ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

গুটিতে স্বপ্ন দেখছেন আমচাষি

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুটিতে স্বপ্ন দেখছেন আমচাষি

তানজিমুল হক, রাজশাহী : থোকায় থোকায় দুলছে গুটি। বাড়ছে অতিদ্রুত। আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। গুটি রক্ষায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা। গুটিতে স্বপ্ন দেখছেন তারা।

বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন আমচাষিরা। ইতিমধ্যে সময়মতো হয়েছে দুই দফা বৃষ্টি। গাছে মুকুল আসার পূর্ব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে বালাইনাশক। এর ফলে আগাম আসা মুকুলের গুটি বেশ বড় হয়ে উঠেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাজশাহীর অতিরিক্ত উপরিচালক (উদ্যান) মঞ্জুরুল হক বলেন,  ‘এসময় আম গাছগুলোতে পরিপূর্ণভাবে গুটি এসেছে। গুটি রক্ষায় এবং আমের বাম্পার ফলন পেতে ম্যানকোজেব জাতীয় বালাইনাশক এবং ইমিটাক্লোপ্রিড কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে আমের গুটির বোঁটা শক্ত হবে। ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আর ঝরে না পড়লে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা বাড়বে।’ 

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, এ অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় আড়াইশ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে এ বছর ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লখনা ও মোহনভোগ জাতের আমের চাষ বেশি হয়েছে।

রাজশাহীর নয়টি উপজেলাতেই আমচাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি হয় বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট ও গোদাগাড়ীতে। ফলন ও লাভ বেশি হওয়াতে চাষিরা আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনেক চাষি অন্য ফসলের সঙ্গেও আমের আবাদ করছেন। এর ফলে আমের আবাদ বাড়ছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, চলতি মৌসুমে আমের মুকুল বেশি হয়েছে। আর পরিচর্যার কারণে গুটিও বেশি টিকেছে। সাধারণত আমগাছে মুকুল আসার পর হপার পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী পোকামারা কীট ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেছেন আমচাষিরা।

তার বক্তব্য, এখন আর ‘অফ ইয়ার’  বা  ‘অন ইয়ার’ বলে কিছু নেই। পরিচর্যার কারণে মুছে যাচ্ছে অফ ইয়ার- অন ইয়ার, বাড়ছে ফলন। সার, পানি, সেচ, পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যার মাধ্যমে আমের ফলন বাড়ানো সম্ভব।

এখন আমের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আমচাষিরা। দুর্গাপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামের আমচাষি কবীর হোসেন জানান, দুর্গাপুর উপজেলার সর্বত্র চলতি মৌসুমে গাছগুলোতে প্রচুর মুকুল এসেছে। মুকুল আসার আগে থেকেই আমচাষিরা বাগানে গাছের পরিচর্যা করেছেন। বর্তমানে গুটির পরিচর্যা চলছে। গাছের গুটিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক।

একই ধরনের কথা বলেছেন বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর সদরের আমচাষি কোরবান আলী। তিনি বললেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার গরম কম। আবহাওয়া ঠান্ডা রয়েছে। ঠান্ডা আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূল। পাশাপাশি গাছে মুকুল এসেছে বেশি। একারণে গুটিও টিকেছে। ঝরে যায় নি। আর গুটির যেন কোন ধরনের ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমচাষিরা গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। এ পরিমাণ জমিতেই আমের চাষ করা হয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি। আর এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদন হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, রাজশাহীর উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, চলতি মৌসুমে বর্তমান সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। গরম বেশি নেই। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং কম তাপমাত্রা আমচাষের জন্য উপযোগী। গরম বেশি থাকলে হুপার ও থ্রিপস পোকার আক্রমণ বেশি হয়। কিন্তু ঠান্ডর কারণে পোকার আক্রমণ নেই। সামনে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমের বাম্পার ফলনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

 

 

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২২ মার্চ ২০১৭ /তানজিমুল হক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়