ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

এল শোকের মাস

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এল শোকের মাস

শাহ মতিন টিপু : এল শোকের মাস। আগস্ট মানেই জাতির বেদনা বিধুর শোকের মাস। স্বাধীন বাংলাদেশে এ মাসে নেমে আসে বাঙালি জাতির ওপর এক কালো থাবা। বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে আগস্ট মাসেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

 

ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাঙালি জাতি সে নিষ্ঠুর হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও ঘাতকদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে এ মাস।

 

আগস্টকে ঘাতকরা তাদের নিষ্ঠুর টার্গেটের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে বারবার। ১৯৭৫ সালের এ মাসে যেমন বাঙালিরা হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তেমনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী, আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।

 

ঘাতকরা ১৫ আগস্ট কালোরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজন।

 

সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।

 

টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’

 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের নিষ্ঠুরতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানো শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাঙালি এগিয়ে যাবে অভীষ্ট লক্ষ্যে- এটাই আজ শোকের মাসের অঙ্গীকার।

 

প্রতিবারের মতো এবারও ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে আগস্টের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মাসব্যাপী কর্মসূচি। শোকের মাসের প্রথম দিন মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা ঘটেছে।

 

আজ কৃষক লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি । এ মাসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মদিন পালন, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা এবং ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা দিবস স্মরণ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী পালন।

 

প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ১৫ আগষ্টের কর্মসূচির। সরকারি-বেসরকারি ভবনে অর্ধনমিত জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও মন্দির ও গির্জায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে এবং দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।

 

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে সরকারি কর্মসূচি পালিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই কর্মসূচিতে যোগদান করবেন। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল জাতির পিতার মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে। এ ছাড়া এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে ।

 

বঙ্গবন্ধু পরিষদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ আগস্ট সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে (রাউন্ড টেবিল হল) ১৫ আগস্টের প্রতিবিপ্লব ও পরবর্তী বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা। ১২ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/ ১ আগস্ট ২০১৬/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়