ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নতুনদের জায়গা দিতেই খেলা ছাড়লেন দিদার বলী

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৬ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুনদের জায়গা দিতেই খেলা ছাড়লেন দিদার বলী

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ঐতিহ্য জব্বারের বলীখেলায় ১৩ বছর ধরে তাকে কেউ হারাতে পারেনি। প্রতি বছরই লড়াই করে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছেন কক্সবাজারের দিদার বলী।

জব্বারের বলীখেলার মুকুট যেনো তার জন্যই অবধারিত। দীর্ঘ ১৩ বছর অপ্রতিরোধ্য থেকেই দিদার বলী গতকাল মঙ্গলববার সর্বশেষ বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বলীখেলা থেকে নিজের অবসরের ঘোষণা দেন।

অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিদার বলী বলেন, নতুনদের জায়গা দিতেই আমি এই বছরের পর আর খেলব না। এখন আমি বিয়ে-শাদি করে সংসারী হব।

রাইজিংবিডিকে দিদার বলী বলেন, জব্বারের বলীখেলার আয়োজকেরাও চান নতুন কেউ আসুক। আমিও চাই নতুনরা সুযোগ পাক। কিন্তু আমি যখন খেলি তখন জয়ী হওয়ার জন্যই খেলি। আমি প্রস্তুতি নিয়ে খেলি। তাই আমাকে গত ১৩ বছরে কেউ হারাতে পারেনি।

তিনি বলেন, টানা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বশেষ গত বছর লড়াই ছাড়াই আমাকে রানার্সআপ করা হয়েছে। শামছু বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। টানা ৩৩ মিনিটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে হারাতে না পারায় কৌশলগত কারণে শামছু বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে খেলার রেফারি। কিন্তু সেই হারের প্রতিশোধ নিয়েছি এবার। মাত্র ১৬ মিনিটে গত বছরের চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত শামছু বলীকে ধরাশায়ী করে আমি আমার বিজয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছি।

একান্ত আলাপে দিদার বলী বলেন, এই খেলাটা আমার মন-মস্তিষ্কে ঢুকে গিয়েছে। শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য নয়। আমি বলী খেলে আনন্দ পাই। সারা বছর আমি এর জন্য প্রস্তুতি নেই। নিয়মিত ব্যায়াম ও উন্নতমানের খাবার খাই। নিজের শরীর ঠিক রাখতে উন্নতমানের খাবার খেতে গিয়ে প্রতি মাসে আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। খাবার মেন্যুতে কোনো খাসি বা গরুর মাংস থাকে না। নিয়মিত মুরগির মাংস, দুধ, ডিম, ছোলা আর সবজি খান। সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করার চেষ্টা করি। সারা বছর আমি নিজ এলাকার বলীদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করি।

বলী খেলতে আসার নেপথ্যের কথা বলতে গিয়ে দিদার বলী বলেন, ২০০০ সালে শখ করে কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলীখেলায় প্রথম অংশ নিয়েছিলাম। প্রথমবার অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ২০০২ সালে চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের বলীখেলায় অংশ নিয়েছিলাম। বলীখেলায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে অভিভাবকেরা রাজি ছিল না। পরে একের পর এক চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এবং সারা দেশে নাম ছড়িয়ে পড়ায় পরিবারের পক্ষ থেকেও উৎসাহ দেওয়া হয়। ২০০২ সালে জব্বারের বলীখেলায় প্রথম অংশ নিয়েই কক্সবাজারের উখিয়ার ছিদ্দিক বলীর সঙ্গে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। এরপর ২০০৪-২০০৬ এবং ২০০৮ ও ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ির মর্ম সিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ২০০৭ সালে মর্ম সিংকে হারিয়ে প্রথম একক শিরোপার স্বাদ পান দিদার বলী। ২০০৯ সালে দিদারকে জব্বারের বলীখেলা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বহিষ্কার ছিলেন দিদার। ২০১৩ সালে পুনরায় খেলায় ফিরে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। ২০১৬ সালে খেলায় হারাতে না পারলেও কৌশলগত কারণে দিদারকে রানার্সআপ করা হয়। ২০১৭ সালে দিদার আবার সেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিজের ঘরে তুলেন।

দিদার বলী বলেন, ২০১৭ সালের এই ট্রফি অর্জনের মাধ্যমেই আমি বলীখেলাকে বিদায় জানাচ্ছি। এই বছরই বিয়ে করে সংসারী হব এবং ব্যবসা বাণিজ্যে মনোনিবেশ করবে। বলী না খেললেও নিজের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আমি নিয়মিত শরীর চর্চা চালিয়ে যাব। আমি খেলা ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে নতুনদের স্বাগত জানাতে চাই। আমি চাই ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলায় নতুন কেউ লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হউক। এই খেলা আরো শত শত বছর ঐতিহ্য ধরে রাখুক। নতুন বলীদের জন্য আমার শুভকামনা আর ভালোবাসা থেকেই আমি বলীখেলা থেকে এ বছর বিদায় নিচ্ছি।




রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৬ এপ্রিল ২০১৭/রেজাউল/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়