের ব্র্যাশফায়ারে হত্যা করা হতো। তখন রক্তাপ্লুত দেহগুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়ত। হত্যার জন্য মানুষগুলোকে ট্রাকে করে হত্যাকাণ্ডস্থলে আনার সময় আর্তচিৎকারে ভারী হতো চারপাশের পরিবেশ। অনেকেই তাদের কান্না শুনেছেন।   

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, এমনকি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে দেশ স্বাধীনের পরও হায়েনারা আক্রমণ চালায় খুলনায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে শিপইয়ার্ডের কাছে রূপসা নদীতে বটিয়াঘাটা ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি লঞ্চ এসে পৌঁছে। কিন্তু শিপইয়ার্ডের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি সৈন্যরা লঞ্চটির ওপর আক্রমণ চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনীও লঞ্চ থেকে নেমে শিপইয়ার্ডের ওপারের ধান ক্ষেতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত ও ১৬ জন আহত হন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীরও কয়েকজন সদস্য নিহত ও আহত হয়। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর রাতেও ট্যাংক, কামান, বোমা ও গোলাবারুদের আঘাতে কেঁপেছে খুলনা।

মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয় খুলনার শিরোমণি, গল্লামারী রেডিও স্টেশন (খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা), লায়ন্স স্কুল, বয়রার পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কলোনি এলাকা, ৭ নম্বর জেটি এলাকা, নূরনগর ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভবন, গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালি, দৌলতপুর, টুটপাড়া, নিউফায়ার ব্রিগেড স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায়। পাকিস্তানি বাহিনীর সব বাধা অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ ডিসেম্বর খুলনা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন। খুলনা সার্কিট হাউস দখল করার পর মেজর জয়নুল আবেদীন ও রহমত উল্লাহ্ দাদু যৌথভাবে সার্কিট হাউসে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী, আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম, গাজী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ হাদিস পার্কে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। মিত্রবাহিনী খুলনা শহরে প্রবেশ করার ৮ ঘণ্টা আগেই হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৭ ডিসেম্বর মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ে মুক্তিকামী জনতা।

তথ্যসূত্র: ১) বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন, কক্সবাজার; ২) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; ৩) একাত্তরের খুলনার গণকবর ও বধ্যভ‚মি- অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনি; ৪) মুক্তিযুদ্ধে খুলনা-চুয়াডাঙ্গা, সুকুমার বিশ্বাস সম্পাদিত; ৫) দৈনিক বাংলা, ১৯৭২; ৬) বাগেরহাটের ইতিহাস- ড. শেখ গাউস মিয়া; ৭) যুদ্ধাপরাধ, গণগত্যা ও বিচারের অন্বেষণ- ডা. এম এ হাসান; ৮) একাত্তরের খুলনার বধ্যভ‚মি ও গণকবর- সুকুমার বিশ্বাস; ৯) খুলনার একাত্তর, গৌরাঙ্গ নন্দী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৯/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়