ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পুরুষের এনলারজড প্রস্টেটের ৭ লক্ষণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরুষের এনলারজড প্রস্টেটের ৭ লক্ষণ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : এনলারজড প্রস্টেট বা বিবর্ধিত প্রস্টেট বিষয়টি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, কিন্তু এই বিষয়টি আসলে কি?

মূত্রথলি এবং মূত্রনালীর নিচে আপনার প্রস্টেট গ্রন্থি অবস্থিত। যখন আপনি প্রস্রাব করেন, আপনার মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব প্রস্টেটে আসে এবং তারপর মূত্রনালির মধ্য দিয়ে শরীরের বাইরে বের হয়ে যায়।

লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ইউরোলজি ক্যানসার স্পেশালিস্টস এর মেডিক্যাল ডিরেক্টর এবং ইউরোলজিস্ট ডা. এস. অ্যাডাম রামিন, ‘প্রস্টেটের ফাঁকা জায়গা নিয়ন্ত্রণী পদ্ধতির ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি যখন চাবেন, শুধু তখন প্রস্রাব করবেন। প্রস্টেট না থাকলে মূত্রথলি থেকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রস্রাব লিক আউট বা বের হয়ে যাবে এবং প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ সমস্যা দেখা দেবে।’

প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি বা বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থি অফিসিয়ালি ‘বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেসিয়া’ বা ‘বিপিএইচ’ নামে পরিচিত। বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেসিয়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স্ক পুরুষদের হয়ে থাকে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে এর উপসর্গ প্রকাশ পায়। প্রকৃতপক্ষে, বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থি বা বিপিএইচ ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে।

ঠিক কি কারণে প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি হয় এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি, কিন্তু এটি প্রধানত বয়স্ক পুরুষদের হয়ে থাকে বলে তারা ধারণা করছেন যে হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে তা হতে পারে। এ ঘটনার ক্ষেত্রে, বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে টেসটস্টেরন কম উৎপাদিত হয় এবং উচ্চ শতাংশে ইস্ট্রোজেন সঞ্চিত হয়। এ কারণে তাদের প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পেতে পারে। ডিহাইড্রোটেসটস্টেরন নামক হরমোন পুঞ্জিভূত হলেও প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি হতে পারে। টেসটস্টেরনের মাত্রা নিম্নগামী হলেও ডিহাইড্রোটেসটস্টেরন পুঞ্জিভূত হতে পারে, যে কারণে প্রস্টেট কোষের বৃদ্ধি হতে পারে।

বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির উপসর্গ
অনেকক্ষেত্রে, প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পেতে থাকলে প্রস্টেটের নলাকৃতির ফাঁকা জায়গা আঁটসাঁট ও সংকুচিত হয়ে যায়। এ কারণে প্রস্রাবের প্রবাহ সীমিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ডা. রামিন বলেন, ‘মূত্রত্যাগে কাঠিন্যতা বা প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, প্রস্টেট সমস্যার সবচেয়ে কমন উপসর্গ।’ বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির উপসর্গসমূহ হচ্ছে :

১. মূত্রত্যাগ শেষ করার পর মূত্রথলি খালি হয়নি অনুভূত হওয়া।

২. মূত্রত্যাগ শেষ করার পর দুই ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে আবার মূত্রত্যাগ করার প্রয়োজন হওয়া।

৩. মূত্রত্যাগের সময় কয়েকবার করে প্রস্রাব থামছে এবং আবার আসছে প্রকৃতির ঘটনা ঘটা।

