বৈশাখে তাঁতের শাড়িতে আনন্দ দ্বিগুণ
হাসিবুল ইসলাম মিথুন : পয়লা বৈশাখের বাকি মাত্র আর দুই দিন। তাই রাজধানীর ছোট-বড় প্রায় সকল ধরনের মার্কেটে ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড়। বৈশাখের এই বিশেষ দিনটিকে একটু স্মরণীয় করে রাখতে সবাই ব্যস্ত বিভিন্ন ধরনের বাহারি পোশাক কেনায়।
শুক্রবার রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং সেন্টার থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট সব স্থানেই ক্রেতাদের ভিড়।
এই সকল মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের বিশেষ করে নারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাহারি রঙের তাঁতের শাড়ি। ক্রেতাদের ধারণা, বৈশাখে তাঁতের শাড়ি হলে আনন্দের মাত্রা দিগুণ বেড়ে যায়।
হস্ত ও যন্ত্রচালিত তাঁতের লালপাড়, হলুদ ও সাদা রঙের দুই ধরনের শাড়ির ওপর বর্ণিল স্ক্রিন প্রিন্ট, সুচ-সুতা, ব্লক বাটিক ও চুমকির কাজ বসানো শাড়ির প্রতি নারীদের নজর দেখা গেছে।
এসব তাঁতের শাড়িতে ব্লক প্রিন্ট ও রঙ-তুলির আঁচড়ে নানা ডিজাইনের আলপনা, নকশা, তালপাখা, বাঁশের বাঁশি, ঢাক-ঢোল, সানাই, গিটার, একতারা, দোতারা, ডুগি-তবলা, খেঁজুর গাছ, তাল গাছ, কলস ও কুলাসহ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব বাহারি শাড়ি মধ্য বয়স্ক নারীদের মন কেড়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয় কিশোরী, তরুণী ও শিশুদের মধ্যেও আগ্রহের কমতি নেই।
দেখা গেছে, ছোট ছোট বাচ্চারা বাবা মায়ের সাথে মার্কেটে এসে শাড়ি কিনছে। কথা হয়, রাজধানীর আজিমপুর ঠেকে আসা নাবিলা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে এসেছি বৈশাখ উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা করতে। আমার মেয়েটা ক্লাস সেভেনে পড়ে। গতকাল থেকে বায়না ধরেছে বৈশাখের দিন শাড়ি পড়বে। তাই আজ নিয়ে আসতে হয়েছে শাড়ি কেনার জন্য।’
শাড়ি কিনেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না এখনো কিছুই কিনতে পারিনি। অনেক কয়টা দোকান ঘুরেছি। শাড়িও দেখেছি। পছন্দ হচ্ছে না। আবার দামও এইবার একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
দাম কেমন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতবছর যে শাড়ি কিনেছিলাম এক হাজার থেকে ১৫০০ টাকায়, সেই শাড়ির দাম এইবার চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। তবে শাড়ির মান কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। ’
রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এইবার পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে অনেক ধরনের শাড়ি, থ্রি-পিস দোকানে তুলেছেন। বিক্রিও আল্লাহর রহমতে ভালো।
কী কী বেশি বিক্রি হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত থ্রি-পিসের থেকে তাঁতের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে। টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ-পাবনার তাঁতপল্লি থেকে এই সকল শাড়ি আনা হয়। ’
তাঁতের লালপাড়, হলুদ ও সাদা রঙের ওপর বর্ণিল স্ক্রিন প্রিন্ট, সুঁই-সুতো, বাটিক আর চুমকির কাজ বসানোর ব্যস্ততা চলছে। এসব তাঁতের শাড়িতে প্রিন্ট ও রঙ-তুলির আঁচড়ে নানা আলপনা, নকশা, তালপাখা, বাঁশের বাঁশি, ঢাক-ঢোল, সানাই, গিটার, একতারা, দোতারা, ডুগি-তবলা, খেজুরগাছ, তালগাছ, কলস ও কুলাসহ দেশের ঐতিহ্যের নকশা রয়েছে বলে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কেমন দামে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে রফিক হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে তাঁতের শাড়ি ছাড়াও আরো অনেক ধরনের বৈশাখের শাড়ি রয়েছে। যেগুলোর দাম ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজারের অধিক।’
এদিকে, রাজধানীর অভিজাত শপিংমলে গিয়েও একই চিত্র চোখে পড়ে। সেখানেও ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কিশোর-কিশোরীরা সাড়ি, থ্রি-পিস কিনছেন। তবে এই সকল শোরুমগুলোতে দামাদামি করার কোনো ঝামেলা নেই। এক দাম হওয়ায় যার যেটা পছন্দ হচ্ছে সে সেটা অনায়াসেই নিয়ে চলে যাচ্ছে।
রাইজিংবিডি/ ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৯/হাসিবুল/সাইফুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন