মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান : আমরা যা জানি
তৈয়বুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের একটি বিমান
তৈয়বুর রহমান
মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান নিয়ে রহস্যের মীমাংসা আজও হয়নি। কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে বিমানটি নিখোঁজ হয় গত ৮ মার্চ।
আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও স্যাটেলাইট বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বিমানটির সর্বশেষ গতিপথ জানার চেষ্টা করছে, যাতে তারা বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেতে পারে। ব্যাখ্যা করতে পারে ২৩৯ যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছে। এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে তার কিছু কিছু প্রকাশ করা হয়েছে ১ মে।
কখন বিমানটি নিখোঁজ হয়?
০০:৪১ ৮ মার্চ : বিমানটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে ৮ মার্চ, শনিবার (১৬:৪১ জিএমটি, ৭ মার্চ)। বিমানটির বেইজিং পৌঁছানোর কথা ছিল ০৬:৩০ মিনিটে (২২:৩০ জিএমটি)।
মালয়েশিয়া বিমান সংস্থা বলছে, উড্ডয়নের এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমানটি থেকে কোনো বিপদ সংকেতও পাঠানো হয়নি।
০১:০৭ : বিমানটি সর্বশেষ এসিএআরসি ট্রান্সমিশন পাঠায়। বিমানের কম্পিউটারের সঙ্গে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের কথাকেই বলে এসিএআরসি ট্রান্সমিশন। কিছু সময় পর বিমানের কম্পিউটার একেবারে চুপ মেরে যায়। ১:৩০-এ কথা কথা থাকলেও কথা বলা হয়নি বিমান থেকে।
ককপিটের সঙ্গে সর্বশেষ সংযোগ
০১:১৯ : বিমান ও মালয়েশিয়া এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয় ১২ মিনিট পর। তখন বিমান থেকে কো-পাইলট জানান, ‘সব ঠিক আছে। শুভরাত্রী।’
এর কয়েক মিনিট পর গ্রাউন্ড রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী বিমানের ট্রান্সপন্ডার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় বিমানটি মালয়েশিয়ার আকাশসীমা ছেড়ে ভিয়েতনামি আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
০১:২১ : ভিয়েতনামের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানটি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। অথচ যোগাযোগ করার কথা ছিল হো চি মিন সিটির এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে।
০২:১৫: এ সময় বিমানটি ছিল মালাক্কা প্রণালির ফুকেট দ্বীপের দক্ষিণে। থাই সামরিক রাডারের লগ বই থেকে জানা যায়, বিমানটি পশ্চিম দিকে ঘুরে যায়। এরপর আন্দামান সাগরের উত্তরে যেতে থাকে।
১ মের রিপোর্ট অনুযায়ী, মালয়েশিয়া সরকার সময়টা সংশোধন করে বলেছে ০২:২২। তখন বিমানটির অবস্থান ছিল আরো পশ্চিমে।
০৮:১১: (০০:১১ জিএমটি, ৮ মার্চ) এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ভারত মহাসাগরের ওপরস্থ স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ডাটা থেকে জানা যায়, বিমানটি ছিল দুটি ফ্লাইট করিডরের একটিতে। এর একটি উত্তরে থাইল্যান্ড ও কাজাখস্তানের মধ্যে। অন্যটি দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের মধ্যে।
০৮:১৫ : প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, এ সময় বিমান ও গ্রাউন্ড স্টেশনের মধ্যে আংশিক যোগাযোগ হয়। বিশেষজ্ঞরা সেই ডাটা এখনো খতিয়ে দেখছেন।
০৯:১৫ (০১:১৫ জিএমটি) এ সময় বিমানটির সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশনের স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানটি থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এরপর কী?
বিমানটির পরিকল্পিত রুট ছিল উত্তর-পূর্ব কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের ওপর। তাই প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ চীন সাগর ও ভিয়েতনামের কা মাউ পেনিনসুলার দক্ষিণে অনুসন্ধান চালানো হয়।
পরে সামরিক রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, বিমানটি আকস্মিকভাবে এর উত্তরমুখী রুট পরিবর্তন করে পশ্চিম দিকে যেতে থাকে। তাই বেশ কিছুসংখ্যক জাহাজ ও বিমান ব্যবহার করে মালয়েশিয়ার পশ্চিমে সাগরে অনুসন্ধান চালানো হয়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ১৫ মার্চ বলেন, উড্ডয়নের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে আরোহীদের মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি সুপরিকল্পিতভাবে বিমানটির গতিপথ পাল্টে ফেলতে বাধ্য করেন।
স্যাটেলাইটের সঙ্গে বিমানটির সর্বশেষ যোগাযোগের তথ্য প্রকাশ করার পর ত্রিশ লাখ বর্গমাইলজুড়ে অনুসন্ধান চালানো হয়, কাজাখস্তানের উত্তর থেকে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা।
এরপর ২০ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার অনুসন্ধান দল জানায়, স্যাটেলাইট থেকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগবে দুটি বস্তু তারা দেখতে পান। এর পরপরই ওই অঞ্চলে দূরপাল্লার পর্যবেক্ষণ বিমান পাঠায় তারা।
৫ থেকে ৮ এপ্রিল অস্ট্রেলীয় ও চীনা জাহাজ গভীর পানির নিচে লিসেনিং ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে সিগন্যাল পায় বিমানের ব্ল্যাক বক্স ফ্লাইট রেকর্ডার থেকে। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক খবর।
-বিবিসি
৩ মে ২০১৪
রাইজিংবিডি/রণজিৎ/আবু মো.
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন