ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

২৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য

নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর ছয়টি উপজেলায় ২৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘ দিন শূন্য রয়েছে।  

এ সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭৬৬টি। এর মধ্যে ২৫৯টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। বদলি ও অবসরজনিত কারণে এসব পদ শূন্য হওয়ায় সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

এ জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলার ১৩৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৪২টিতে, পলাশ উপজেলায় ৬৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৯টির, রায়পুরা উপজেলায় ১৯৮টির মধ্যে শূন্য রয়েছে ৭০টির, শিবপুর উপজেলায় ১৪২টির মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫৫টির, মনোহরদী উপজেলার ১৪৩টির মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৩টির ও বেলাব উপজেলায় ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩০টিতে।

এ সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ শূন্য থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে একজন শিক্ষক প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় পাঠদান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ চার থেকে পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে কোনো বিদ্যালয়ে যদি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়, তাহলে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। তার ওপর আবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রতি মাসের বেশ কয়েক দিন উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিসে যাতায়াত করতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়।

রায়পুরা উপজেলার দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নাহিদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমেও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

পলাশ উপজেলার চরনগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওবায়দুল কবীর সরকার জানান, একটি স্কুলের অভিভাবক বলা যায় প্রধান শিক্ষককে। তিনি না থাকলে অন্য শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয় থাকে না। ফলে পাঠদান ও প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে।

শিবপুর উপজেলার সৃষ্টিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, এ বিদ্যালয়ে একটি প্রধান শিক্ষক ও ছয়টি সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাকে। তাই দাফতরিক কাজ করে শ্রেণিকক্ষে বিষয়ভিত্তিক পাঠদানে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির শিবপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের মূল চালিকা শক্তি প্রধান শিক্ষক। একসঙ্গে এতগুলো বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ফলাফলে পড়তে পারে।

শিবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা খান ইউসুফজী জানান, দীর্ঘদিন যাবত সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না হওয়ায় এবং নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি বিধায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যার ফলে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস সাজেদা সুলতানা জানান, ২০১১ সালের পর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে পদগুলো শূন্য পড়ে আছে। আর স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকলে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটবে, এটা স্বাভাবিক। কেননা অভিভাবক হয়ে প্রধান শিক্ষকই একটি স্কুলকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন। তবে আর বেশিদিন প্রধান শিক্ষকহীন থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/নরসিংদী/১ মে ২০১৭/গাজী হানিফ মাহমুদ/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়