ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মাইগ্রেনের কার্যকর চিকিৎসা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২১, ২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাইগ্রেনের কার্যকর চিকিৎসা

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : মাইগ্রেন হলো একপ্রকার পুনরাবৃত্তিমূলক মাথাব্যথা। ধপধপ বা ধকধক অনুভূতির এ মাথাব্যথা সাধারণত মাথার একপাশে আবির্ভূত হয়ে থাকে। মাইগ্রেন নারী-পুরুষ উভয়কে আক্রমণ করতে পারে এবং অধিকাংশ মাইগ্রেনের সূচনা হয়ে থাকে অল্প বয়সেই। আলো, কোলাহল বা শব্দ, শারীরিক পরিশ্রম ও কিছু গন্ধ দ্বারা মাইগ্রেনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। মাইগ্রেনের সঙ্গী হতে পারে বমিবমি ভাব ও দৃষ্টিশক্তির বিঘ্নতা। মাইগ্রেনের জন্য একক নিরাময় না থাকলেও কিছু উপায় মেনে চলে এটিকে উপশম করতে পারেন অথবা মাইগ্রেন আক্রমণের হার কমাতে পারেন। এ প্রতিবেদনে মাইগ্রেনের কার্যকর চিকিৎসা আলোচনা করা হলো।

* প্রায় সকলের ক্ষেত্রে কাজ করে: খুব কম চর্বির ডায়েট
এটা খুঁজে বের করা সম্ভব যে আপনার ডায়েটে কিসের সংযোজন-বিয়োজন মাইগ্রেনে সহায়ক। নিউট্রিশন, মেটাবলিজম অ্যান্ড কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ১২ সপ্তাহ ধরে অতি কম চর্বির ডায়েট (যেখানে তারা প্রতিদিন ১০-১৫ শতাংশের কম ক্যালরি চর্বি থেকে পেয়েছে) অনুসরণ করেছিল। দেখা গেল, প্রায় সকলেই বলেছেন যে মাথাব্যথার উদ্রেক ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তাদের মাথাব্যথার তীব্রতা ৬৬ শতাংশ ও মাইগ্রেনের স্থায়িত্ব ৭০ শতাংশ কমে যায়। অন্যান্য গবেষণায় পাওয়া যায় যে, মাইগ্রেন উপশমের ক্ষেত্রে অতি কম চর্বির ডায়েট ও পরিমিত চর্বির ডায়েটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নাও পাওয়া যেতে পারে। অন্যান্য কিছু ডায়েটও সম্ভবত ভালো কাজ করে, যেমন- কম কার্বের ডায়েট অথবা ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডায়েট, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হেডেক ফাউন্ডেশন অনুসারে।

* অধিকাংশের ক্ষেত্রে কাজ করে: ভিটামিন বি, ফিভারফিউ, মেলাটোনিন ও বাটারবুর
ভিটামিন বি: একটি বেলজিয়ান গবেষণায় পাওয়া গেছে, যে যেসব লোক প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রাম এ ভিটামিন সেবন করেছিল তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের মাইগ্রেন উদ্রেকের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ফিভারফিউ: ব্রিটিশ গবেষকদের মতে, মাইগ্রেন উপশমের ক্ষেত্রে এ জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ থেকে হালকা ও অস্থায়ী উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু অন্য একটি গবেষণা বলছে, পার্থেনোলাইড সমৃদ্ধ ফিউভারফিউ নির্যাস মাইগ্রেনের সংখ্যা মাসে ৫ থেকে ৩ এ নামাতে পারে। অন্যান্য গবেষণায় এ ভেষজের কার্যকারিতার ওপর সাংঘর্ষিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মেলাটোনিন: একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ৩ মাস ধরে প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে মেলাটোনিন সেবন করেছিল। তাদের দুই-তৃতীয়াংশ জানান যে মাইগ্রেন অভিজ্ঞতার সংখ্যা ৫০ শতাংশে নেমে গেছে।

বাটারবুর: একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, বাটারবুর হলো মাথাব্যথার চিকিৎসায় সবচেয়ে নিরাপদ ও পরীক্ষিত হার্বাল। নিউরোলজি নামক জার্নাল অনুসারে, যেসব লোক বাটারবুর-বেসড প্রোডাক্ট পেটাডোলেক্স গ্রহণ করেছিল তাদের ৬৮ শতাংশের মাইগ্রেন অভিজ্ঞতা ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়।

