ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাগুরায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫০, ভাঙচুর, লুটপাট

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাগুরায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫০, ভাঙচুর, লুটপাট

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষে দুইপক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ৪০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বসতঘরে  হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

গুরুতর আহত ২০ জনকে মহম্মদপুর, মাগুরা ও ফরিদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০৮ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ১৬ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের গুলিতে নারীসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দুই নেতার বিরোধে নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকার ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ এক পক্ষকে মদদ দেওয়ায় তাদের উপস্থিতিতে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মাগুরার পুলিশ সুপার মুনিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বালিদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান মিনা ও ইউনুস আলী শিকদারের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর আগে দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়েছে।

ঘটনার দিন সকালে ইউনুস শিকদারের সমর্থক ইউসুফ মোল্যার মেয়ে রেবেকাকে মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে মফিজুর রহমান মিনার লোকজন। এ ঘটনার সূত্র ধরে ইউনুস শিকদারের সমর্থকেরা দেশি অস্ত্র নিয়ে মফিজুর রহমান মিনার  লোকজনের উপর হামলা চালায়। সাড়ে চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন- আজগার (৩০), ফিরোজ মৃধা (৫০), ইতি (২৫), আতিয়ার মোল্যা (৩৫), ওমর শিকদার (৩০), বকুল মোল্যা (৬০), মোস্তফা (৫০), ইদ্রিস মিনা (৩৫), কাজল মিনা (১৮), হারিম মিনা (৫০), লিটন মিনা (৩০), শরিফুল মিনা (৩৪), শরিফুল মিনা (৩৫), নাজমুল মিনা (২০) ও সামাদ মোল্যা (৪০)। এদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় অন্তত ৫০টি বসতঘর ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন ও লুট করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এ সব বাড়ির নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মারধর করা হয়েছে। আক্রান্ত বাড়ির বিদ্যুতের মিটার ভেঙে ফেলে হয়েছে। 

এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুনরায় সংঘর্ষের জন্য উভয়পক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। আলমগীর মিনা (৫০) বলেন, গ্রামে মিনা গোষ্ঠীর বাড়িঘরে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘরের মূলব্যান জিনিস লুট হয়েছে। হামলায় অন্যগ্রামের লোকদের ভাড়া করে আনা হয়েছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী নান্নু মিনা (৩৫) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার কারো সঙ্গে বিরোধ নেই। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার বাড়িঘরে সব লুট করে নিয়ে গেছে।’

নিছার উদ্দিন মিনা (৭০) পুলিশের ছোড়া গুলির খোসা দেখিয়ে বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুট হলো, অথচ পুলিশ আমাদের দিকে গুলি ছুড়ল।  হামলাকারীদের দিকে পুলিশ একটি গুলিও করল না।’ 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ শিকদার ও মফিজুর রহমান এ ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করেছেন।

মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম কোনো গ্রুপের পক্ষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/বকুল 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়