ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির আদেশে সন্তুষ্টি

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২০ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির আদেশে সন্তুষ্টি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে বোমা পুঁতে হত্যা প্রচেষ্টা মামলার ১০ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় গোপালগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন কোটালীপাড়াসহ গোপালগঞ্জবাসী।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২২ জুলাই শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া সফর ছিল। এই সফর উপলক্ষে কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে জনসভার প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। একটি চায়ের দোকানের পেছনে তারের সূত্র ধরে জনসভাস্থল থেকে প্রথমে ৭৬ কেজি ওজনের একটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৩ জুলাই ৮০ কেজি ওজনের আরো একটি বোমা উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ওই দিনই কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান গোপালগঞ্জ আদালতে মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সিসহ আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরো ৯ জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়। ২০১০ সালে মামলাটি গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার ২ নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। তবে অন্য মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

২৫ জুলাই পুলিশ গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক শিল্প নগরী থেকে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সির হেমাঙ্গনের ভাড়া করা বাসভবন ও সাবান ফ্যাক্টরি থেকে বোমা তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করে। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার হিরন গ্রামে মুফতি হান্নানের বাড়ি। পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়াশোনার সময়ে তিনি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। আফগান যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন।

পুকুরের মধ্যে বোমার তার খুঁজে পাওয়া চায়ের দোকানদার বদিউজ্জামান সরদার জানান, আমার দোকানের দক্ষিণ পাশে পুকুর ঘাট ছিল। সেখানে আমি চায়ের কেতলি ধুঁইতে যাই। এ সময় আমি পুকুরের মধ্যে একটি তার দেখতে পাই। কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় শ্যাওলার সঙ্গে তার ভেসে উঠেছিল। তার টান দেওয়ার পর দেখি উত্তর পাশ দিয়ে তার মাটির ভেতর দিয়ে চলে গেছে। এরপর দোকানে এসে বিষয়টি আমি এলাকার লোকজনকে জানাই। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তারের সূত্র ধরে জনসভাস্থল থেকে বোমা উদ্ধার করে ও আমাকে হেফাজতে নেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী আমাকে পুরস্কার দেয়। এ রায়ে আমি খুশি। এখন দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চাই।

গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এনায়েত হোসেন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ জানান, কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। দীর্ঘদিন হলেও আমরা হত্যা চেষ্টার মামলার বিচার পেয়েছি। এ রায়ে আমরা খুশি। দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, কোটালীপাড়ায় কোনো জঙ্গি সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না। আমরা জঙ্গিবাদকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করব। জীবন দিয়ে হলেও প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করব।

কোটালীপাড়া পৌরসভার মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম বলেন, এ রায়ে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এ মামলায় আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। রায়ে খুশি হয়েছি। আল্লাহ সহায় ছিলেন তাই প্রাধানমন্ত্রী জনসভা শেষে প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দুটি বোমা পুঁতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করেছেন। তাকে হত্যা চেষ্টা মামলার রায়ে আমরা খুঁশি। সাজাপ্রাপ্তদের রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাদের সাজা কার্যকর করতে হবে।

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী কোটালীপাড়া থানার তৎকালীন এসআই, অবসরপ্রাপ্ত পরিদর্শক নূর হোসেন জানান, ওই সময় আমি বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করি।অনেক তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর মামলার রায় হল। এ রায়ে আমি খুশি। রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।



রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২০ আগস্ট ২০১৭/বাদল সাহা/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়