ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

চলনবিলে কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে

এমএম আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলনবিলে কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে

নাটোর প্রতিনিধি : দেশের শস্যভাণ্ডারখ্যাত সর্ববৃহৎ বিল নাটোরের চলনবিল। এর পাশদিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই ও গুড় নদী। এ দুই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের লক্ষাধিক কৃষক এখন আতঙ্কিত।

আত্রাই নদীর পানি উপজেলার বিলদহর-কৃষ্ণনগর বাঁধ দিয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে প্রায় লক্ষাধিক কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। এদিকে শ্রমিক সংকটে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন চলনবিলের কৃষকেরা। ফলে অকালে ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য কৃষকদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও।

চলনবিলের মাছের লোভে ২০১২ সালে কিছুসংখ্যক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির কারণে বিলদহর-কৃষ্ণনগর বাঁধ কেটে দেওয়ায় প্রতি বছর চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষককে আতঙ্কে থাকতে হয়। কৃষকদের দাবি ওই স্থানে একটি স্লুইসগেট নির্মাণের।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী জানায়, টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সিংড়া উপজেলার আত্রাই ও গুড় নদীর পানি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় আত্রাই নদীর বিলদহর-কৃষ্ণনগর বাঁধ ও পাটকোল ব্রিজের নিচ দিয়ে চলনবিলের ফসলি জমিতে প্রতিনিয়ত পানি ঢুকছে। এতে উপজেলার বিলদহর, কৃষ্ণনগর, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ী, নূরপুর, কলম, কাউয়াটিকরীসহ গুরুদাসপুর ও তাড়াশ উপজেলার লক্ষাধিক কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। সিংড়া উপজেলারই শুধু দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে দাবি কৃষকদের। তবে কৃষি অফিসের দাবি সিংড়াতে সাড়ে ৩০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুধবার উপজেলার কলম, ডাহিয়া, তাজপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামসহ সিংড়া পৌরসভা ও চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আত্রাই নদীর পানি বিলে প্রবেশ করায় হাজার হাজার কৃষকের বোরো ধান, ভূট্টা ও বাদাম ডুবে গেছে। তা ছাড়া শ্রমিক সংকটে তাদের আধা-পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছে না।

কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ ও মজিবুর রহমান বলেন, চলনবিলের অধিকাংশ কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেন। হঠাৎ ঢলের পানিতে তাদের ফসল ডুবে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। এখন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

বিলদহর বাজারের কৃষক কাদের মণ্ডল বলেন, চলনবিলের মাছের লোভে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির কারণে বিলদহর-কৃষ্ণনগর বাঁধ কেটে প্রতি বছর চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষককে আতঙ্কে থাকতে হয়। আজ এই একটি মাত্র বাঁধের কারণে এই অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আত্রাই নদীর ঢলের পানি উপচে চলনবিলে প্রবেশ করায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নদীর পানি কমে গেলে কৃষকেরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, আকস্মিক বর্ষণ ও ঢলের পানিতে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ফসল রক্ষায় একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, আত্রাই নদীর পানি জোড়মল্লিকা, নিংগইন ও বিলদহর এলাকায় দিয়ে চলনবিলে প্রবেশ করছে। তিনি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শ্রক্রবার আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন বলে জানান তিনি।




রাইজিংবিডি/নাটোর/২৭ এপ্রিল ২০১৭/এমএম আরিফুল ইসলাম/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়