মহম্মদপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই আবার বন্ধ
মাগুরা প্রতিনিধি : মুক্তিযোদ্ধাদের দুইপক্ষের বিরোধ ও মামলার কারণে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় দুই দফায় বন্ধ হলো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম।
আজ শুক্রবার যাচাই বাছাইয়ের জন্য সাক্ষাৎকার শুরু হওয়ার কথা ছিল। দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে দুইপক্ষের মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সমর্থকেরা যাচাই বাছাই সাক্ষাৎকার দিতে সমবেত হন।
কমান্ডারের দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়ায় বর্তমান নির্বাচিত কমান্ডার আলী রেজা খোকনকে যাচাই বাছাই বোর্ডে নিতে আপত্তি জানান ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই এর সমর্থক মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি রূপ নেয় ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতিতে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থলে এসে দুইপক্ষকে নিবৃত করেন। পরে পুলিশ এসে সবাইকে সরিয়ে দেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী রেজা খোকন বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে আমি কিছু দিন ঢাকায় ছিলাম। এ সময় ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ছিলেন ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই। আমি সুস্থ হয়ে ফিরলেও তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন না। এ অবস্থায় যাচাই বাছাই হতে পারে না। এ বিয়য়ে তিনি জজ কোর্টে মামলা করেছেন। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় ইউএনও যাচাই-বাছাই বন্ধ করে দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ সভা থাকায় শুক্রবার যাচাই বাছাই হয়নি। আবার কাল (শনিবার) থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।’
ইউএনও’র কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকার সম্প্রতি বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদন আহ্বান করে। উপজেলার প্রায় ৭০০ জন অনলাইনে আবেদন করেন। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি যাচাই বাছাই এর জন্য সাক্ষাৎকার শুরু হয়। এরপর কয়েকদিন চলার পর বিরোধ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১৩ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়।
সম্প্রতি মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চৌধুরী রওশন ইসলাম ২৮ এপ্রিল যাচাই বাছাইয়ের জন্য সাক্ষাৎকার শুরু হবে বলে সারা উপজেলায় মাইকিং করান। প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার দিতে এসে কার্যক্রম বন্ধ দেখে আবার ফিরে যান।
দুইপক্ষের সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলা সংসদ কমান্ডের বর্তমান কমান্ডার আলী রেজা খোকন ও ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই এর পক্ষে মুক্তিযোদ্ধারা দুই ভাগে বিভক্ত। দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে নানা বিষয়ে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই শুরু হলে বিরোধে নতুন মাত্রা পায়।
আলী রেজা খোকন ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকার সময় ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্ব পান আব্দুল হাই। সুস্থ হয়ে ফিরে আসলে তিনি (আরী রেজা ) কমান্ডারের দায়িত্ব পেতে লিখিত আবেদন করেন। দায়িত্ব দিতে সময়ক্ষেপণ করায় আব্দুল হাই এর বিরুদ্ধে মাগুরার জজ আদালতে মামলা করেন আলী রেজা খোকন। আদালত আব্দুল হাই এর বিরুদ্ধে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। এ ছাড়া যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মন্ডলকে না জানিয়েই সাক্ষাৎকারের দিন দেওয়া হয়েছে বলে একটি পক্ষ অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল বলেন, ‘আমি সভাপতি অথচ যাচাই বাছাই হচ্ছে তার কিছুই জানি না। সভাপতিকে বাদ দিয়ে কার্যক্রম বৈধতা পাবে না।’ কমিটিতে নেই এমন লোকদের নিয়ে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কমান্ডার আলী রেজা খোকন বলেন, ‘গায়ের জোরে ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই কমান্ডারের দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না। কমান্ডার পদাধিকার বলে যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য।’
ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাই বলেন, ‘জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তার দায়িত্ব হস্তান্তরের এখতিয়ার নেই।’
রাইজিংবিডি/মাগুরা/২৮ এপ্রিল ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন