ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

স্কুলেই কোচিং ক্লাস, পড়তে বাধ্য শিক্ষার্থীরা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ৭ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুলেই কোচিং ক্লাস, পড়তে বাধ্য শিক্ষার্থীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কোচিং ক্লাসের নামে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিমাসে ছয় লক্ষাধিক টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের সরকারি এক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

এমনকি, কেউ কোচিং ক্লাস করতে অনীহা জানালে তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে অভিভাবকদের।

কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত নিয়মিত পাঠদান ক্লাসের আগে-পরে বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। এরজন্য প্রতি ছাত্রীর কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। যদিও স্কুলে কোচিং ক্লাস না করানোর ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।  

এ নিয়ে সন্তানদের নানা সমস্যার কথা চিন্তা করে ভুক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক।

তবে শুধু অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীদের কোচিং ক্লাস করানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছা বেগম। সেই সঙ্গে কোচিং ক্লাস করতে অনিচ্ছুক ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন তিনি।

কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয় দুই শিফটে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত দুটি শিফটে ছাত্রীর সংখ্যা ১ হাজার ২৪৫ জন। প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাসের আগে ও পরে নেওয়া হয় এই বিশেষ ক্লাস (কোচিং)। আর প্রতিজন ছাত্রীর কাছ থেকে প্রতিমাসে আদায় করা হয় ৫০০ টাকা। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিমাসে করছে ছয় লক্ষাধিক টাকা।

পেশায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অভিভাবক জানিয়েছেন, তার মেয়েকে স্কুলের কোচিং ক্লাসে পড়াতে রাজি নন। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ছাত্রীকে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়।

স্কুলে মেয়ের নানা সমস্যা হতে পারে- চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দিতে পারেননি আরেক অভিভাবক আব্দুল হাকিম।

তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। কোচিং ক্লাসে পড়তে অনীহা প্রকাশ করায় তার উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। স্কুলে মেয়ের নানা অসুবিধার হওয়ার কথা চিন্তা করে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করিনি। এক প্রকার বাধ্য হয়ে মেয়েকে স্কুলের কোচিং ক্লাসে পড়াতে হচ্ছে।”

কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার মুদির দোকানি ননী গোপাল দাশ। তার  মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। কোচিং ক্লাস করতে অনীহা প্রকাশ করায় তার মেয়ের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

ননী গোপাল বলেন, “আমি সামান্য মুদির দোকান থেকে আয় দিয়ে সংসার চালাই। আমার এক ভাইপো বাড়িতে মেয়েকে পড়ায়। মেয়েটি কোচিং ক্লাস করতে অনীহা জানালে তার উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। বাসায় এসে সে কান্নাকাটি শুরু করলে কোচিং ক্লাসে পাঠাতে বাধ্য হই।”

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লুৎফুন্নেছা বেগম বলেন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের স্কুলে কোচিং ক্লাসে পড়িয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি সত্য নয়। শুধু অষ্টম শ্রেণীর দুটি শিফটের ছাত্রীদের কোচিং ক্লাসে পড়ানো হচ্ছে। তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা ফি নেওয়া হয়।

সেই সঙ্গে কোচিং ক্লাস করতে অনিচ্ছুক ছাত্রীদের উপর চাপ প্রয়োগ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ক্লাস না করার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা থাকার কথা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ক্লাসে না পড়ানোর সরকারি নির্দেশনা থাকার কথা উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের, চট্টগ্রামের স্কুল পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগটি প্রথমবার শুনলাম। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যদি লিখিতভাবে অভিযোগ জানান, তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

একই কথা জানালেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

তিনি বলেন, “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাক। প্রয়োজনে গোপনীয়তা রক্ষায় তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/৭ আগস্ট ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়