৪. প্রস্রাব আটকানো কঠিন হওয়া।

৫. প্রস্রাবের প্রবাহ দুর্বল হওয়া।

৬. প্রস্রাব করা শুরু করতে জোর বা চাপ দেওয়ার প্রয়োজন হওয়া।

৭. রাতে মূত্রত্যাগের জন্য বারবার ঘুম থেকে জেগে ওঠা।

আপনার বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থি থাকলে কি করবেন?
বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির মানে হচ্ছে, গ্রন্থিটির আকার স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়ে ওঠেছে- এটি কোনো ক্যানসারের বৃদ্ধি নয়- যে কারণে এটির অফিশিয়াল নাম ‘বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেসিয়া’। কিন্তু বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির উপসর্গ প্রস্টেট ক্যানসারের উপসর্গকে অনুকরণ করতে পারে। তাই বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থি ও প্রস্টেট ক্যানসার- যেটারই উপসর্গ দেখা দিক না কেন, মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। ডা. রামিন বলেন, ‘আপনার ফিজিশিয়ান আপনাকে একজন ইউরোলজিস্ট বা মূত্রব্যবস্থাসংক্রান্ত রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার জন্য বলতে পারেন, কিন্তু প্রথমে চেকআপ দিয়ে শুরু করুন।’ আপনি যত দ্রুত মেডিক্যাল সেবা অনুসন্ধান করবেন, তত ভালো ফলাফল পেতে পারেন। ডা. রামিনের মতে, ‘কিছুক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থির উপসর্গ সমস্যার তীব্রতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নাও হতে পারে। এ কারণে সিম্পল টেস্ট, যেমন- ব্লাডার ও প্রস্টেট আল্ট্রাসাউন্ড এবং প্রস্রাবের প্রবাহ পর্যবেক্ষণ, রোগ প্রক্রিয়ার প্রকৃত প্রকাশ করতে পারে।’

বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির চিকিৎসা কি?
ডা. রামিনের মতে, বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কম তীব্রতার ক্ষেত্রে কফি, চা এবং সোডা সীমিত করে ফেললে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে- ক্যাফেইন মূত্রথলিকে চেতিয়ে তুলে বা উদ্দীপিত করে এবং ইউরিনারি ফ্রিকোয়েন্সি বা প্রস্রাব পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি করে, যা প্রস্টেটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

একটু বেশি অগ্রসর পরিস্থিতিতে আলফা ব্লকার এবং আলফা রিডাকটেস ইনহিবিটরের মতো ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। আলফা ব্লকার মূত্রথলি এবং প্রস্টেটের পেশীকে শিথিল করে সহজে প্রস্রাব করতে সাহায্য করে এবং আলফা রিডাকটেস ইনহিবিটর প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধিকে হ্রাস করতে পারে।

ডা. রামিন বলেন, বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে মাইক্রোওয়েভ থেরাপির মতো মিনিম্যালি ইনভেসিভ চিকিৎসাও প্রচলিত আছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে,  লেজার থেরাপির মাধ্যমে আপনার বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থি ধ্বংস করার প্রয়োজন হতে পারে।

স্পষ্টভাবে বিস্তৃত বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থির ক্ষেত্রে রোগীর রোবটিক সাবটোটাল প্রস্টেটেক্টমি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

ডা. রামিন বলেন, সর্বোত্তম চিকিৎসা ব্যবস্থা আসলে নির্ভর করে নির্দিষ্ট রোগীর উপসর্গ এবং মেডিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলের উপর। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক রোগীর বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থি একইভাবে উদ্ভব হয় না এবং প্রত্যেক চিকিৎসা ব্যবস্থা সব রোগীর জন্য ভালো নয়। তাই আপনার জন্য কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা উপযুক্ত হবে তা জানতে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করুন। বিবর্ধিত প্রস্টেট গ্রন্থিকে অবহেলা করবেন না। ডা. রামিনের মতে, ‘এর চিকিৎসা করা না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন- প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণী ক্ষমতা দুর্বল বা নষ্ট হওয়া, প্রস্রাব করতে জোর বা চাপ প্রদানের ফলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া। এমনকি অবশেষে আপনি কিডনি ড্যামেজের ঝুঁকিতেও পড়তে পারেন।’

তথ্যসূত্র : ম্যানস হেলথ



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ অক্টোবর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়