ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খাওয়ার অনুপযোগী ৩২ হাজার টন চাল বিক্রির চেষ্টা

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খাওয়ার অনুপযোগী ৩২ হাজার টন চাল বিক্রির চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : থাইল্যান্ড থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় সরকার গ্রহণ করেনি।

এই চাল চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল গ্রহণ না করে ফেরত নেওয়ার জন্য দাপ্তরিক আদেশ দিলেও নষ্ট চালবোঝাই দুটি জাহাজ দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। সেখান থেকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে জাহাজ সংশ্লিষ্টরা।

খাদ্য বিভাগ চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে দুই সপ্তাহ আগে। এর মধ্যে এমভি থাই বিন বে নামের একটি জাহাজ ১২ হাজার ২৯০ টন চাল নিয়ে ৩১ আগস্ট এবং এমভি ডায়মন্ড-এ নামের অপর চালবাহী জাহাজ আসে ১ সেপ্টেম্বর। এতে ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল রয়েছে। কিন্তু চালগুলো খালাসের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, দরপত্রের শর্তের চেয়ে বেশি পরিমাণ মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা রয়েছে। ফলে তা খাওয়ার অনুপযোগী ঘোষণা করে  ফেরত নিতে বলা হয়।

এই খাদ্য কর্মকর্তা জানান, একটি জাহাজে থাকা চালের মধ্যে মরা, নষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্য জাহাজের চালের দানায় এর পরিমাণ পাওয়া যায় ১৭ শতাংশ। সরকারের আমদানির দরপত্র চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার গ্রহণযোগ্য সীমা ৩ শতাংশ। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, একটি জাহাজে যত চাল আনা হবে, তার মধ্যে নমুনায় যদি ৪ শতাংশ পর্যন্ত মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যায়, তবে জরিমানা আদায় করে তা গ্রহণ করতে পারবে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু দুটি জাহাজে আনা চালে ১৭শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট থাকায় জরিমানা করেও গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত চালবাহী জাহাজ দুটির স্থানীয় প্রতিনিধি সেভেন সিজ শিপিং লাইন্সের চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি হলেও এই চাল খাওয়ার উপযোগী। কিন্তু খাদ্য বিভাগ চালগুলো গ্রহণ না করায় এই চাল ফেরত না নিয়ে লোকসান এড়াতে চট্টগ্রামের বহির্নোঙর থেকে দেশি-বিদেশি ক্রেতার কাছে বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। এই কারণে এখনো বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ দুটি নোঙর করে রাখা হয়েছে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ভিত্তিক কয়েকটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে চাল নিয়ে অপেক্ষমাণ জাহাজ সংশ্লিষ্টরা। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে এই ৩২ হাজার টন চাল অত্যন্ত কম মূল্যে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। তবে সরকার খাওয়ার অনুপযোগী উল্লেখ করে চালবাহী জাহাজকে দুটিকে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি ব্যবসায়ীরা জেনে যাওয়ার পর এই চাল কিনতে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা পরিষদের সদস্য (প্রশাসন ও যোগাযোগ) মো. জাফর আলম বলেন, হাওরে বন্যার কারণে চালের সংকট দেখা দেওয়ায় সরকার থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি শুরু করে। ১৩ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাতে আমদানি করা চালবাহী ১৬টি জাহাজ বন্দরে এসেছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। এর মধ্যে খাওয়ার অনুপযোগী চালবাহী জাহাজ দুটিও রয়েছে। খাদ্য বিভাগের ছাড়পত্র না পাওয়ায় চাল খালাসের জন্য জাহাজ দুটিকে বন্দরের জেটিতে নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ দিন ধরে বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ দুটি অবস্থান করছে বলে এই বন্দর কর্মকর্তা জানান।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রেজাউল/রুহুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়