ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যশোর কারাগারে ২ চরমপন্থি নেতার ফাঁসি কার্যকর

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ১৭ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যশোর কারাগারে ২ চরমপন্থি নেতার ফাঁসি কার্যকর

গোলাম রসুল ঝড়ু ও আবদুল মোকিম

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যা মামলার দুই আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা আবদুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ু’র ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ।

সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় এই দুইজনকে  ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার রায় কারাগারে প্রবেশ করেন। এরপর রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে দুই আসামি মোকিম ও ঝড়ুকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত ১২টায় সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন জেল গেটে  প্রেসব্রিফিং করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর নিশ্চিত করেন।

আদালত ও পুলিশ সূত্র মতে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেঝো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দ্দারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থীরা কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে  গোলাম রসুল ঝড়ুসহ তিনজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বকরের ছেলে হিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিলসূত্রে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত দুই আসামির দণ্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে।

মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কৃতি হা-ডু-ডু খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ারের ছেলে কুমারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি কয়েকদিন আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়। তবে দিনক্ষণ জানায়নি তারা।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পাচ্ছি। অবশ্যই খুশি। আমার নিরপরাধ বাবাকে হত্যার পর জনযুদ্ধের সময় কত হুমকি সহ্য করেছি। নিজেদের জীবন বাঁচাতে খুনিদের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছে। তবু শাস্তি কার্যকর হওয়ায় আমরা খুশি।

মনোয়ারের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, এক সময় বছরের পর বছর আমরা চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। তার দরবারে হাজার শুকরিয়া। খুনি দুজনের ফাঁসি কার্যকর হল।

নিহতের ছোটভাই মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বলেন, একসঙ্গে দুভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কত স্মৃতি আছে আমাদের। সেই ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণপ্রিয় ভাইকে হারিয়ে নীরবে-নিভৃতে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি। বিলম্বিত বিচার অবিচারের সামিল। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার না পেয়ে কত অসহায় হয়ে চোখের জল ফেলেছি তা কাউকে বোঝাতে পারব না। দুযুগ পরে হলেও খুনিদের ফাঁসি হওয়ার সংবাদ শুনে ভালো লাগছে।




রাইজিংবিডি/যশোর/১৭ নভেম্বর ২০১৭/বিএম ফারুক/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়