ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অন্যের সনদে একযুগ মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাভোগ

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অন্যের সনদে একযুগ মুক্তিযোদ্ধার সুবিধাভোগ

সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও ২০০৫ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতাসহ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন তিনি।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযোগের ভিত্তিতে তার রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব।

অভিযুক্ত ব্যক্তি ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে মো. সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করেও ২০০৫ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতাসহ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ  করেছেন।

গতকাল মুক্তিযোদ্ধার সনদ, মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, মুক্তি বার্তার লাল বই, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জমির মাঠপর্চায় নামে গড়মিল থাকায় তার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি।

এদিন সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকালে এ গড়মিল ধরা পড়ে। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মো. মকবুল হোসেন ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার খতিয়ান নং-১৬৬, সংগ্রামনীল মৌজার জেএল নং ১১০ সম্পত্তির মাঠ পর্চায় এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে (নং-৪২০৩১১১৮৫০৬০) তার নাম রয়েছে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী, পিতা. মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারী, সাং-নেহালপুর (দুয়ারীবাড়ি)। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রে তার নাম রয়েছে সুলতান হোসেন, গ্রাম. পিপলিতা, পোস্ট. বাসন্ডা, ঝালকাঠি।

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে সাক্ষ্যকালে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর আপন চাচা প্রবীণ আকরাম আলী দুয়ারী (৯১) বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম। সুলতান আহম্মেদ আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তখন ওর বয়স ১৭/১৮ বছর। এ সময় সে বাড়িতেই ছিল। কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি সে। পিপলিতার সুলতান হোসেন মাঝির সার্টিফিকেট নিয়ে কেমন কেমন করে যেন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে। সুলতান মাঝি অশিক্ষিত হওয়ায় সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি।

মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক তার সাক্ষ্যকালে জানান, পিপলিতা গ্রামের সুলতান হোসেন মাঝির সার্টিফিকেট নিয়ে জালিয়াতি করে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। সে অনুযায়ী ২০০৫ সাল থেকে সম্মানি ভাতাসহ রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।

সুলতান হোসেন জানান, মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে আমি মুক্তিবাহিনীতে অংশ গ্রহণ করি। পিপলিতা গ্রামের স্কুল মাঠে প্রশিক্ষণ শুরু করলে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সে খবর পৌঁছে দেয় তাদের দোসর সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর এক চাচাতো ভাই। আমরা সেখানে প্রশিক্ষণ বন্ধ করে ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য যাই। সেখানে গিয়ে দেখি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বন্ধ হয়ে গেছে।

এর মধ্যে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সেনাপতি  কর্নেল এমএজি ওসমানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তার স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ আমাকে প্রদান করেন।  পার্শ্ববর্তী নেহালপুর গ্রামের মো. সুলতান আহাম্মেদ দুয়ারী কয়েক বছর পরে আমার কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেমন তা দেখতে আসে।

এ সময় সে বলে তোমার তো লোকজন নেই, আমার মন্ত্রণালয়ে নিজস্ব লোক আছে। আমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তোমার সনদের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেব। এ আশ্বাসে প্রতিবেশী হিসেবে তাকে দেখালে তিনি আমার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র নিয়ে যান।

সেই অনুযায়ী সনদপত্রে প্রতারণা করে নাম ও পিতার নাম জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেকে গেজেট ভুক্ত করেন। যার মুক্তিবার্তা নং-০৬০২০১০৬৮২। আমি বিষয়টি জানতে পেরে সুলতান দুয়ারীর কাছে সনদ চাইতে গেলে তিনি আমাকে হত্যাসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কোনো উপায় না পেয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মো. মকবুল হোসেন জানান, সুলতান হোসেন দুয়ারীর বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ পাওয়ায় সার্বিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাইকালে নামে গড়মিল থাকায় তার ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী বলেন, সুলতান হোসেন মাঝির সঙ্গে আমার জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ আছে। এ জন্য সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। তিনি ওই সময়ে সর্বহারা পার্টির লোক ছিল।



রাইজিংবিডি/ঝালকাঠি/২৮ এপ্রিল ২০১৭/ অলোক সাহা/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়