* হালকা মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কাজ করে: ওটিসি ওষুধ
মাইগ্রেনের আক্রমণ আপনাকে দৈনন্দিন কাজ থেকে বিরত রাখতে না পারলে এবং প্রতি পাঁচ বা এর কম আক্রমণে একবার বমিবমি ভাব অনুভূত হলে অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, অ্যাসিটামিনোফেন ও ন্যাপ্রোক্সেনের মতো সুলভ ওভার-দ্য-কাউন্টার অর্থাৎ ওটিসি ওষুধ (এসব কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না) মাইগ্রেন উপশমকারক হিসেবে কাজ করতে পারে। কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে? আইবুপ্রোফেনের চেয়ে অ্যাসিটামিনোফেন, অ্যাসপিরিন ও ক্যাফেইনের সমন্বয়কৃত ওটিসি ওষুধ ২০ মিনিট দ্রুত কাজ করতে পারে।

* তীব্র মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কাজ করে: প্রেসক্রিপশন ওষুধ
ওটিসি ওষুধে কাজ না হলে এবং মাইগ্রেনের আক্রমণ শুরু হওয়ামাত্র চিকিৎসা করতে চাইলে এ মাথাব্যথার গোল্ড-স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে আপনার চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করতে পারেন। মাইগ্রেনের গোল্ড-স্ট্যান্ডার্ড হলো ট্রিপটানস। মাইগ্রেন আক্রমণের প্রথম লক্ষণেই এসব ওষুধ সেবন করলে মাইগ্রেন থেমে যেতে পারে। এছাড়া এ ওষুধ চলমান মাইগ্রেনের তীব্র ব্যথাও উপশম করতে পারে। ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রিপটানস এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যথা উপশম করতে পারে এবং দুই ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণ মুক্তি দিতে পারে।

* ঘনঘন মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে কাজ করে: প্রতিরোধক ওষুধ
যদি মাইগ্রেন আপনাকে মাসে দুই বা ততোধিক বার আক্রমণ করে, তাহলে মাইগ্রেন প্রতিরোধী ওষুধ সেবন করতে পারেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এসব ওষুধ মাইগ্রেন উদ্রেকের হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হ্রাস করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটা-ব্লকার্স প্রোপ্রানোলোল ও টিমোলোল সেবনকারী ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী মাইগ্রেন থেকে মুক্তি থেকে পায়। বিটা-ব্লকার্স কাজ না করলে ক্যালসিয়াম চ্যানেল-ব্লকার্স চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

* প্রায় সকল ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর: ব্যথানাশক ওষুধ
মাইগ্রেন উপশমের মানে এই না যে বেশি করে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। শুনতে অবাক লাগলেও আপনার জন্য পরামর্শ হলো- মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পেতে ব্যথানাশকের অতি ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে মাইগ্রেনের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে অথবা মাইগ্রেন আক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। সপ্তাহে দুবারের বেশি ওটিসি ব্যথানাশক ওষুধ এবং মাসে ১৭ বারের ওপর মাইগ্রেন উপশমকারক প্রেসক্রিপশন ওষুধ ট্রিপটানস সেবনে শেষ পর্যন্ত রিবাউন্ড মাইগ্রেন (ওষুধের অতি ব্যবহার জনিত মাইগ্রেনের আক্রমণ) হতে পারে, সতর্ক করেন জার্মান গবেষকরা।

* কিছু ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে কাজ করে: আকুপাঙ্কচার
২২টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের একটি রিভিউ বলছে যে, মাইগ্রেন আক্রমণের সংখ্যা হ্রাসে আকুপাঙ্কচার সহায়ক হতে পারে এবং এ বিষয়ে প্রমাণও পাওয়া গেছে। এ রিভিউ থেকে জানা যায়, যেসব ভুক্তভোগী আকুপাঙ্কচার গ্রহণ করেছিল তাদের মাইগ্রেন আক্রমণের হার ৫০ থেকে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এছাড়া আকুপাঙ্কচারের সুফল ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

* মাইগ্রেন উপশমে যা কাজ করে না: ম্যাগনেসিয়াম ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ
ওপরে আলোচিত উপায়গুলো মাইগ্রেন উপশমে অবদান রাখতে পারে, কিন্তু এ মাথাব্যথা থেকে রেহাই পেতে ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ও হোমিওপ্যাথির ওষুধের মতো অনুমিত চিকিৎসার প্রতি উৎসাহ দেখাবেন না। মস্তিষ্কে ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতির সঙ্গে মাইগ্রেনের যোগসূত্র পাওয়া গেলেও দুটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্ট মাইগ্রেন-প্রবণ লোকদের কোনো উপকার করতে পারে না। একইভাবে, ব্রিটিশ গবেষকরা একটি গবেষণায় তিন মাস ধরে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ও তিন মাস ধরে প্ল্যাসেবো সেবনকারীদের মধ্যে মাইগ্রেনের তীব্রতা বা আক্রমণ সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাননি।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়